ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২০ মে ২০২৫, ২২ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

স্বপ্নযাত্রা ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৪০, অক্টোবর ৩০, ২০১২
ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন থাকে। কিন্তু স্বপ্নের পথে পা বাড়ালেই পাওয়া যাবে হাজারো প্রতিবন্ধকতা।

যে এসব প্রতিবন্ধকতা টপকে এগিয়ে যাবে সে হবে সফলতম ব্যক্তি। মানুষের জীবন মৃত্যুর দিকেই এগিয়ে যায়। তারপরও মানুষের জীবন নানা চাওয়া পাওয়ায় ভরপুর হয়ে ওঠে।

মানুষের ভাগ্য তাদের হাতে নেই। কিন্তু নিজের ভাগ্যকে পরিবর্তন করার সমস্ত যোগ্যতা একমাত্র মানুষেরই আছে। তেমনই সাহসী কয়েকজন মানুষকে নিয়ে স্বপ্নযাত্রার এবারের আয়োজন।

khadijahখাদিজার হার্ভার্ডে পৌছে যাওয়া!  
খাদিজা উইলিয়ামস। ছোট্টবেলা থেকেই মেধাবী শিক্ষার্থী। স্কুলের এক শিক্ষক তার সম্পর্কে বলেছিল, তুমি তো ঈশ্বরের বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে পৃথিবীতে এসেছ।

তার কারণও ছিল বটে। নবম শ্রেণী পর্যন্ত খাদিজা প্রতিটি বিষয়ে গড়ে ৯৯ ভাগ নম্বর পেত। এতো মেধাবী শিক্ষার্থীর কদর বুঝতে পেরেছিল তার শিক্ষকরাও।

অথচ খাদিজার জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলোর গল্প কেউ জানতো না। সে মেধাবী। পড়াশোনায় ভালো করছে। কিন্তু প্রতিদিন তার জীবনটা কেমন যায়? এই খোঁজ তো কেউ রাখে না। খাদিজার কোনো ঘর ছিল না। সে থাকতো রাস্তায় কিংবা ফুটপাতে অথবা কোনোর পার্কের বেঞ্চে। প্রতিটি দিন তার যুদ্ধের। যে যুদ্ধ সে সবার আড়ালেই করেছে। তবে হাই স্কুলে পড়ার সময় খাদিজার অর্থ সংকট দেখা দিল। সে তখন তার স্কুলের কাউন্সিলরদের বিষয়টি জানাতে বাধ্য হলো। তারা খাদিজার গল্প শুনে রীতিমত অবাক হয়ে গেল।

সবাই তখন খাদিজার মেধা ও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখে সমস্ত খরচ ফ্রি করে দিল। খাদিজাকে মাস শেষে বৃত্তির কিছু অর্থও দেওয়া হতো কলেজ থেকে।

খাদিজার বয়স তখন ১৮ বছর। সবাইকে বিস্মিত করে খাদিজা সুযোগ পেল বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কারণও ছিল। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির দরখাস্তে খাদিজা নিজের সম্পর্কে লিখতে গিয়ে স্কুল ও কলেজ সময়ের গৃহহীন গল্পটি তুলে ধরলো। সঙ্গে সঙ্গে মিডিয়াতে প্রকাশ পেল খাদিজার যুদ্ধের গল্প। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ এ মেয়ের যুদ্ধের গল্প শুনে মুগ্ধ হলো। খাদিজাকে মৌখিক পরীক্ষার জন্যও ডাকা হলো।

সেখানে তাকে হার্ভার্ডে পড়তে দেওয়ার কথা জানানো হলে সে বলে, আপনারা যদি আমাকে পড়ার সুযোগ দেন তবে আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান হবো। তবে আমি মেধার যোগ্যতা দিয়ে পড়তে চাই। আমার থাকার কোনো জায়গা নেই,  সেজন্যই হার্ভার্ডে সুযোগ পাচ্ছি। এ বিষয়টি গুরুত্ব পেলে আমি এখানে পড়বো না।

হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ গুরুত্বের সঙ্গে খাদিজা উইলিয়ামসকে তার যোগ্যতা দেখে ভর্তি করালো। সেখানে হাজারো শিক্ষার্থীদের সামনে অসাধারণ এক দৃষ্টান্ত খাদিজা উইলিয়ামস।

moraleজেরেমির যুদ্ধ
পুরো নাম জেরেমি সিসিলে কাইরা। তার জন্য হাই স্কুলে পড়াশোনা করা ছিল সবচেয়ে কঠিন কাজের একটি। অটিজমে আক্রান্ত জেরেমি কথা বলতে পারতো না। কিন্তু সব বাধা টপকে হাইস্কুল ডিপ্লোমা নিতে ছিল বদ্ধ পরিকর।

