ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ‘ঘোড়দৌড়’ এর পুনঃসংযোজন

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২৩
হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ‘ঘোড়দৌড়’ এর পুনঃসংযোজন প্রাণপণে ছুটছে প্রতিযোগী ঘোড়ার দল। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্যের অনেক কিছুই আজ বিলুপ্তির পথে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘোড়ার দৌড় বা ঘোড়দৌড়।

কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণমূলক এ খেলাটি।

তবে দেশের কোথাও কোথাও এখনও এটি সবান্ধব উপস্থিতিতে আয়োজন করা হয়ে থাকে। স্থানীয় প্রশাসন এবং গ্রাম-জনপদের প্রভাবশালী সংগঠকেরা এখনও এ খেলার আয়োজন করে বাংলার ঐতিহ্যটি ধরে রাখার নিরন্তর চেষ্টা করে থাকেন।

এভাবে হারিয়ে যাওয়া বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ ঘোড়দৌড় খেলাটির পুনঃসংযোজন ঘটে।

সম্প্রতি মৌলভীবাজার জেলা স্টেডিয়ামে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল জেলা পরিষদ। প্রতি বছর নিয়মিত আয়োজনেরই অংশ হিসেবে এবারও ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এ আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করেছিল মৌলভীবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থা।

এ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন কয়েক হাজার দর্শক। শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষসহ হাজারো মানুষে ভরা স্টেডিয়াম গ্যালারি। মাঠের ভেতর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে লাল, কালো, সাদাসহ ছোট-বড় অনেক ঘোড়া। সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ আশপাশের এলাকার ঘোড়া এ দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। গ্রাম-বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিযোগিতা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন আগত দর্শকেরা।

ঘোড়সওয়ার (ঘোড়ার চালক) সাব্বির হোসেন জানান, তারা সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থেকে ‘দুই ভাইয়ের মায়া’ নামক ঘোড়া নিয়ে এখানে এসেছেন। পুরস্কার জয়ের জন্য নয়, শখের বসেই ঘোড়া দৌড়ে অংশ নেন তিনি।

রনজিৎ বাচ্চা নামক ঘোড়ার ঘোড়সওয়ার নাবিল হোসেন বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিযোগিতায় অংশ নিই আমি। আনন্দ পাই, ভালোও লাগে।

দুপুর ১২টায় শুরু হয়ে কয়েক দফায় দৌড়ে অংশ নেয় বিজয়ী সব ঘোড়া। প্রতিযোগিতা চলেছে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া প্রতিটি ঘোড়াই আলাদা নামে পরিচিত। যেগুলো হলো- কংসরাজ, দুই ভাইয়ের মায়া, টেকর পাখি, দাদা-নাতি, হংসরাজ, টিপু সুলতান, মায়ের রাজা, মুকুট রাজা, বাংলা ভাই, টু হৃদয়, ডালিম বাংলা, ট্রিগার, রণজিৎ, দুই বন্ধুর মায়া, রাজন বাংলা, লালু পাগলা, লাল বারুদ, আর্মি টাইগার, মামুন রাজা, রণজিৎ বাচ্চা, পাঁচ ভাইয়ের মায়া, বাঘ বাচ্চা, গরিবের বন্ধু, দিল দেওয়ানা, আরিয়ান বাহাদুর, আমার স্বপ্ন, টপ সিঙ্গার, মামা-ভাগিনা, শুভরাজ, মাহীরাজ, হৃদয় বাংলা, নিউ সোনার তরি, সোনার ময়না, মায়ের আদেশসহ নানা নামে মোট ৪৬টি ঘোড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে।

ঘোড়দৌড় দেখতে আসা নবনীতা রায় বলেন, অনেক দিন আগে ঘোড়দৌড় দেখে ছিলাম। এখন আর কোথাও ঘোড়দৌড় হয় না। এ আয়োজন দেখতে অনেক মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন। এ প্রতিযোগিতা দেখতে খুবই ভালো লাগছে।

আয়োজক সূত্রে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ঘোড়া নিয়ে আসেন ঘোড়ার মালিকেরা। প্রতিযোগিতা শেষে পুরস্কার দেওয়া হয়। ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় ছোট-বড় ৪৬টি ঘোড়া অংশগ্রহণ করেছে।

এ প্রতিযোগিতায় ‘ছোট ঘোড়া’ ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে শুভরাজ, দ্বিতীয় আমার স্বপ্ন ও তৃতীয় হয়েছে আর্মি টাইগার। এছাড়াও ‘বড় ঘোড়া’ ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে জয় বাংলা, দ্বিতীয় হয়েছে সোনার ময়না এবং তৃতীয় হয়েছে নিউ সোনার তরী। বিশেষ পুরস্কার পায় রনজিৎ বাচ্চা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২৩
বিবিবি/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।