ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

কৃত্রিম পদ্ধতিতে প্রথমবারের মতো ফুটলো খৈয়া গোখরা ছানা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২১
কৃত্রিম পদ্ধতিতে প্রথমবারের মতো ফুটলো খৈয়া গোখরা ছানা ডিম থেকে বের হচ্ছে খৈয়া গোখরার ছানা। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: ‘সাপের বাচ্চা সাপ-ই হয়’– এ কথাটা আমাদের সমাজে ঋণাত্মক অর্থে প্রচলিত। কিন্তু সাপেরা প্রকৃতির উপকারী বন্ধু- সেটা মানুষ এখন ধীরে ধীরে বুঝতে শিখে গেছে।



বিষাক্ত কিংবা নির্বিষ যে সাপ-ই হোক না কেন, ওরা আমাদের প্রকৃতিতে খাদ্যশৃংখল নিয়ন্ত্রণে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে– এটা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
 
অতি সম্প্রতি মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী রেঞ্জের নিবিড় তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ কৃত্রিম উপায়ে প্রথমবারের মতো প্রায় ৫০ দিন পর ফুটলো পনেরোটি খৈয়া গোখরা (Indian Cobra)  সাপের ছানা। যে ডিম থেকে ছানাগুলো ফুটেছে সে ডিমগুলো হয়তো স্বাভাবিকভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারতো।
 
অথবা পরিবেশবিরোধী মানুষ কোনো না কোনোভাবে ডিমগুলোকে ধ্বংস করে খৈয়া গোখরা সাপের প্রজননের ক্ষতিসাধন করতে পারতো। ‘বসতবাড়িতে সাপের ডিম’ -এমন আতঙ্কজনক সংবাদের ভিত্তিতেই ডিমগুলো অবশেষে উদ্ধার হলো। তারপর বনবিভাগের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১৪ জুলাই মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী রেঞ্জের সহযোগিতায় বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন এবং স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এন্ডেঞ্জার্ড ওয়াইল্ডলাইফ এই দুই যৌথ বেসরকারি সংস্থা কমলগঞ্জ উপজেলার তিলকপুর গ্রাম থেকে একটি খৈয়া গোখরা ও ১৫টি ডিম উদ্ধার করে।
 
সেদিন রাতেই কর্তৃপক্ষ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে খৈয়া গোখরাটিকে ছেড়ে দেয়। পরে বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞের পরামর্শে উদ্ধারকৃত ডিমগুলো কৃত্রিম প্রজননের জন্য সংরক্ষণাগরে রেখে দেওয়া হয়।
 
সাপের ডিম এবং তার পরবর্তী ফলাফলে দেখা গেছে, ১৫টি ডিম থেকে একে একে ১৫টি ছানা বের হয়ে কিলবিল কিলবিল করছে। এ ছানাগুলোর রঙ কালো। মাথায় সাদা অনুজ্জ্বল ছাপ রয়েছে। হাত বাড়ালেই মৃদু ফণা তোলার চেষ্টা করছে।
 
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এটি সত্যিই আমাদের মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী রেঞ্জের জন্য দারুণ একটি খুশির খবর। মৌলভীবাজারে প্রথম আমরা খৈয়া গোখরার ডিমগুলো কৃত্রিমভাবে প্রজননে সক্ষম হলাম। ডিমগুলো হয়তো নষ্ট হয়ে যেতে পারতো। কিন্তু আমরা তৎক্ষণাৎ যথাযথ উদ্যোগ নিয়ে ডিমগুলোকে উদ্ধার করে কৃত্রিমভাবে প্রজননের ব্যবস্থা করেছিলাম। এর ফলেই ডিমগুলো সফলভাবে ফুটে ছানা বের হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নরমারলি (স্বাভাবিকভাবে) এরা সিক্সটি প্লাস ডে-তে (৬০ দিনের বেশি) ফুটে। কমলগঞ্জের যে বাড়িতে ছিল সেখানে কিছুদিন ছিল। আর আমাদের হেফাজতে প্রায় ৫০ দিন ছিল। আমরা ডিমগুলো ১৪ জুলাই নিয়ে এসেছি এবং বাচ্চা ফোটানোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।
 
গোখরার বাচ্চাগুলো একটু শক্ত-পোক্ত হয়ে তারপরই আমাদের প্রাকৃতিক বনে ছাড়া হবে। এসব ছানাদের আবার শত্রু বেশি। চিল, প্যাঁচা প্রভৃতি শিকারি পাখি এদের ধরে ধরে খেয়ে ফেলে। তাই সপ্তাহ ১০দিন পর আমরা বাচ্চাগুলোকে অবমুক্ত করবো বলে জানান ডিএফও রেজাউল করিম চৌধুরী।
 
খৈয়াগোখরা ছানাদের ‘বিষ প্রসঙ্গে’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বন্যপ্রাণী গবেষক প্রফেসর ড. কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, এই ছানাদের ছোট দাঁতের বিষ ওর মা অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক খৈয়া গোখরার মতোই মারাত্মক ভয়ংকর। একেকটি ছানাদের শরীর গ্রন্থিতে যে পরিমাণ বিষ রয়েছে সেটি যদি ভালো মতো রক্তে মিশ্রিত হয়, তা অনায়াসে ২/৩ জন মানুষকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। আর তাছাড়া ছানাদের তো হান্টিং এক্সপেরিয়েন্স (শিকারের অভিজ্ঞতা) নেই, ফলে ওদের বাইট (কামড়) আরো বেশি মারাত্মক এবং দ্রুত কার্যকরী।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২১
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।