ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২০ মে ২০২৫, ২২ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

সুইজারল্যান্ডসহ ইউরোপে ইমিগ্র্যান্টদের জীবনযুদ্ধের চিত্র অভিন্ন

তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো চিফ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:০৪, অক্টোবর ৩০, ২০১২
সুইজারল্যান্ডসহ ইউরোপে ইমিগ্র্যান্টদের জীবনযুদ্ধের চিত্র অভিন্ন

সুইজারল্যান্ড থেকে ফিরে: চট্টগ্রামের সন্তান মহসিন দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে বসবাস করছেন সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়। জেনেভা শহরে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি সুপরিচিতি।



ব্যবসায়ী রহমান, নজরুল ইসলাম, নিজামসহ আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী রয়েছেন জেনেভায় দীর্ঘদিন ধরে। তারা নিজেদের ব্যবসার পাশাপাশি বাংলাদেশি প্রবাসীদের নানা সমস্যায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসেন।
 
সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশি প্রবাসীর সংখ্যা ৬ হাজারের বেশি নয়। এরমধ্যে জেনেভায় রয়েছেন মাত্র ৭শ জন। অভিবাসী আইন কড়াকড়ি হওয়ায় অনেকে এখান থেকে ইউরোপের অন্যান্য দেশে চলে যেতে বাধ্য হন।

পুরো ইউরোপে ইমিগ্র্যান্টদের জীবনযুদ্ধের চিত্র এক ও অভিন্ন। ইউরোপের এসব দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়সহ বিভিন্ন অজুহাতে বসবাসের আবেদনে প্রাথমিকভাবে বিবেচিত হলেই বৈধ কাজ মিলে। সুইজারল্যান্ডে ন্যূনতম বেতন শুরু হয় সাড়ে তিন হাজার ফ্রাঁয় (স্থানীয় মুদ্রা)। যা বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। এছাড়া সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। সুইডেন, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডসসহ বিভিন্ন দেশে আইনের সামান্য তারতম্য থাকলেও একইভাবে বৈধ কাজ নিতে হলে সে দেশের সরকারের প্রাথমিক অনুমতি প্রয়োজন।

এরপর শুরু হয় স্থায়ী বসবাসের অনুমতির প্রক্রিয়া। এসব আবেদন বাতিল হলে পুনরায় আপিল করার সুযোগ থাকে।

সুইডেনের প্রবাসী মোতাহের হোসেন বাদল বাংলানিউজকে জানান, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে স্থায়ী বসবাসের প্রক্রিয়া বিগত কয়েকবছর আগেও অনেক সহজ ছিল। তবে দিন যত গড়িয়ে যাচ্ছে ততই এ প্রক্রিয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।

প্যারিসে বসবাসরত চট্টগ্রামের চন্দনাইশের প্রবাসী নয়ন বড়ুয়ার আবেদন সম্প্রতি বাতিল হয়েছে। তিনি হতাশকণ্ঠে বলেন, “যা বেকার ভাতা পেতাম তা-ও বন্ধ হয়ে যাবে। তারপরও পুনরায় আপিল করে দেখব। ”

তবে প্রবাসী সাংবাদিক দেবেশ বড়ুয়া আশার কথা জানিয়ে বলেন, “হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। এখানে আপিল করার সুযোগ রয়েছে। ”
 
তিনি তথ্য দিয়ে জানান, যারা স্থায়ী বসবাসের এখনো অনুমতি পাননি তারা বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর যে কোনো দেশে যাতায়াত করতে পারবেন।

কক্সবাজারের রামুর সুনীল বড়ুয়া প্যারিসে আছেন দীর্ঘ ৬ বছর। বৃদ্ধ মাকে দেখার জন্য তিনি সম্প্রতি ব্যাংকক এসে মায়ের সঙ্গে দেখা করেন।

সুনীল বড়ুয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘মাকে দেখিনি অনেক দিন। তাই মাকে ব্যাংকক আসতে বলি। এদিকে আমিও ব্যাংকক ছুটে যাই। ’
 
এদিকে, সুইজারল্যান্ডের বাংলাদেশ মিশনের বিরুদ্ধে প্রবাসী বাংলাদেশিরা নানা অভিযোগ উত্থাপন করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রবাসী বাংলানিউজকে বলেন, সুইজারল্যান্ডে স্থায়ী বসবাসের জন্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকার পরও অনেকে বাংলাদেশ দূতাবাসের কিছু কর্মকর্তার অসহযোগিতায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে পাসপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ ওঠে হরহামেশা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি আলিমুজ্জমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বলেন, “মাত্র এক মাস হয়েছে আমি এখানে এসেছি। ”

তবে এ রকম অভিযোগ তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।  

এদিকে, চিটাগাং চেম্বার বিজনেস ডেলিগেশন টিমের নেতৃত্বদানকারী ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এমএ লতিফের কাছেও বাংলাদেশি প্রবাসীরা মিশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। সংসদ সদস্য এমএ লতিফ প্রবাসীদের আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করার জন্যে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “প্রবাসীদের রেমিটেন্সে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকে, আপনাদের বেতন ও আমাদের ভাতা হয়। ”  

শুধু সুইজারল্যান্ডে নয়, ইউরোপের নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, সুইডেন ও জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের রয়েছে এ ধরনের অনেক অভিযোগ। ফ্রান্সের প্যারিস বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রবাসীরা প্রয়োজনীয় কাগজ ফটোকপি করার সুবিধাটাও পান না। এ অবস্থায় দূতাবাসে গিয়ে ফটোকপির প্রয়োজন হলে তাদের কয়েক মাইল দূরে যেতে হয়।

প্রবাসীদের কাছ থেকে এ ধরনের অভিযোগ জানতে পেরে সংসদ সদস্য এমএ লতিফ প্যারিস দূতাবাসে তা‍ৎক্ষণিক একটি ফটোকপিয়ারের ব্যবস্থা করেন যাতে প্রবাসীরা দ্রুত ফটোকপি করাতে পারেন।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়, সবগুলো দূতাবাসে কি আমাদের মন্ত্রী-এমপিসাহেবরা গিয়ে এভাবে ফটোকপিয়ার বা অন্যান্য সেবা ব্যবস্থা স্থাপন করে আসবেন! নাকি আমাদের দূতবাস কর্মীরা নিজে থেকে এ কাজে তৎপর হবেন?

বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, ৩০ অক্টোবর, ২০১২
টিসি/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।