ঢাকা, সোমবার, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২, ২১ জুলাই ২০২৫, ২৫ মহররম ১৪৪৭

ফিচার

এবারের নোবেল বিজয়ীরা

স্বপ্নযাত্রা ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৩৫, অক্টোবর ১৪, ২০১২
এবারের নোবেল বিজয়ীরা

বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল প্রচলন করেন নোবেল পুরস্কারের। ১৯০১ সাল থেকে অনন্য সাধারণ গবেষণা, উদ্ভাবন ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।

মোট ছয়টি বিষয়ে পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিষয়গুলো হল: পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্র, অর্থনীতি, সাহিত্য। নোবেল পুরস্কারকে এ সকল ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পদক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

স্বপ্নযাত্রার পাঠকদের জন্য ২০১২ সালের নোবেল বিজয়ীদের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো।

পদার্থ বিজ্ঞানে হ্যারোশ ও ওয়াইনল্যান্ড:

nobel-physicsএবছর কোয়ান্টাম অপটিকস নিয়ে গবেষণার জন্য পদার্থবিজ্ঞানে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ফ্রান্সের সার্জ হ্যারোশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড ওয়াইনল্যান্ড।

ফোটোন এবং চার্জযুক্ত অ্যাটম নিয়ে এ দুই পদার্থবিজ্ঞানীর গবেষণা পদার্থবিজ্ঞানে নতুন এক দ্বার উন্মোচন করেছে। এ গবেষণার ফলে যোগাযোগ প্রযুক্তি অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে বিপ্লব ঘটাতে পারে বলে নোবেল কমিটি আশা প্রকাশ করেছে।

অধ্যাপক হ্যারোশ সংবাদ সম্মেলন থেকে ফোনের মাধ্যমে নোবেল পুরস্কার অর্জনের খবর পান। তিনি বলেন, ‘আমি খুব সৌভাগ্যবান। আমি তখন রাস্তা পার হচ্ছিলাম। খবরটা শোনার পর আমি সেখানে বসে পড়লাম। ’

এদিকে পদার্থে নোবেল জয়ী ওয়াইনল্যান্ড বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য রাস্তায় হাঁটছিলাম। হঠাৎ আমার সামনে একটা সুইডিশ কোড ভেসে উঠলো। আমি অনুধাবন করলাম এটা সত্য এবং আমি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছিলাম। ’

হ্যারোশ ১৯৪৪ সালে ১ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। হ্যারোশের বাবা ছিলেন মরক্কোর একজন আইনজীবী। পরে ১৯৫৬ সালে পুরো পরিবার ফ্রান্সে চলে আসেন। সেখানেই প্যারিস শহরে হ্যারোশ বেড়ে উঠেছেন। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী হ্যারোশ পড়াশোনা শেষ করে ১৯৬৭ সালে ফ্রান্সের ন্যাশনাল রিসার্চ সাইনটিফিক সেন্টারে গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে ১৯৭৫ সালে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। শিক্ষক হিসেবেই পরবর্তী সময় কাটিয়েছেন। শিক্ষকতা এবং গবেষণা করে তার সময় কাটতে থাকে। মাঝে এক বছর বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেন। বর্তমানে তিনি কলেজ দ্য ফ্রান্সের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি গবেষণাও চালিয়ে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে পদার্থবিজ্ঞানের আরেক নোবেল বিজয়ী যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড ওয়াইনল্যান্ডের জন্ম ১৯৪৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি।

ওয়াইনল্যান্ড ক্যালিফোর্নিয়া শহরে বেড়ে উঠেছেন। সেখানে ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৬৫ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ১৯৭০ সালে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ওয়াইনল্যান্ড একধারে গবেষক এবং শিক্ষক। তিনি ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডোতে শিক্ষকতা করছেন।

রসায়নে লেফকোইজ ও কবিলকা:

Nobel-Chemistryমানবদেহে এক কোষ থেকে আরেক কোষে যে জটিল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান হয় তা নিয়ে গবেষণা করার জন্য ২০১২ সালের রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন দুই মার্কিন গবেষক রবার্ট লেফকোইজ এবং ব্রায়ান কবিলকা। দুই গবেষকের গবেষণার ফলে নতুন ওষুধ উদ্ভাবনে বিজ্ঞানীরা একধাপ এগিয়ে যাবেন বলে আশা করছে সবাই।  

দুই গবেষকের আবিষ্কার করা পদ্ধতির নাম দেওয়া হয়েছে ‘জি প্রোটিন-কাপল্ড রিসেপ্টরস’। এ ধরনের প্রোটিন কোষ প্রাচীরের মধ্য দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে যায়। প্রায় অর্ধেক ওষুধ কাজ করে এসব রিসেপ্টরের ওপর ভিত্তি করে। কাজেই এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা গেলে তা নতুন ওষুধ তৈরিতে বিজ্ঞানীদের সহায়তা করবে।

৬৯ বছর বয়সী ড. লেফকোইজের জন্ম ১৯৪৩ সালের ১৫ এপ্রিল। তিনি ১৯৫৯ সালে ব্রুনক্স হাই স্কুল অব সায়েন্স থেকে পড়াশোনা করেন। এবং পরে ১৯৬২ সালে কলম্বিয়া কলেজ থেকে আর্টস বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেন। পড়তে ভালোবাসতেন লেফকোইজ। তাই তিনি আবার কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জন বিভাগ থেকে ১৯৬৬ সালে মাষ্টার্স পাশ করেন। পরে সেখানেই সহযোগী গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। বর্তমান সময়ে তিনি কাজ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড হিউজ মেডিকেল ইনস্টিটিউটে।

