ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২০ মে ২০২৫, ২২ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

কন্যাকে এসিডে হত্যার পর পাকিস্তানি মা

‘এভাবে মৃত্যু তার ভাগ্যের লিখন!’

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৩৮, নভেম্বর ৬, ২০১২
‘এভাবে মৃত্যু তার ভাগ্যের লিখন!’

এভাবে এসিড দগ্ধ হয়ে মরাটা ছিল তার ভাগ্যের লিখন।

বেগানা পুরুষের দিকে শুধুমাত্র তাকানোর অপরাধে নিজ কন্যাকে এসিডে ঝলসে হত্যার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এভাবেই বলেছেন পাকিস্তানি মা জাহিন।

পাকিস্তান শাসিত কাশ্মিরের এই জঙ্গি মা ও তার স্বামী জাফরকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কোটলির দূরবর্তী অঞ্চলের এ ঘটনা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে।

গত ২৯ অক্টোবর নিজের গর্ভজাত সন্তানের গায়ে এসিড ঢেলে দেওয়ার নির্মম ঘটনা ঘটান মা নামের কলঙ্ক জাহিন। এরপর দু’দিন নির্মম মরণ যন্ত্রণা ভোগ শেষে মারা যান ১৫ বছর বয়সী কিশোরী আনুশা।

পাকিস্তানের চরম কট্টর সমাজ ব্যবস্থায় পরিবারের মর্যাদা রক্ষায় এ ধরনের ‘অনার কিলিং’ অবশ্য গা সওয়া ব্যাপার। তবে পরিবারের অপছন্দের অথবা তথাকথিত নিচু জাতের পাত্রকে পছন্দ করে বিয়ের অপরাধে ভারত-পাকিস্তানের অতি রক্ষণশীল পরিবারগুলোয় পরিবারের ‘মান-মর্যাদা’ রক্ষার জন্য তথাকথিত ‘অনার কিলিংয়ের’ বর্বরোচিত অপকর্মগুলো সাধারণত ঘটায় ‘অপরাধী’ মেয়েদের বাপ-ভাই-চাচা বা জ্ঞাতিগোষ্ঠীর লোকজন। জন্মদাত্রী কোনো মা এ ধরনের নির্মমতায় বিশেষ করে এসিড দিয়ে পুড়িয়ে নিজের কন্যাকে হত্যার মত পৈশাচিক কাজ করেছেন বলে জানা নেই।
 
পাকিস্তানের হিউম্যান রাইট্‌স কমিশনের মতে, গত বছর তথাকথিত ‘পারিবারিক সম্মান’ রক্ষার এই প্রাগৈতিহাসিক নিয়মের বলি হয়েছেন ৯৪৩ জন নারী। এই সংখ্যা ২০১০ সালের চেয়ে ১০০ জন বেশি। এদের মধ্যে মাত্র ২০জন মৃত্যুর আগে চিকি‍ৎসা সেবা পেয়েছেন। আর মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্ট মোতাবেক, ‍অনার কিলিংয়ের প্রকৃত শিকারের সংখ্যা আরও ‍অনেক বেশি। কারণ, অনেক ঘটনাই আড়ালে থেকে যায়, ধামাচাপা দেওয়া হয়। PAKI-MOTHER--Father

পুলিশের জিম্মায় থাকা জাফর জানান, এসিড দিয়ে ঝলসে দেওয়ার আগে মেয়েকে তারা বারবার সাবধান করেছেন ছেলেদের দিকে না তাকাতে।

‘ডাইনি’ মা বর্ণনা করেছেন তার জন্ম দেওয়া সন্তান কিভাবে তার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। কিন্তু গলেনি পাষাণি মায়ের হৃদয়।

সরকারি কর্মকর্তারা জানান, ধারণা করা হচ্ছে মেয়েটির সঙ্গে একটি ছেলের সম্পর্ক ছিল।

আনুশা’র পিতা জাফর জানিয়েছেন, বড় কন্যার আচরণের সূত্রে এমনিতেই তাদের পরিবার সামাজিক সমালোচনার মুখে ছিল। এরপর ঘটে আনুশার ঘটনা। ঘটনার দিন তার মেয়ে মোটরসাইকেলে করে আসা একটি ছেলের দিকে দু’বার তাকিয়েছিল। এসময় তিনি তাকে বলেন, কাজটা ঠিক হয়নি।

“জবাবে মেয়ে বলে, আমি এটা ইচ্ছাকৃতভাবে করিনি। আমি এ ধরনের কাজ আর কখনো করবো না। কিন্তু ততক্ষণে আমি এসিড ঢেলে দিয়েছি। আর এভাবে মৃত্যুটা তার ভাগ্যের লিখন ছিল,” বলেন আনুশা’র মা জাহিন।

উল্লেখ্য, মেয়েকে এসিডে ঝলসে দেওয়ার সময়ে জাহিনের নিজের একটি হাতও মারাত্মকভাবে ঝলসে যায়।
 
জানা গেছে, ওই ঘটনার পর আনুশাকে বাড়িতেই রেখে দেন তার বাবা-মা। একেবারে চরম অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকি‍ৎসক জানান, খুবই সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়। তার শরীরের প্রায় ৭০ ভাগ ঝলসানো ছিল এসিডে।

জানা গেছে, গায়ে এসিড ঢেলে দেওয়ার আগে আনুশাকে ঘরের ভেতর নিয়ে তার বাবা প্রচণ্ড মারপিট করে। এসময়ে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চায় সে। কিন্তু এরই এক পর্যায়ে তার শরীরের ঢেলে দেওয়া হয় তরল আগুন।

পুলিশ জানিয়েছে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম।

তবে পাকিস্তানের অন্যান্য অংশে এ ধরনের ঘটনা হরদম ঘটে থাকে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের মার্চে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মির সরকার এসিড আক্রমণকে মারাত্মক অপরাধ ঘোষণা করে এর শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান অনুমোদন করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৯ ঘণ্টা, ০৬ নভেম্বর, ২০১২
একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।