ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

সাইবেরিয়ার নদীপাড়ে ছানা তুলে ‘বালি নাকুটি’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২
সাইবেরিয়ার নদীপাড়ে ছানা তুলে ‘বালি নাকুটি’ বাঁশের ওপর বিচিত্র ভঙ্গিমায় শুয়ে বালি নাকুটি। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

মৌলভীবাজার: পাখির রাজ্য বড়ই বিচিত্র! বিভিন্ন আকারের, বাহারি রঙের, নানা স্বভাব-বৈচিত্র্যের পাখিরা আমাদের দেখা-অদেখার মধ্যে মিশে রয়েছে। নিজের মতো করে ওরা উপকার করে চলেছে প্রকৃতির।



কোনো কোনো পাখি আমাদের অতি পরিচিত। কোনোটা আবার শুধুই পরিচিত। কোনোটা মোটামুটি। কোনো পাখিকে একদমই দেখা হয়নি আমাদের। বলা যায়, পুরোটাই অপরিচিত। সুযোগ হয়নি তার সম্পর্কে দুই-চারটি লাইন জানার।

পাখি আলোকচিত্রী আবু বকর সিদ্দিকের তোলা এই বিশেষ ছবিটি নদী উপকূলের অদেখা একটি পাখি।

পাখি বিজ্ঞানীরা ওর নাম রেখেছেন Riparia riparia. বিশেষ একটি ভঙ্গিমায় পাখিটিকে দারুণভাবে দেখা যাচ্ছে পাখিটি পরিযায়ী। অর্থাৎ তার বিশ্বস্ত ডানায় ভর করে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে বাংলাদেশে আসে। কিছু দিন অবস্থান করে প্রজননের জন্য ফিরে যায় সাইবেরিয়ায়। আসা-যাওয়ার এই রহস্যময় খেলা পরিযায়ী পাখিদের আজন্ম লালিত।

এই বিশেষ ভঙ্গিটিকে আমাদের অদেখা! বাঁকানো বাঁশের ওপর শুয়ে পড়া পাখিকে আমরা ইতোপূর্বে কখনো দেখিনি। বিচিত্র প্রকৃতি তার আরণ্যক বিচিত্রতার উপহার হিসেবে সেই বিশেষ ছবিটি আলোকচিত্রীর সামনে মেলে ধরেছেন। অনতিবিলম্বে যা বিস্ময় হিসেবে ক্যামেরাবন্দী হয়ে যায়!

পাখিটির এমন বিশেষ ভঙ্গিমার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে পাখি আলোকচিত্রী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, পাখিটি বাঁশের উত্তাপ গায়ে নিচ্ছিল ।  দেশ বরেণ্য পাখি বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক এ পাখিটি সম্পর্কে বলেন, ‘বালি নাকুটি আমাদের দেশের বিরল পরিযায়ী পাখি। কম দেখা মেলে। বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের প্রধানত নদীর কাছাকাছি পাওয়া যায়। এদের স্বভাব হলো দলগতভাবে নদী উপকূলে বিচরণ। সাধারণত বড় নদী, হ্রদ, পুকুরের বালু কিংবা মাটির পাড়ে ঘুড়ে বেড়ায়। একটি দলে প্রায় অর্ধশত পাখিও দেখা যায়। ’ 

পানির সামান্য ওপরে কিংবা খোলা নির্জন মাঠে উড়ে উড়ে খুদে পোকা খোঁজে। ওর খাদ্যতালিকায় রয়েছে কোমল দেহের পোকা যেমন- মশা, কালো মাছি, মেফ্লাই, স্টোনফ্লাই প্রভৃতি বলে পাখিটির খাদ্য প্রসঙ্গে তিনি জানান।

আকার-আকৃতি ও দৈহিকগঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ পাখিটির দৈর্ঘ্য ১৩ সেন্টিমিটার। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ কালচে বাদামি হয়। গলা সমেত দেহের নিচে সাদা। বুক বরাবর কিছুটা বাদামি ফিতা। ডানার উপরিতল এবং চোখ কালচে বাদামি। চঞ্চু (ঠোঁট) শক্ত ও মোটা। পা ও পায়ের পাতা কালচে বাদামি। ছেলে ও মেয়ে পাখির চেহারা অভিন্ন।

তিনি বলেন, সকালের মৃদু রোদ পোহাতে পাখির বিচ্ছিন্ন দলে উচ্চে উড়ে বেড়ায় ও বৈদ্যুতিক তারে ঘনিষ্টভাবে সারিবদ্ধ হয়ে অবস্থান করে। মাঝেমধ্যে দৃঢ় স্বরে ডাকে ‘ব্রিট ব্রিট..’।

অক্টোবর-নভেম্বর মাসে তাদের প্রজননকাল। তখন সাইবেরিয়া নদীর পাড়ে খাড়া বালু তীরে সমতল সুড়ঙ্গ তৈরি করে ঘাস, খড় কুটো ও পালক দিয়ে বাসা বানিয়ে এরা প্রজন্ম রক্ষায় ডিম পেড়ে ছানা তোলে বলে জানান পাখিবিদ ইনাম আল হক।   

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২২
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।