স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ জেরেমির জন্য বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু জেরেমি সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্লাস করতে চায়। সেজন্য পরিচালনা পর্ষদ কিছুটা বিপাকে পড়লেও পরে রাজি হন। জেরেমির জন্য যে কোনো অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা দেওয়া হতো না। জেরেমি অ্যাসাইনমেন্ট করতে পারলেই হবে। কিন্তু জেদী জেরেমি তার ক্লাসের অন্য বন্ধুদের সঙ্গেই অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিত।

অটিজমে আক্রান্ত জেরেমি কথা বলার এমনকি শুনতে পারার শক্তিও হারায়। যে কারণে নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে মনোযোগ দিতে অনেক সমস্যা হতো। জেরেমি এ বিষয়টি বুঝতো। সে আপ্রাণ চেষ্টা করতো নিজের মনোযোগকে নির্দিষ্ট জায়গায় ধরে রাখার। এ সম্পর্কে জেরেমি বলেছিল, আমি যদি সামান্য পরিমাণ মনোযোগ ধরে রাখতে না পারি, তবে বুঝতে হবে আমি এক ‍আজব পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছি।

জেরেমির সাহস দেখে তার শিক্ষক-অভিভাবকরা অবাক হতো। তার আপ্রাণ চেষ্টা ও অধ্যাবসায় ছিল দেখার মতো। অবশেষে যুদ্ধ জয় করলো জেরেমি। ক্যালিফোর্নিয়া হাই স্কুল থেকে তিন দশমিক পাঁচ জিপিএ নিয়ে পাশ করলো। তার পড়াশোনার জীবন নিয়ে তাকে একটা বক্তৃতা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ।

জেরেমি ভয়েস অ্যাসিসটেন্ট টেকনোলজি ব্যবহার করে বক্তৃতা দেয়। যেখানে সে বলে, পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর স্বভাব হলো মানুষের ইচ্ছাশক্তি। যে শক্তি দিয়ে প্রতিটি মানুষ বিশ্বজয় করার ক্ষমতা রাখে।

lost-girlsxহারিয়ে যাওয়া শিশু রিয়াক
ইথিউপিয়াতে দীর্ঘসময় ধরে চলেছে গৃহযুদ্ধ। সত্তরের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে নব্বয়ে এসে শেষ হয়েছে গৃহযুদ্ধ। ততদিনে রক্তাক্ত হয়েছে হাজার ‍হাজার প্রাণ। নষ্ট হয়েছে হাজারো শিশুর স্বপ্ন। তেমনই একজন আদভেই রিয়াক। মাত্র ছয় বছর বয়সে আদভেই রিয়াকের পুরো পরিবার গৃহযুদ্ধে নিহত হয়। হাজারো আশ্রয়হীন মানুষের সঙ্গে জীবন চলতে থাকে রিয়াকের। রিয়াকের মতো শিশুদের বলা হতো ‘লস্ট চিল্ডড্রেন অব সুডান’। আশ্রয়হীনভাবেই বিভিন্ন ক্যাম্পে রিয়াকের কেটেছে দীর্ঘ সময়।

যুক্তরাষ্ট্র ২০০০ সালে ৮৯ জন শিশুকে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের অভিবাসন করা হয়। তখন বেলমন্ট পরিবার রিয়াককে নিয়ে যান। তারা তাকে স্কুলে ভর্তি করান। রিয়াক তখন ঠিক মতো কোনো ভাষাও বলতে পারে না। ভাষা শিক্ষার জন্য বাসায় শিক্ষকও নিয়োগ করলো বেলমন্ট। বছর দু-একের মধ্যেই ইংরেজি ভাষা আয়ত্ত করে ফেলল। এরপর দেখা গেল ক্লাসের সবাইকে পেছনে ফেলে ভালো ফলাফল করা শুরু করেছে রিয়াক।

পড়াশোনায় মেধাবী হওয়ায় ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ব্র্যানডিস ইউনিভার্সিটি তাকে স্কলারশিপ দিয়ে পড়াশোনার সুযোগ করে দেয়। রিয়াক সেখান থেকে ২০০৭ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে। ভালো ফলাফল করার জন্য রিয়াককে লুইস ব্র্যানডিস স্কলার সম্মান দেওয়া হয়।

বর্তমান সময়ে রিয়াক সামাজিক কর্মকান্ড নিয়ে কাজ করছেন। মানবতাবিরোধী শক্তির বিপক্ষে রিয়াক বর্তমানে সোচ্চারভাবে কাজ করছেন। শুধু তাই নয়, নারী অধিকার এবং তরুণ প্রজন্মদের জন্য রিয়াক বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের কাজ করে যাচ্ছেন।    

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১২
সম্পাদনা: শেরিফ আল সায়ার, বিভাগীয় সম্পাদক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।