ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

সাপুরেদের অত্যাচারে অতিষ্ট জাবির ভর্তিচ্ছুরা

ওয়ালিউল্লাহ, জাবি প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:০৫, অক্টোবর ১৮, ২০১২
সাপুরেদের অত্যাচারে অতিষ্ট জাবির ভর্তিচ্ছুরা

জাবি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাপুরেদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন।

প্রায় প্রতিদিনই সাপুরেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসা ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা আদায় করছে।

তাদের অত্যাচার থেকে রেহাই পাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।

টাকা না দিলে অনেক সময় তারা কাপড়-চোপর ও বই-খাতা ধরে টানাটানি শুরু করে দেয় এমন কি মাঝে মাঝে গালাগাল করতেও দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ও মানবিক অনুষদের সামনে, ক্যাফেটরিয়া চত্বরে, পুরাতন কলা ভবনের সামনে, বিভিন্ন হল ও বটতলা এলাকায় নারী সাপুরেরা একটি ছোট বক্স নিয়ে সাপের ভয় দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে  টাকা নিচ্ছে।

টাকা না দিলে তারা ভর্তিচ্ছুদের লাঞ্ছিত করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত আনসার ও গার্ডদের সামনে এ ঘটনা ঘটলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব কাছে সাভার বেদেপল্লী হওয়ায় সহজেই তারা ক্যাম্পাসে আসতে পারে। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষার সময় ক্যাম্পাসে সাধারণ মানুষের ভিড় হওয়ায় এই সময়টা তাদের জন্য মৌসুমি আয়ের সময়ে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছরই ভর্তি পরীক্ষার সময় নারী সাপুরেরা ক্যাম্পাসে ভিড় করে এবং শিক্ষার্থীদের কাছে টাকা আদায় করে।

সাভারের বেদে পল্লী থেকে আগত এক সাপুরে জানায়, আগে সাপ বিক্রি করে এবং সাপের খেলা দেখিয়ে তাদের সংসার চলত। কিন্তু বর্তমানে সাপ খুব একটা বিক্রি হয় না।

এছাড়া সাধারণ মানুষ আর সাপের খেলাও দেখে না। তাই তাদের আয়ের রাস্তা অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সংসারে কোনো অনুষ্ঠান করতে গেলে সাহায্যের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে হয়।

তিনি আরো জানান, জোরপূর্বক করো কাছে টাকা নেওয়া হয় না। তবে একটু জোর না করলে কেউ টাকাও দিতে চায় না। তাই একটু জোর করতে হয়। তবে তারা ভর্তিচ্ছুদের থেকে অভিভাবকদের কাছেই বেশী যান।    

সাপুরেদের অত্যাচারে শিকার এক ভর্তিচ্ছু বলেন, সাপুরেরা আমার কাছে টাকা নিতে এসেছিল। আমি তাড়াতাড়ি টাকা দিয়ে বিদায় করেছি। তাদের সম্পর্কে আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল। দেরি করলেই তারা আমার গায়ে হাত দেবে অথবা কাপড় ধরে টানাটানি করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আগত ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকরা সাপুরেদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে না দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।  

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অনেক মানুষ হওয়ায় টুকিটাকি ঘটনা ঘটছে। তারপরও ক্যাম্পাসে আগতদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য প্রশাসন সচেষ্ট রয়েছে এবং কাজ করে যাচ্ছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে ১৩ অক্টোবর থেকে এবং শেষ হবে ২০ অক্টোবর। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদ ও দুইটি ইনষ্টিটিউটে মোট আবেদনপত্র জমা পড়েছে ২ লাখ ২০ হাজার ৯২২টি।

গতবারের তুলনায় এ বছর প্রায় ৫৩ হাজার বেশি আবেদন জমা পড়েছে। এ বছর বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে ১ হাজার ৭৯৭জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, খেলোয়াড়, সাংস্কৃতিক, উপজাতি, প্রতিবন্ধী কোটায় ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সিট রয়েছে ২২৯টি।

বাংলাদেশ সময় : ১১৫৫ ঘন্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১২
ওয়ালিউল্লাহ/সম্পাদনা : বেনু সূত্রধর, নিউজরুম এডিটর, সুকুমার সরকার, কো-অর্ডিনেশন এডিটর  kumar.sarkerbd@gmail.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।