ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

ছদ্মবেশী ‘কালো-মাথা নিশিবক’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৭
ছদ্মবেশী ‘কালো-মাথা নিশিবক’ বিপন্ন কালো-মাথা নিশিবক, ছবি : সংগৃহীত

মৌলভীবাজার: এই আছে, এই নেই! এমন রূপকে বলে ‘ক্যামোফ্লাজ’ বা ছদ্মবেশধারণ। নিশিবক ছদ্মবেশে পটু। বিলের পাড়ে চোখ পড়তেই কোথায় জানি উধাও হয়ে যায়। তারপর দ্বিধাময় ভাবনাটুকু ঘিরে একটু অগ্রসর হলে হঠাৎ করে সেই নিশিবকটি অমনি ডানা মেলে দিলো অন্য গন্তব্যের দিকে।

বিকেলের নিভে আসা আলোয় বাইক্কাবিলের বিস্তৃত প্রান্তরে বহুদিন নিশিবকের সন্ধানে গিয়েও তাকে কখনই ভালো করে দেখা যায়নি। শুধু দেখা গেছে- ফাঁকি দিয়ে তার হঠাৎ উড়ে যাওয়ার বিস্ময়।

   

কালা-মাথা নিশিবকের ইংরেজি নাম Black-crowned Night Heron এবং বৈজ্ঞানিক নাম Nycticorax nycticorax। এরা আকারে ৫৮ থেকে ৬৫ সেন্টিমিটার। এদের চোখ লাল ও খয়েরি। মাথায় ঝুলন্ত সাদা ঝুঁটি রয়েছে। দেহ কালচে। সাঁঝের বেলা ‘ওয়াক-ওয়াক’ শব্দ করে বাতাসে ভাসার মধ্যে দিয়ে এদের দৈনন্দিন কাজ শুরু হয়।
হাওর, বিল, নদী ও প্যারাবনে এরা বিচরণ করে। রাতে অগভীর পানিতে দাঁড়িয়ে কিংবা ধীরে হেঁটে পানির ওপর থেকে মাছ শিকার করে খায়। মূলত পানির ধারে বা পানির উপরের কোনো ডালপালায় লম্বা সময় ধরে দাঁড়িয়ে থেকে সুযোগ মতো মাছ ধরে খায়। হাঁটার সময় এরা মাথা আর ঘাড় নিচু করে রাখে। কখনও কখনও আবার দৌড়ায়।
প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ এবং লেখক শরীফ খান বাংলানিউজকে বলেন, নিশিবক নিশাচর মাছ শিকারি পাখি। এরা দিনের বেলায় গাছে বসে সময় কাটায় আর সন্ধ্যার আভা এলেই বেরিয়ে পড়ে খাবারের সন্ধানে। সারারাত ধরে এবিল-ওবিলে চলে তার শিকারের সন্ধান। ভোরের আলো ফুটলেই ওরা আবার নির্দিষ্ট গন্তব্যে ফিরে আসে।
‘তবে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, নিশিবকেরা ক্যামোফ্লাজের অধিকারী। অর্থাৎ ছদ্মবেশ ধারণ করতে জানে। বিল, হাওর বা ধানক্ষেতসহ চারপাশের প্রকৃতির সঙ্গে দারুণ মিলে যায়। দূর থেকে দেখলে বোঝাই যায় না যে এখানে নিশিবক চুপটি করে বসে রয়েছে। ’
তিনি আরও বলেন, নিশাচর হলেও তাদের প্রজনন মৌসুমে ছানাকে খাবার সংগ্রহ করে খাওয়াতে খাবারের সন্ধানে দিনেও বের হয়। ব্যাঙ, মাছ, ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, সাপ, ছোট সরীসৃপ, ছোট পাখি আর জলজ পোকা ও এদের লার্ভা এদের প্রধান খাবার। পাখির ডিম আর ছানাও এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে।
গ্রামের দু-একটি বিচ্ছিন্ন জোড়া বাদে বাকিরা বিল, হাওরের ধারে দলে দলে বা বকের কলোনিতে বাসা বানায়। এপ্রিল-মে মাসে এরা দল বেঁধে বাস করে গাছের ডালে। গাছের ডাল, তৃণ ও খড়কুটো দিয়ে বাসা বানায়। বাসা বড়-সড় ও আগোছালো হয়। সারাদেশেই বিল, হাওর বা ছোট-বড় জলাশয়ে এদের পাওয়া যায়। জলাভূমিগুলো দখল, মাছের খামার প্রকৃতির ফলে এদের অস্তিত্বও হুমকির মুখে পড়েছে বলে জানান শরীফ খান।
‘ছদ্মবেশ’ সম্পর্কে শরীফ খান বলেন, এই ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রকৃতির অনেক প্রাণীই টিকে আছে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে। ক্ষুদ্র পোকামাকড় থেকে শুরু করে বড় স্তন্যপায়ী প্রাণী পর্যন্ত ছদ্মবেশ ধারণ করে। এর একমাত্র শত্রুর চোখ থেকে নিজেকে আত্মরক্ষা করা। এছাড়াও ছদ্মবেশের সাহায্যে তারা শিকার সহজে ধরতে সক্ষম হয়।   

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৭
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।