ব্যাপারটি যেন- ‘প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে ছুড়ে ফেলে দেওয়া’ প্রবাদ বাক্যটির বহিঃপ্রকাশ! যে গাছটি ভূমির নতুন আবাদের সূচনা থেকে দুই বছর পর্যন্ত মাটির উর্বরতা দান করলো তাকেই অবশেষে কেটে ফেলা হয়। অর্থাৎ উপকারী গাছটিকে প্রাণে বধ!
কিন্তু এ পদ্ধতি পালন না করেও উপায় নেই।
‘প্রথমে বন্ধু’ এবং ‘পরে শত্রু’ বলে গণ্য করা চা বাগানের একটি বিশেষ গাছ মেডুলা। সম্প্রতি চা বাগানে ফুটেছে শ্বেতশুভ্র ‘মেডুলা ফুল’। এটি হেমন্তের ফুল। এর ইংরেজি নাম White Tephrosia.
দূর থেকে ফুলগুলো শিম অথবা বকফুলের মতো মনে হয়। ফুলের পাপড়ি দুধের মতো সাদা। পাপড়িগুলো পাঁচ থেকে দশ মিলিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে এবং প্রতিটি মেডুলা গাছের উচ্চতা দুই থেকে চার মিটার।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অভিজ্ঞ টি-প্লান্টার এবং বাংলাদেশ চা সংসদের (বিটিএ) সদস্য ইবাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, গাছটি ‘মেডলা’ নামে অধিক পরিচিত হলেও এটি আসলে ‘মেডুলা’। একে স্থানীয় ভাষায় ‘বগা মেডলা’ বা ‘বগুই’ও বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Tephrosia candida. এটি গুল্ম শ্রেণির বৃক্ষ। চা আবাদের সময় মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য মেডুলা গাছ রোপণ করা হয়ে থাকে। তবে এই গাছ দুইবছরের বেশি রাখা যায় না; তখন গাছগুলো ক্ষতি করে।
মেডুলা ‘শিম’ জাতীয় গাছ। এটি লিগুমিনাস পরিবারের উদ্ভিদ। এ গাছের শিকড়ে এক ধরনের গোটা হয়। এটাকে বলে ‘নডিউল’। এ গাছ বাতাস থেকে নাইট্রোজেন নিয়ে মাটিতে তা ছড়িয়ে দিয়ে উর্বরতা দান করে। এছাড়াও মেডলা গাছ বাচ্চা চা গাছকে ছায়া দেয়। ঠিক দুই বছর পর এই গাছ ওই স্থান থেকে সরিয়ে ফেলা হয় বলে জানান তিনি।
মেডুলার ক্ষতি সম্পর্কে এ চা বিশেষজ্ঞ বলেন, চায়ের নতুন আবাদের স্থানে বেশিদিন মেডুলা গাছ থাকলে চা গাছের জন্য ক্ষতি করে। এই গাছের কাণ্ডে লাল-মরিচা (রেড-রাস্ট) শৈবাল নামক এক ধরনের রোগ তৈরি হয়ে চায়ের মারাত্মক ক্ষতি করে। রোগটি বাচ্চা চা গাছগুলোতে সংক্রমিত হয় এবং মারা যায়। তাই ঠিক দুই বছর পরে এই গাছটিকে চা গাছের উন্নত স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে কেটে ফেলে দেওয়া হয়।
এদিকে, এগুলো কাটলেও ওই এলাকার নতুন চা আবাদ এবং পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না। কারণ মেডলার পাশাপাশি রোপণ করা ছায়াবৃক্ষগুলো ততদিনে বড় হয়ে বাচ্চা চা গাছগুলোকে বাঁচানো প্রক্রিয়া শুরু করে দেয় বলে জানান ইবাদুল হক।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৩ ঘণ্টা; অক্টোবর ৩১, ২০১৯
বিবিবি/টিএ