ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

লাউয়াছড়া সড়কে বন্যপ্রাণীর মৃত্যু রোধে উদ্যোগ 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৭
লাউয়াছড়া সড়কে বন্যপ্রাণীর মৃত্যু রোধে উদ্যোগ  গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যাওয়া চিতা বিড়াল, মায়া হরিণ, দাড়াশ সাপ ও বানর।  ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে রাস্তা পারাপারের সময় প্রায় প্রতিদিনই মরছে কোনো না কোনো বন্যপ্রাণী। এদের বেশিরভাগই আবার নিশাচর। প্রতিটি প্রাণীই নির্মমভাবে প্রাণ হারাচ্ছে দ্রুতগামী গাড়ির চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে। একইভাবে মৃত্যু হচ্ছে রেললাইনেও। তবে মৃত্যুহার বেশি লাউয়াছড়ার ভিতর দিয়ে যাওয়া সড়কে।

পরিবেশবিদ, প্রকৃতিপ্রেমীদের দীর্ঘদিনের দাবি, লেখালেখির পর এসব প্রাণী রক্ষার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন হলে হয়তো প্রাণে রক্ষা পেতে পারে ১২.৫০ হেক্টর আয়তনের লাউয়াছড়ার বিরল সব বন্যপ্রাণীর জীবন।

 

বন্যপ্রাণী রেঞ্জ সূত্র জানায়, মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ থেকে লাউয়াছড়ার মূল্যবান বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তার লক্ষ্যে একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, সন্ধ্যার পর লাউয়াছড়া সড়ক দিয়ে সর্বসাধারণের যানবাহান প্রবেশাধিকার বন্ধ করে বিকল্প পথ চালু করা হলে নিশাচর প্রাণীরা দ্রুতগামী গাড়ির চাকায় প্রাণ হারানোর শঙ্কা বহুলাংশে কমে যাবে।  

২৮/৫/১৭ তারিখে মরেছে একটি বিরল চিতা বিড়াল, ছবি : তবিবুর রহমান জানা যায়, জেরিন চা-বাগানের শাখা সড়কের মুখ থেকে লাউয়াছড়া ডরমেটরি পর্যন্ত সাড়ে ৫ কিলোমিটার সড়ক বনের ভিতর দিয়ে গেছে। এ সড়কের বিভিন্ন স্থানেই মরছে বিরল সব বন্যপ্রাণী।

এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মিহির কুমার দো বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) এর সভাপতিত্বে কিছু দিন আগে একটি সভা হয়েছিল। যেখানে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম রাত্রিকালীন বন্যপ্রাণীগুলো যে মারা যায়, এটার বন্ধ করার জন্য ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার বিকল্প সড়কটি চালু করার।  

২৯/৬/১৭ তারিখে মরা গেছে একটি বিরল সজারু, ছবি : তবিবুর রহমানতিনি আরো বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের মূল্যবান জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) অত্যন্ত আন্তরিক। তার নেতৃত্বে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় বনবিভাগ, সড়ক ও জনপদ, স্থানীয় জনগণ এবং জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে একটি সমন্বয় সভা হবে। সেই সভায় হ সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছি।

কবে নাগাদ এটি বাস্তবায়ন হবে? এ প্রশ্নের উত্তরে ডিএফও বলেন, এটি আসলে সুস্পষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। সমন্বয় সভা হলে তখন দেখা যাবে এটি কারা বাস্তবায়ন করবে, কারো কোনো অভিযোগ আছে কিনা? কিংবা সুবিধা-অসুবিধাগুলো বিবেচনা করা হবে।  

বন্যপ্রাণী বিষয়টি নিয়ে আমরা সবাই যে সচেতন সেটা বলা যাবে না। কিছু কিছু লোক চায় না যে লাউয়াছড়ায় রাতে বিকল্প সড়কটি চালু হোক, যেভাবে বর্তমানে চলছে সেভাবেই চলুক। অনেকের বক্তব্য এরকম রয়েছে। তারপরও আমরা আশাবাদী। হয়তো অচিরেই এ সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন হবে। জানান ডিএফও।  
১৫/১১/১৬ তারিখে মরেছে একটি মায়া হরিণ, ছবি : তবিবুর রহমান
এদিকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের সে সীমানায় এখন পর্যন্ত সর্বাধিক বন্যপ্রাণী মারা যাচ্ছে এই সুনির্দিষ্ট এলাকাটিতেও স্পিডব্রেকার বা গতিরোধক বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানা যায়। লোহার টিলা সংলগ্ন এলাকাটি বন্যপ্রাণীদের বিচরণ এলাকায়।  

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান বলেন, লোহার টিলা সংলগ্ন এলাকাটি বন্যপ্রাণীদের বিচরণ এলাকায়। যত প্রাণী মারা গেছে এর বেশিরভাগই এখানেই মারা গেছে। জায়গাটির মাঝে গতিরোধক দিলে ভালো হতো।  

পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ২৮/১২/১৫ তারিখে একটি গন্ধগোকুল, ৩০/১২/১৫ তারিখে একটি লজ্জাবতী বানর, ১৭/১২/১৬ তারিখে একটি গন্ধগোকুল, ২৮/৫/১৭ তারিখে একটি চিতা বিড়াল ও একটি বানর, ২৩/৭/১৬ একটি শিয়াল, ৭/১১/১৬ তারিখে একটি দাড়াশ এবং ৫/৭/১৭ তারিখে আরো একটি দাড়াশ সাপ, ২১/১১/১৭ তারিখে একটি শঙ্খিনী প্রভৃতি এই লোহার টিলা সংলগ্ন এলাকার রাস্তায় মারা গেছে।  

২৮/৫/১৭ তারিখে একটি মােরা যায় একটি বন্য কুকুর, ছবি : তবিবুর রহমানএছাড়াও ১৫/১১/১৬ তারিখে একটি মায়া হরিণ, ২১/৬/১৭ তারিখে একটি বন্য কুকুর এবং ২৯/৬/১৭ তারিখে একটি সজারু লাউয়াছড়ার পাকা সড়কে দ্রুতগামী গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা গেছে বলে জানান সহকারী বন সংরক্ষক। এছাড়া রাত-বিরাতে অনেক প্রাণীর মৃত্যুর খবর জানা যায় না বলেও জানান তিনি।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্তকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একটি সভায় সিদ্ধান্ত রয়েছে রাতে লাউয়াছড়ার রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়ে নূরজাহান চা বাগান দিয়ে বিকল্প পথে কমলগঞ্জ উপজেলায় যাওয়ার পথটি চালু করার। সেই সভায় ডিএফও এবং আমি ছিলাম। এটি হয়তো কিছু দিনের মধ্যেই বাস্তবায়িত হবে। আরেকটি সিদ্ধান্ত হলো বন্যপ্রাণী বিচরণ এলাকাটির তিন দিকে নেটের আবরণ দিয়ে ঢেকে দেওয়া।  

এ সিদ্ধান্তগুলো বাস্তায়ন হলে লাউয়াছড়ার মূল্যবান জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে বলে জানান কমলগঞ্জ ইউএনও।  

বাংলাদেশ সময়: ১১১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৭ 
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।