অন্যদিকে ১৯৮০ সালে রিসেপ্টর নিয়ে তার গবেষণায় যোগ দেন ৫৭ বছর বয়সী ড. কবিলকা। কবিলকা স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিনে কাজ করছেন। কবিলকার জন্ম ১৯৫৫ সালে। তিনি ম্যানিসোটা ডুলুথ মিনেসোটা ডুলোথ্ ইউনিভার্সিটি থেকে বায়োলজি এবং ক্যামিস্ট্রিতে স্নাতক এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে।

নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার পর তাত্ক্ষণিক প্রক্রিয়ায় লেফকোইজ বলেন, ‘আমি খুবই আবেগাপ্লুত। এ খবর একই সঙ্গে ধাক্কা ও বিস্ময়। ’

চিকিৎসায় গার্ডন ও ইয়ামানাকা:

nobel-Medicineচিকিৎসাশাস্ত্রে স্টেম সেল নিয়ে গবেষণা করে এবছর নোবেল পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জন গার্ডন এবং জাপানের সিনইয়া ইয়ামানাকা।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গার্ডন ইনস্টিটিউটের গবেষক গার্ডন ও জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়ামানাকার গবেষণা বলছে, প্রাণীদেহের পরিণত যেকোনো কোষকে স্টেম সেলে রূপান্তর করা যায়। তার মানে, দুর্ঘটনা বা রোগে ক্ষতিগ্রস্ত কোষ প্রতিস্থাপনের জন্য একদিন হয়তো এভাবে তৈরি স্টেম সেল ব্যবহার করা যাবে।

স্টেম সেল থেকে দেহের রক্ত, ত্বক, পেশি, হাড়সহ সবকিছুরই সৃষ্টি। স্টেম সেলই পরিণত হয়ে শরীরের এসব উপাদান গঠন করে। কিন্তু উল্টোটা হওয়া সম্ভব ছিল না—এমনটাই ভাবতেন বিজ্ঞানীরা। অর্থাৎ পরিণত কোষকে পুনরায় স্টেম সেলে রূপান্তর সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীদের এই ধারণাই ভুল প্রমাণ করেছেন গার্ডন ও ইয়ামানাকা।

কোষের বিশেষায়ণ প্রক্রিয়া পাল্টে দেওয়ার বিষয়ে গার্ডনের আবিষ্কারটি ৫০ বছর আগে ১৯৬২ সালেই। তিনি ব্যাঙের ক্ষুদ্রান্তের পরিণত কোষের নিউক্লিয়াস নিয়ে অপরিণত ডিম্বাণুতে প্রতিস্থাপন করেন। এরপর ওই পরিবর্তিত ডিম্বাণু থেকে একটি স্বাভাবিক ব্যাঙাচির জন্ম হয়। নতুন একটি ব্যাঙের সব ধরনের কোষ সৃষ্টির জন্য যেসব তথ্য দরকার, পরিণত কোষে এর সবই থেকে যায়।

গার্ডনের ওই কাজের চার দশকের বেশি সময় পর ২০০৬ সালে জাপানি গবেষক ইয়ামানাকা ইঁদুরের পরিণত কোষে অল্প কয়েকটি জিন সন্নেবেশ করে দেখান, কীভাবে সেগুলো স্টেম সেলে রূপান্তর করা যায়।

সাহিত্যে চাইনিজ লেখক মো ইয়ান:

nobel-Literature২০১২ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন চাইনিজ গল্পকার ও ঔপন্যাসিক মো ইয়ান। চাইনিজ এ লেখক ১৯৫৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি চীনের শানডং রাজ্যে গাওমি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চাইনিজ লেখকদের মধ্যে জনপ্রিয়তম একজন। তার লেখালেখিতে সামাজিক বর্ণনা প্রাধান্য পায়। লু শান এর রাজনৈতিক সমালোচনা দিয়ে তিনি দারুণভাবে প্রভাবিত। পাশাপাশি তিনি গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের জাদুবাস্তবতায় প্রভাবিত। মো ইয়ান তার সাহিত্যিক নাম, তার আসল নাম গুয়ান মোয়ে। প্রথম উপন্যাস লেখার সময় তিনি মো ইয়ান নামটি নেন যার অর্থ `কথা বলো না`।

১৯৮১ সালে লেখালেখি শুরু করেন মু ইয়ান। সেবছরই তার প্রথম উপন্যাস `ফলিং রেইন অন অ্যা স্প্রিং নাইট` প্রকাশিত হয়। তার বহুল আলোচিত বই `রেড সরগাম` চাইনিজ ভাষায় প্রকাশিত হয় ১৯৮৭ সালে। এই বইটি কাহিনী নিয়ে পরবর্তীতে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। মো ইয়ানের সর্বশেষ উপন্যাস ‘লাইফ অ্যান্ড ডেথ আর ওয়ারিং মি আউড’ প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালে।

নোবেল পুরস্কার পাওয়ার আগে তিনি ২০০৬ সালে ফুকুওকা এশিয়ান কালচার প্রাইজ, ২০০৯ সালে নিউম্যান প্রাইজ ফর চাইনিজ লিটারেচার এবং ২০১১ সালে মাও দুন লিটারেচার প্রাইজ জিতেন। মো ইয়ান ২০০৭ সালে ম্যান এশিয়ান লিটারারি প্রাইজের মনোনয়নপ্রাপ্তদের তালিকায় ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১২
সম্পাদনা: শেরিফ আল সায়ার, বিভাগীয় সম্পাদক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।