ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

‘বর্ষা’ ডেকে আনে যে পাখিকে

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৯ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০১৭
‘বর্ষা’ ডেকে আনে যে পাখিকে খাবারের সন্ধানে ডালে বসে রয়েছে দেশি শুমচা, ছবি: ইনাম আল হক

মৌলভীবাজার: বর্ষাপ্রীতি পাখিরাজ্যেও জেগে ওঠে। বর্ষার আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে না তারা। বৃষ্টিধারার সহস্রকণা গায়ে মাখতে সুদূর পথ পাড়ি দিয়ে বৃষ্টিপ্রিয় পরিযায়ী পাখিরা আমাদের দেশে ইতোমধ্যে চলে এসেছে। তাদের মৃদু বিচরণ পাওয়া যাচ্ছে আমাদের লাউয়াছড়াসহ সিলেটের অন্যান্য বনগুলোতে। বৃষ্টিধারার মাঝে খাবারের সন্ধানে অবলীলায় চরে বেড়াতে পারে এরা।

আমাদের দেশের বর্ষা ‘শুমচা’ (Pitta) প্রজাতির পাখিটিকে ডেকে আনে। অনাদিকাল ধরেই চলছে তার বর্ষামৌসুমের ধারাবাহিক প্রত্যাবর্তন।

এই বর্ষাতেই পাখিটির জন্ম এবং এই বর্ষাতেই সে বারবার ফিরে আসে। শুমচার ছানাগুলো যখন সাবালক হয় তখন সে এশিয়া মহাদেশের অন্যান্য দেশ হতে আবার বাংলাদেশে আসে এবং সেই একই প্রক্রিয়া বাসা বেঁধে ছানা তোলে। তবে শীত আসার আগে সে ফিরে যায়।  

প্রখ্যাত পাখিবিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কিছু পাখি রয়েছে যাদের বৃষ্টিতেই সুবিধে এবং তারা বৃষ্টিই খোঁজে। বৃষ্টিপ্রিয় এমন একটি পাখি ‘দেশি শুমচা’ (Indian Pitta)। সিলেট অঞ্চলে ইতোমধ্যেই এই পাখিটি চলে এসেছে। ’ 

শিকার ঠোঁটে গুজে রেখেছে দেশি শুমচা/ছবি: ইনাম আল হকবৃষ্টির পাখি এবং তার খাবার-দাবার সম্পর্কে তিনি বলে, বৃষ্টি শুরু হয়েছে তখন সে এসেছে। মে মাসের আগে সে আসে না। কারণ বৃষ্টি তার ভীষণ দরকার। এ জন্যে যে, বৃষ্টিতে জঙ্গলের নিচে যেখানে পচা পাতা রয়েছে সেখানেই তার খাবার তৈরি হবে। অনেক পোকা হবে। অনেক কেঁচো হবে। কেঁচো সে খেতে খু্ব পছন্দ করে। বেশি বৃষ্টিপাত হলে কেঁচো মাটির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে। তখন সে সেই কেঁচো ধরে খায়। শুমচার ঠোঁট ছোট বলে মাটির নিচে কেঁচো থাকতে তো সে বের করতে পারে পারে না। কেঁচো ছাড়াও অন্যান্য পোকা সে খেয়ে থাকে। এখন শুমচা আপনাদের জাতীয় বনগুলো বাঁশঝাড়ের নিচে হেঁটে হেঁটে শিকার ধরে ধরে খাবে। ‘ 

আরেকটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করে ইনাম আল হক বলেন, ‘যখন সে পর্যাপ্ত খাবার পাবে তখন সে বাসা তৈরি করবে। বুনোগাছসহ আম, জাম বা কাঠাল গাছে পাতা দিয়ে বলের মতো বাসা তৈরি করে। এমনভাবে বাসা তৈরি করে যে পানি কিছুতেই বাসার ভেতরে ঢুকতে পারে না। সে শুকনো পাতা দিয়ে দিয়ে গোল করে বেশ বড় একা বলের মতো বাসা তৈরি করে থাকে। ফুটবলের যে আকার অনেকটা তেমনটি। মাঝখানে একটা ছিদ্র থাকে। যে ছিদ্র দিয়ে সে অনায়াসে আসা-যাওয়া করতে পারে। এই জুলাই-আগস্টেই ওরা ছানা তুলবে। কারণ এই সময় বন-জঙ্গলে প্রচুর পরিমাণে পোকা হবে এবং এই খাবার খাইয়েই সে বাচ্চাগুলোকে বড় করে তুলবে। বৃষ্টি এবং পর্যাপ্ত খাবার তার প্রজনের বিরাট ভূমিকা পালন করে। ’ 

এই পরিযায়ীর ফিরে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যখন বৃষ্টি শেষ হয়ে যাবে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর এলেই বৃষ্টিপাত ফুরিয়ে আসবে তখন তার খাবারও কমে যাবে। এই অবস্থায় তার নিজের এবং তার বাচ্চার খাবারের টান পড়ে যাবে। কিন্তু ততদিনে তার বাচ্চাও কিন্তু বড় হয়ে গেছে। তখন তারা আমাদের দেশ থেকে উড়ে চলে যাবে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা বা দক্ষিণ ভারতের দিকে। যেখানে বৃষ্টি কিছু হলেও আসে। আবার পরের বছর যখন আবার আমাদের দেশে বৃষ্টি নামবে তখন তারা সবাই আবার পোকা-কেঁচোর লোভে আমাদের দেশে চলে আসবে। এই হলো বর্ষার পাখির জীবনবৃত্তান্ত। ’

দুই রকমের পরিযায়ী শুমচা রয়েছে। যারা আমাদের দেশের চিরসবুজ বনে নিয়মিত আসা-যাওয়া করে। একটি হলো দেশি শুমচা (Indian Pitta) অপরটি খয়রামাথা-শুমচা (Hooded Pitta)। এদের দুই প্রজাতিরই আকৃতি প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার বলে জানান এই পাখি বিজ্ঞানী।

বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, জুলাই ০৭,  ২০১৭
বিবিবি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।