ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

জাহাঙ্গীরের শখের খামারে বিদেশি ৪০ জাতের মুরগি

কাজী আব্দুল কুদ্দুস,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০২২
জাহাঙ্গীরের শখের খামারে বিদেশি ৪০ জাতের মুরগি

রাজবাড়ী: পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪০ প্রজাতির বিদেশি মুরগির খামার এখন বাংলাদেশে।  

রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার তরুণ উদ্যোক্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের শখের খামারের একেকটি মুরগির দাম ২০ হাজার থেকে শুরু করে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

 

বিদেশি মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন করে দেশ ও দেশের বাইরে বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হয়েছেন তিনি।  

জাহাঙ্গীরের সফলতা দেখে বিদেশি মুরগি পালনে আগ্রহী হচ্ছেন অনেক তরুণ উদ্যোক্তা।

ছোটবেলা থেকেই পাখি পালনের প্রতি ঝোঁক ছিল জাহাঙ্গীরের। সেই আগ্রহ থেকেই গড়ে তুলেছেন বিদেশি মুরগির খামার। ২০১৬ সালে নিজ বাড়ির উঠানে একটি ঘর বানিয়ে স্বল্প খরচে দ্বিতল কাঠের ফ্রেম বানিয়ে মাত্র চার জোড়া বিদেশি মোরগ-মুরগি দিয়ে শুরু করেন খামার। এরপর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করেছেন প্রায় ৪০ প্রজাতির বিদেশি মোরগ-মুরগির জোড়া।  

মো. জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৭) রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বড় বাঙলাট গ্রামের মৃত আমীর হোসেনের ছেলে।

তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি বিভিন্ন পাখি ও মুরগি পুষতাম। পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা শেষ করে দেশে অনেক চাকরির সন্ধান করি। কিন্তু মনমতো চাকরি না মেলায় বিদেশে যাই। কয়েকটি দেশ ঘুরে আমি ভারতে যাই। সেখানে বিভিন্ন দেশের মুরগি দেখি। তখন আমার বিদেশি মুরগি পোষার ইচ্ছে হয়। আমি ভারত থেকে মাত্র চার জোড়া উন্নত জাতের মোরগ-মুরগি এনে আমার গ্রামের বাড়িতে পালতে শুরু করি। ২০১৬ সালে আমার এ বিদেশি মুরগির খামারের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে আমার খামারে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আনা প্রায় ৪০ প্রজাতির বিদেশি মোরগ-মুরগির জোড়া আছে। এর মধ্যে সেব্রাইট, পুলিশ ক্যাপ, সিলভার লেস, সেরেমা, কসমো, সুমাত্রা, ব্লু বারলেস, ইয়োকোহামা উল্লেখযোগ্য।  

এসব মুরগি ভারত, জাপান, নেদারল্যান্ড, ভিয়েতনাম, বেলজিয়াম, চীন, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।  

বর্তমানে এ খামারে ৪০ প্রজাতির ৭০ জোড়া বিদেশি মোরগ-মুরগি আছে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা। প্রতি মাসে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার বিদেশি মুরগি ও মুরগির বাচ্চা বিক্রি হয় তার খামার থেকে। তিনি, তার স্ত্রী ও একজন কর্মচারী মিলে খামার সামলান। এতে সব খরচ হয় হাজার দশেক টাকা। এছাড়া পুঁজি বাদ দিয়ে মাসে ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ থাকে বলেও  জানান জাহাঙ্গীর।
 
তিনি আরও বলেন, বিদেশি মুরগির ডিম বিক্রি না করে তা থেকে বাচ্চা উৎপাদন করে বিক্রি করি। এসব মুরগির এক থেকে ১০ দিন বয়সী বাচ্চা প্রতি জোড়া এক হাজার টাকা থেকে ১২০০ টাকায় হোম ডেলিভারি দেওয়া হয়। আর পূর্ণ বয়স্ক মুরগির জোড়া ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত। মুরগিগুলো দেখতে খুব সুন্দর। তাই প্রতিদিনই শত শত মানুষ আমার খামার দেখতে আসে।

খামার দেখতে আসা মো. মারজান শরীফ বলেন, আমি অনলাইনে দেখে বিদেশি মুরগির খামারে এসেছি। আমি একজন ছাত্র হলেও পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কয়েকটি বিদেশি মুরগির বাচ্চা কিনেছি। আমিও বিদেশি মুরগির খামার করবো।

আরেক দর্শনার্থী মো. ময়নাল বলেন, আমি একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে বিদেশি মুরগির খামার শুরু করতে চাই। তাই আমি জাহাঙ্গীর ভাইয়ের খামার দেখতে এসেছি। অনেক প্রজাতির বিদেশি মুরগি দেখলাম। অনেক ভালো লেগেছে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. খায়ের উদ্দীন আহম্মেদ বাংলানিউজকে জানান, মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের এ বৈচিত্র্যময় বিদেশি মুরগির খামার আমি দেখেছি। সেখানে বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪০ প্রজাতির বিদেশি মোড়গ-মুরগি আছে। মুরগিগুলোর দাম আকাশ ছোঁয়া।  তার খামারের প্রতি জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সুদৃষ্টি রয়েছে। এমন তরুণ উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।