চৌগাছা (যশোর): ‘আমাদের দেখে পাশের এলাকার মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেন। আমাদের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলে না।
এ সময় তিনি আরও আক্ষেপ করে বলেন, আর্সেনিকে আক্রান্ত এলাকার মানুষের সঙ্গে অন্য অঞ্চলের মানুষ আত্মীয়তা বন্ধনে আবদ্ধ হতে চান না। আমরা সামাজিকভাবে নানা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি।
শুধু এম মুজাহিদ আলী নয়। তার মতো আরও অনেকে আক্ষেপ করে একই কথা বলেন।
সরেজমিনে জানা যায়, যশোরের চৌগাছা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ভয়াবহ আর্সেনিক ছড়িয়ে পড়েছে।
ইতোমধ্যে এ রোগে ২ হাজার ৮শ ৫০জন আক্রান্ত হয়েছেন। আর এ রোগে মারা গেছেন ২৫ জন।
বিশেষ করে উপজেলার মাড়ুয়া, কয়ারপাড়া, মাজালী, বলিদাপাড়া, সুখপুকুরিয়া, তেঘোরি, বেড়গবিন্দপুর, কুষ্টিয়া, রামভদ্রপুর, ফুলসারা, ধুলিয়ানী, নারায়নপুর, জগদীশপুর, সিংহঝুলী, ও জগন্নাথপুরে আর্সেনিক ছড়িয়ে পড়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ও জাপানি সংস্থা জাইকার উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকায় আর্সেনিকমুক্ত পানি পান করার জন্য নির্মিত গ্রাবেল সেন্ড ফিল্টার (জিএসএফ), পন্ড সেন্ড ফিল্টার (এএসএফ), আর্সেনিক আয়রন রিমুভাল প্লান ও ডাগ ওয়েল রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অধিকাংশ অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।
স্থানীয় ‘সলক’ সমাজ কল্যান সংস্থার পরিচালক সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, সেপ্টেম্বর মাসের জরিপে দেখা গেছে চৌগাছায় আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৮শ ৫০ জন ছাড়িয়ে গেছে । এরমধ্যে, মাড়ুয়া, কয়ারপাড়া ও বলিদাপাড়া গ্রামে আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
কিন্তু চৌগাছা হাসপাতালে রেজিস্ট্রিকৃত আর্সেনিকের রোগী রয়েছে মাত্র এক হাজার ৫শ ৫০ জন। আর তালিকা অনুযায়ী মারা গেছেন ২৫ জন।
এর মধ্যে শুধুমাত্র মাড়ুয়া গ্রামের একই পরিবারে আব্দুল আজিজ (৪৭), ইউছুফ আলী (৪২) ও এদের মা ফুলজান বিবি মারা গেছেন।
এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন (৫৫), কাশেম আলী (৬০), হোসেনের স্ত্রী, মুকতার আলী (৪৫), আতিয়ার রহমান (৪৮), আক্কাছ আলী (৪৪), মাফিয়া (৩২) ও তার মেয়ে আছমা (১২), মনসের আলী (৪২), ইলাহুড়িসহ (৬৭) ১৮ জন আর্সেনিক রোগে মারা গেছেন।
আর্সেনিকে আক্রান্ত কয়ারপাড়া গ্রামের দফাদার পাড়ায় সবুরা (৪৮), তাইজেল (৬৫), মঞ্জুয়ারা (৪৫), সাহিদা (২৬), সবেদা (৪২) আজগর আলী ( ১৮), সালেহা (৪৬), ইসলাম (৩২) ও বেবীসহ (৩০) অসংখ্য মানুষ বাংলানিউজকে জানান, নিরাপদ পানি না পেয়ে আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করায় আমরা আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত হয়েছি।
তারা আরও জানান, এ রোগের কারণে শরীর বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। হাতে পায়ে কালো ফসকা পড়ছে। শরীর দূর্বল হয়ে শক্তি-ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি।
কয়ারপাড়া গ্রামের এম মুজাহিদ আলী বাংলানিউজকে জানান, তার দুটি গাভীকে নিয়মিত টিউবওয়েলের পানি খাওয়ানোর পর আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রওশন আনোয়ার বাংলানিউজকে জানান, এ রোগের উৎস পানি। প্রাথমিকভাবে ধরা পড়লে চিকিৎসার পাশাপাশি আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করা বাদ দিলে রোগ ভালো হওয়া সম্ভব।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশলী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ফারুক হোসেন বাংলানিউজকে জানান, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ইতিমধ্যে অধিকাংশ ইউনিয়নের আর্সেনিকযুক্ত টিউবওয়েলগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।
চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেলোয়ার হোসেন মাতুব্বর বাংলানিউজকে জানান, পাতকুয়া, ডাগওয়েল ও পিএসএফ নির্মাণের মাধ্যমে নিরাপদ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি আর্সেনিকে আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালের মাধ্যমে ফ্রি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১২
সম্পাদনা: মাহাবুর আলম সোহাগ, নিউজরুম এডিটর