ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২০ মে ২০২৫, ২২ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

মানবীয় সমস্যার সমাধানে নৃবিজ্ঞান পাঠ

একেএম মাজহারুল ইসলাম, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৪৫, নভেম্বর ৪, ২০১২
মানবীয় সমস্যার সমাধানে  নৃবিজ্ঞান পাঠ

ঢাকা: নৃবিজ্ঞান মানুষের (Homo Sapiens) অতীত ও বর্তমান সম্পর্কিত একটি অধ্যয়ন। মানুষের সমাজ ও সংস্কৃতির জটিলতা অনুধাবন ও বিভিন্ন সমাজের মানুষের জীবনযাপন পাঠের প্রয়োজনে নৃবিজ্ঞান হলো সামাজিক, জৈবিক, ভৌত ও মানবিক বিজ্ঞানের সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানকাণ্ড।

নৃবৈজ্ঞানিক জ্ঞানের আলোকে বিভিন্ন মানবীয় সমস্যার সমাধান খুঁজে বেড়ানোই নৃবিজ্ঞানীদের মূল লক্ষ্য।

নৃবিজ্ঞানের রয়েছে পাঁচটি মৌলিক শাখা। এগুলো হচ্ছে-সামাজিক নৃবিজ্ঞান, জৈবিক নৃবিজ্ঞান, প্রত্নতাত্ত্বিক নৃবিজ্ঞান, ভাষাতাত্তিক নৃবিজ্ঞান ও প্রয়োগিক নৃবিজ্ঞান।

সামাজিক নৃবিজ্ঞান
সামাজিক নৃবিজ্ঞান বিভিন্ন সংস্কৃতির সামাজিক কর্মকান্ডের ধরণ ও চর্চা নিয়ে অধ্যয়ন করে। মানুষ কি করে একটি নির্দিষ্ট ভৌগলিক সীমানায় বাস করে নিজেকে সংগঠিত ও পরিচালিত করে তা অনুসন্ধান করে এবং কি ভাবে সামাজিক প্রপঞ্চসমূহের ভাব ও ব্যাখ্যা নিরূপিত হয় তা নিয়ে কাজ করে এ বিজ্ঞান। বিভিন্ন সমাজের অভ্যন্তরে ও এক সমাজের সাথে অন্য সমাজের মিল ও অমিল, অসমতা, নারী ও পুরুষের মিথষ্ক্রিয়া, শ্রেণী, জাতীয়তা, জেন্ডার, জ্ঞাতি সম্পর্ক, পরিবার ও বিবাহ ইত্যাদি সামাজিক নৃবিজ্ঞানের মূল অধ্যয়নের জায়গা।
 
সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে অংশগ্রহণমূলক ক্ষেত্রানুসন্ধানের (Participant Observation) ব্যবহার সামাজিক নৃবিজ্ঞানের প্রধানতম ঐতিহ্য। স্বাস্থ্য, প্রতিবেশ, শিক্ষা, কৃষি, উন্নয়ন ও সামাজিক পরিবর্তনের বিভিন্ন বিষয়ে সামাজিক নৃবিজ্ঞানীরা গবেষণা ও কাজকর্ম করে থাকেন।

বাংলাদেশে বিগত আড়াই দশক ধরে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে  বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মূলতঃ সামাজিক নৃবিজ্ঞানেরই অধ্যয়ন হয়ে থাকে।

জৈবিক নৃবিজ্ঞান
মানুষ কি ভাবে বৈচিত্র্যময় প্রতিবেশে  নিজেদের খাপ খাওয়াতে চেষ্টা করে এবং সেই প্রচেষ্টায় সামজিক ও শারীরিক প্রক্রিয়াগুলো কি কি, মানুষের উৎপত্তি, বিকাশ, বিবর্তন ও বৈচিত্র্য নৃবিজ্ঞানের যে শাখায় আলোচিত হয়, তাই জৈবিক নৃবিজ্ঞান। মানুষের এই সকল মৌলিক বিষয় অনুধাবন করতে জৈবিক নৃবিজ্ঞানীরা প্রাইমেট, ফসিল, প্রাক ইতিহাস, মানব জীববিদ্যা ও জীনতত্ত্ব বিষয়ে পঠন-পাঠন ও গবেষণা করে থাকে।

