প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের নিয়ে কাজ করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রজ্ঞা পারমিতা মজুমদার। তিনি শিশুদের জলবায়ু নিয়ে পড়ান।
আজ ২৯ মার্চ জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস। প্রজ্ঞার দুর্যোগ প্রস্তুতি নিয়েই লিখেছেন জয়ন্ত সাহা এবং এমএম ইমরান।
চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসেন প্রজ্ঞা পারমিতা মজুমদার। ব্রিটিশ কাউন্সিলের আয়োজনে ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট চ্যাম্পিয়নশিপ - ২০১০’ এ নাম লেখালেন। ‘অ্যাক্ট লোকালি, থিঙ্ক গ্লোবালি’ থিমে আয়োজকরা তরুণদের কাছে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে নানা আইডিয়া চান। প্রতিযোগিতায় নাম লেখানোর পর প্রজ্ঞা ভাবতে থাকেন ভিন্নতর এক আইডিয়ায় চমকে দেবেন সবাইকে। তখনই শিশুদের নিয়ে কিছু করার নেশা পেয়ে বসল তাকে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ‘হিল দ্য ওয়ার্ল্ড, হিল আওয়ারসেলভস’ (বাঁচাও পৃথিবী, বাঁচাও আমাদের) শিরোনামের এই প্রজেক্টে কাজ করতে চাইলেন শিশুদের নিয়ে।
প্রথমেই আসে অভ্যাসের পরিবর্তন। শিশুদের অভ্যাস পরিবর্তন করা জরুরি। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা, অস্বাস্থ্যকর বাসস্থান, পানির অপচয়, বিদ্যুতের অপচয়সহ অন্যান্য বদঅভ্যাস দূর করা তার প্রকল্পের একটি অংশ।
প্রজ্ঞা মনে করেন, শিশুরা পৃথিবীকে চিনতে শেখে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। তাছাড়া, এমনিতেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে একটি। বিশেষত এ জন্যই শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তনের কথাগুলো আগে জানা দরকার। শিশুরা যখন ছোটবেলা থেকেই জানবে শক্তি অপচয় রোধে কাজ করতে হবে, পৃথিবীর জলবায়ু সম্পর্কে জানা-অজানা তথ্য জানতে পারবে; তখন থেকেই নিজেদের মধ্যে তারা অভ্যাসের পরিবর্তন আনবে।
এ আইডিয়া নিয়েই প্রজ্ঞা ব্রিটিশ কাউন্সিল চ্যাম্পিয়ানশিপ অ্যাওয়ার্ড জয় করে।
ব্র্যাক শিক্ষা কার্যক্রমের সহযোগিতায় প্রজ্ঞার মিশন শুরু হয় ৫ জানুয়ারি, ২০১১। এ মিশনে তার সঙ্গী ব্র্যাকের ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশনের ছাত্র এমএম ইমরান হাসান। মহাখালীর কড়াইল বস্তির ব্র্যাক-১ স্কুল দিয়ে যাত্রা শুরু হয় তাদের। প্রজ্ঞার গল্পছলে ওজনস্তরের ক্ষয়, মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়া, কার্বন নিঃসরনের ভয়াবহ দিকগুলো বলে চলেন। শিশুরা তখন মনোযোগ দিয়ে শুনছে।
তারা এলাকার জলবায়ু পরিবর্তনের একটি চিত্রও তুলে ধরে। আলোচনা পর্ব শেষে শিশুদের জন্য আয়োজন করা হয় মজার সব খেলা। চারপাশে পড়ে থাকা চিপসের প্যাকেট ও ক্যান কুড়িয়ে এনে ঘর সাজানো হলো।
শিশুরা জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা নিয়ে রচনায় সরল ভাষায় বড়দের প্রশ্ন করে, ‘কী করেছি আমরা? আমরা খুব সাধারণ একটি পৃথিবী চাই। আকাশ ছোঁয়া দালান চাই না। আমাদের সুন্দর একটি পৃথিবী দাও’।
প্রজ্ঞা এবং ইমরান ঘুরে এসেছেন আরো ১৮টি ব্র্যাক স্কুল। ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য স্কুলগুলোতেও যাবেন বলে জানান।
২০১১ সালের ১৪ নভেম্বর ব্রিটিশ দূতাবাসের ১৭ সদস্যের একটি দল প্রজ্ঞার প্রজেক্ট পরিদর্শনে আসেন। শিশুদের জানার আগ্রহে অবাক হয়ে যায় পরিদর্শকরা। সে দলের একজন সদস্য বেলাল মোহাম্মদ মন্তব্য করেন, ‘বাচ্চাদের মানসিকতায় পরিবর্তন ঘটিয়ে পরিবেশ দূষনরোধে এই আইডিয়া সত্যিই আমাদের আবাক করেছে।
এই ছোট্ট শিশুরাই একদিন পরিবেশ রক্ষায় প্রধান ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে এই প্রজেক্ট ছড়িয়ে দিতে পারলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে আমরা পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ দেখতে পাবো। ’
প্রজ্ঞা মনে করেন, তরুণরা একসঙ্গে কাজ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব। শুধুমাত্র প্রয়োজন উদ্যোগ। ছোট ছোট উদ্যোগই একদিন বড় আকার পাবে। তখন সবকিছুই বদলে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, ২৯ মার্চ, ২০১২
সম্পাদনা: শেরিফ আল সায়ার, ইয়ুথ এনগেজমেন্ট এডিটর