ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

হবিগঞ্জে চলছে বিপন্ন প্রজাতির কাছিম শিকার

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৪ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৯
হবিগঞ্জে চলছে বিপন্ন প্রজাতির কাছিম শিকার

মৌলভীবাজার: চলছে হাওরের বিপন্ন প্রজাতির কাছিম শিকার ও পাচার। নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট স্থানে গোপনে শিকারিরা এসব কাছিম ধরে এনে উচ্চমূল্যে পাচারকারিদের হাতে তুলে দেয়। অনেক দিন ধরেই এ কার্যক্রম স্থানীয়ভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। 

একটি সংঘবদ্ধ চক্র আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এ অবৈধ তৎপরতা করে গেলেও এগুলো প্রতিরোধে নেই কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ।  
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বাংলানিউজকে জানান, হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল থানার গুংগিজুরি হাওর থেকে আনা কাছিম বেচাকেনা হয়ে থাকে দারাগাঁও চা বাগানে।

অনেক দিন থেকেই চলছে এ অবৈধ বেচাবিক্রি। সপ্তাহে তিনদিন কাছিমের এ বাজার বসে এখানে। সোমবার ও মঙ্গলবার সকালের দিকে এবং বুধবার বিকেলে।
 
তিনি বলেন, এখানে তিন-চার হাত বদল হয়ে থাকে। একটি গ্রুপ সরাসরি হাওর থেকে শিকার করে অন্য একটি গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দেয়। এ গ্রুপটিই কাছিমগুলোকে বাজারে নিয়ে আসে। তারপর উচ্চমূল্যের বিনিময়ে এরা এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের হাতে তুলে দেয়। এ ব্যবসায়ীরাই আগে থেকে ঠিক করে রাখা কাছিমখেকোদের বাসায় পৌঁছে দেয়।  
 
এ কাছিমের প্রজাতি শনাক্ত করেন বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এটি ‘সন্ধি কাছিম’। এরা মিঠা পানির প্রাণী। সন্ধি কাছিমের অপর বাংলা নাম ‘পাতাপরী’। এর ইংরেজি নাম Spotted Flapshell Turtle এবং বৈজ্ঞানিক নাম Lissemys punctata
 
এরা একসময় আমাদের হাওর-বিল-জলাশয়গুলোতে প্রচুর পরিমাণে ছিল। কিন্তু বর্তমানে এরা বিপন্ন। শুধুমাত্র মানুষের খাওয়ার কারণে ক্রমাগত শিকারের ফলে সন্ধি কাছিম ধীরে ধীরে আমাদের প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বলে জানান এ বন্যপ্রাণী গবেষক।
 
আদনান আজাদ বলেন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগসহ সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে এসব বিপন্ন কচ্ছপের প্রজাতিগুলোকে রক্ষা করা সম্ভব। শুধু তা-ই নয়; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরনের বন্যপ্রাণী শিকার, পাচার ও হত্যা রোধে ব্যাপক প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। যাতে করে তৃণমূল পর্যায়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সচেতনতা তৈরি হতে পারে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং পরিবেশ সংরক্ষক তোফাজ্জল সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, জীববৈচিত্র্য আমাদের সম্পদ। আর এ প্রাণিজ সম্পদগুলোকে যথাযথভাবে সুনির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণের মাধ্যমে প্রতিবেশ ব্যবস্থায় আমরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া।
 
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু মুছা শামসুল মোহিত চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বন্যপ্রাণী শিকার ও পাচারের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান পরিচালিত হয়ে থাকে। আমরা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০১৯ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৯
বিবিবি/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।