প্রত্নতাত্ত্বিক নৃবিজ্ঞান
মানুষের ব্যবহৃত ভৌত উপাদান ও যন্ত্রপাতি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে মানুষ ও এর সংস্কৃতির আদি ইতিহাস উদঘাটন করাই প্রত্নতাত্ত্বিক নৃবিজ্ঞানের মূল কাজ। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা সাধারনত মানুষের ব্যবহৃত মৃৎশিল্প, পাথরের তৈরী যন্ত্রপাতি, হাড়, কাঠামোর ধ্বংসাবশেষ প্রভৃতির মাধ্যমে মানব ইতিহাসের রহস্য উৎঘাটন করে থাকেন।

ভাষাতাত্ত্বিক নৃবিজ্ঞান
ভাষা কি ভাবে সমাজ জীবনকে প্রতিফলিত ও প্রভাবিত করে সে সম্পর্কিত পাঠ। যোগাযোগের ধরণ, সামাজিক পরিচয়, সমাজের বিশ্বাস, মূল্যবোধ ইত্যাদি নির্ধারণে ভাষার চর্চা ও প্রভাবকে ভাষাতাত্ত্বিক নৃবিজ্ঞান নিবিড়ভাবে অনুসন্ধান করে থাকে।

প্রয়োগিক নৃবিজ্ঞান
নৃবিজ্ঞানের তত্ত্ব, কৌশল ও মাঠ গবেষণায় প্রাপ্ত  ফলাফল দিয়ে মানুষের সমস্যা সমাধানের পাঠ নৃবিজ্ঞানের  যে শাখার বিষয়বস্তু সেটি হল প্রায়োগিক নৃবিজ্ঞান। প্রয়োগিক নৃবিজ্ঞানীরা তাদের অর্জিত মাঠ গবেষণা কৌশল ও আন্তঃসাংস্কৃতিক জটিলতা অনুধাবনের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীব্যাপি বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করছে। ব্যবসা, সরকার, স্বাস্থ্য, মানবসেবা প্রভৃতি বিষয়ে প্রয়োগিক নৃবিজ্ঞানীরা কাজ করে থাকে।

কেন পড়বেন নৃবিজ্ঞান?
নৃবিজ্ঞান মানুষের পূর্ণাঙ্গ  পাঠদানের পাশাপাশি বাস্তবধর্মী  প্রয়োগিক বিষয়ে পাঠদান করে  থাকে। বিশেষায়ণের এই যুগে নৃবিজ্ঞানের ব্যাপকভিত্তিক  পাঠ বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে প্রতিযোগিতামূলক চাকুরি বাজার তৈরী করেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ যাদের রয়েছে বহু রাষ্ট্রিক ও বহু সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড তারা সমাজ সংশ্লিষ্ট কর্মসূচি প্রনয়ন ও বিশ্লেষণে নৃবিজ্ঞানীদের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে থাকেন।

নৃবিজ্ঞানীদের কাজের ক্ষেত্র
নৃবিজ্ঞানী হিসেবে সমাজের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে কাজ  করার সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক এবং  বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, এনজিও, দাতা ও উন্নয়ন সংস্থায় প্রায়োগিক নৃবিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও নৃবিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে বিদেশে শান্তিরক্ষা মিশনে, বিপণন সংস্থা, তথ্যচিত্র নির্মাণে, জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে, বিভিন্ন সরকারি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, পরিবেশ ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

নৃবিজ্ঞান পড়ার সুযোগ
দেশে নৃবিজ্ঞান পড়ার সুযোগ  রয়েছে অনেকগুলো পাবলিক ও  বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে।   এর মধ্যে রয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্ডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়।

anopology

 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, শাবিপ্রবি

 

 

বাংলাদেশ সময়: ২০৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১২
এআই/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।