ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

আলাস্কায় পরিবেশ ধ্বংসের যজ্ঞ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৪ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৮
আলাস্কায় পরিবেশ ধ্বংসের যজ্ঞ! রাষ্ট্র ও লোভী মানুষের নানাবিধ আগ্রাসনে আলাস্কার জীব-পরিবেশ ও প্রকৃতি আজ বড় হুমকির মুখে। ছবি-সংগৃহীত

কানাডা থেকে: প্রতি একর জমির দাম মাত্র ২ সেন্ট। এই দামেই আমেরিকা রাশিয়ার কাছ থেকে আলাস্কাকে কিনে নিয়েছিল। তারপরেই শুরু হয় নানা নাটকীয়তা ও পরিবেশ ধ্বংসের পালা।

মনে হতে পারে ঘটনাটি হাজার বছর আগে সম্ভবত। আসলে মাত্র পাঁচ ছয় জেনারেশন আগে।

এখনো মার্কিন জীবিতদের অনেকেই বলে আমার বাবার দাদা দেখেছেন। আমরাও বাবার দাদাকে জীবিত পেয়েছিলাম।  

ঘটনাটি ১৮৬৭ সালের ৩০ মার্চ। দেড়শ বছর। ইতিহাসপঞ্জি বিচারে সে’দিনের ঘটনাই! [প্রসঙ্গক্রমে, আলাস্কা ৩.৫টি বাংলাদেশের সমান] এত সস্তা, তা-ও রাশিয়া আলাস্কা বেচতে গিয়ে মার্কিন মিডিয়া, লবিইস্ট ফার্মস, দালাল ফড়িয়া এবং কংগ্রেসের সিদ্ধান্তদাতাদের প্রচুর উৎকোচ দেয়।

এদিকে কংগ্রেস ও সিনেট পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিওয়ার্ডকে (মার্কিন পক্ষের চুক্তিকারী) এবং প্রেসিডেন্ট জনসনকে কটূক্তি সমালোচনায় তুলোধুনো করে ছাড়ে। বলেছিল, এটি হতে যাচ্ছে ‘জনসনের মেরু ভাল্লুকের খোঁয়াড়’, ‘সিওয়ার্ডের বরফবাক্স’ ইত্যাদি। বুদ্ধিজীবী পণ্ডিতজন “সিওয়ার্ড’স ফলি” বা ‘‘সিওয়ার্ডের বেকুবি” শব্দ দু’টিকে প্রায় বাগধারা বানিয়ে ফেলেছিল। [জনসনকে ইম্পিচও করা হয়। যদিও একটিমাত্র ভোটের কারণে তাকে অফিস ছাড়তে হয়নি। ]

এত যে ধুমধাম বেচাবিক্রি, কোনো পক্ষ একটিবারের জন্যও আলাস্কার আসল মালিক, হাজার হাজার বছর ধরে বসবাসরত, স্থানীয় আদিবাসীদের সংগে কথাটুকু বলারও প্রয়োজন মনে করেনি। কখনোই করেনি। এখন কি করবে?

বিশেষত যখন এই আলাস্কা কয়েকশ’ ট্রিলিয়ন ব্যারেল তেলের উপর ভাসছে। সোনা আছে কমপক্ষে ১০০’ মিলিয়ন আউন্স। কপার ৮০ বিলিয়ন পাউন্ডের কম নয়। তামাও আছে। খনিজ পাথরের যোগান ৩০০ হতে ৫০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের।  

ট্রাম্প বলেই দিয়েছেন আর অপেক্ষা নয়। এবার আমেরিকাই হবে বিশ্বের ‘এনার্জি পরাশক্তি’। কীসের  ‘এনার্জি ইন্ডিপেন্ডেন্স’? ট্রাম্প চান ‘এনার্জি ডমিন্যান্স’। ডকট্রিনটি তিনি প্রকাশ্যই করে দিয়েছেন।  

কানাডিয় খনি কোম্পানি নর্দার্ন ডাইন্যাস্টি উঠে পড়ে লেগেছে ৩০০ থেকে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের খনিজ পাথর উত্তোলনের কাজটি পাবার জন্য। আর্কটিকে ড্রিলিংয়ের প্রস্তুতি চলছে। এসবের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে প্যারিস চুক্তি থেকে সরে আসা, কার্বন ট্যাক্সিং বাতিল করা, গ্লোবাল ওয়ার্মিংকে বানোয়াট ও মিথ্যা ধোঁকাবাজি বলা, দূষণদুষ্ট শিল্প-কলকারখানা আরো বাড়ানো—ষোলকলা পূর্ণই করে রেখেছেন ট্রাম্প।  

রাশিয়া ১৭৮৭ সালে সেটলার এনে পশম ও চামড়া বেচার রমরমা কারবারে লাগিয়ে আলাস্কাকে মেরুভোঁদড়শুন্য বানিয়ে ফেলেছিল। তিন লাখেরও বেশি মেরুভোঁদড় হত্যা ছাড়াও নির্বিচারে হাজার হাজার বিভার ও মেরুভল্লুক হত্যা করা হয়।  

আলাস্কায় ট্রাম্প স্টাইলে খনিজ সম্পদ উত্তোলনের, ড্রিলিংয়ের সম্ভাব্য পরিণতি বিষয়ে, উষ্ণায়ন ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসসাধন বিষয়ে ভয়াবহ সব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। আশার কথা, পরিবেশবাদীরা মামলা লড়তে শুরু করছে যাতে ট্রাম্প আলাস্কা বিষয়ে ওবামার করা পরিবেশচুক্তি ও আইন লংঘন করতে না পারে।   

একটিই ভয়। এই মামলা চলাকালীন দীর্ঘসূত্রতার সুযোগে আলাস্কার আদিবাসীদেরই না নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়। কারণ তারাও এখন মুখ খুলতে শিখেছেন। লাঠিসোটা তীর-ধনুক নিয়ে এগিয়েও আসছেন আজকাল। সব দুষ্ট শাসকরাই জানে বড় বাধা বা আসল বাধা এলে এইসব ছোটখাট মানুষদের কাছ হতেই আসবে।  

# ড. হেলাল মহিউদ্দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক। বর্তমানে কানাডায় অধ্যাপনারত।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৬ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৮

জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।