যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামার দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার দিন’দুয়েকের মাথায় নারী কেলেঙ্কারির দায় মাথায় নিয়ে সিআইএ প্রধান জেনারেল ডেভিড পেট্রাউসের পদত্যাগের ঘটনা এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রসহ দুনিয়াজুড়ে তোলপাড় তুলেছে। অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন পাউলা সম্পর্কে জানতে।
পাউলা কথন
দুনিযায় যে কোনো পুরুষের সাফল্যের পেছনে কোনো না কোনো ফিমেল অর্থাৎ নারীর ভূমিকা থাকে—এই আপ্তবাক্যের বিপরীতে এটাও সত্য, দুনিয়ায় শীর্ষ পর্যায়ের পুরুষদের পতনের পেছনেও প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় কোনো না কোনো নারী জড়িত। এক্ষেত্রে ই-মেল সূত্রে জেনারেল পেট্রাউস পতনের পেছনের ফিমেলটা হচ্ছেন পাউলা। গোয়েন্দা (এফবিআই) রিপোর্টে জানা গেছে, ২০১১ সালে আফগানিস্তানে দায়িত্বপালনের সময়েই নিজের জীবনীকার পাউলা ব্রডওয়েলের সঙ্গে অবৈধ প্রণয়ে জড়িয়ে পড়েন পেট্রাউস।
‘একালের রাধা-কৃষ্ণ’ পাউলা আর পেট্রাউস দুজনের নামই পি আদ্যাক্ষর দিয়ে শুরু। আর দু’জনই বিবাহিত এবং সন্তান-সন্ততির জনক। পাউলার বয়স চল্লিশের কোঠায় আর জেনারেল পেট্রাউস ষাট পেরিয়েছেন মাত্র সেদিন (০৭ নভেম্বর)।
মার্কিন লেখক-গবেষক পাউলা ডিন ক্রাঞ্জ ব্রডওয়েল ১৯৭২ বা ১৯৭৩ সালে জন্ম নেন। ভেরনন লোয়েব নামে অপর এক লেখকের সঙ্গে যৌথভাবে লিখিত সদ্য পদত্যাগী সিআইএ চিফ জেনারেল ডেভিড পেট্রাউসের জীবনীভিত্তিক গ্রন্থ ‘অল ইন: দা এডুকেশন অব জেনারেল ডেভিড পেট্রাউস’ এর মাধ্যমে আলোচনায় আসেন পাউলা (এখন অবশ্য বোঝা যাচ্ছে, পেট্রাউসের সব শিক্ষাই সবার জন্য এমনকি তার নিজের জন্যও তেমন উপযোগী নয়)।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বইটি প্রকাশ পায়। ওই জানুয়ারি মাসেই ‘দ্য ডেইলি শো’ নামের এক টিভি অনুষ্ঠানে স্বামী স্কটসহ উপস্থিত হয়েছিলেন পাউলা। সেখানে আলাপচারিতায় টিভি উপস্থাপক জন স্টুয়ার্ট আর পাউলা দর্শকদের জানান, জেনারেল পেট্রাউস ব্যক্তিজীবনে কতটা নিষ্কলুষ আর নিষ্কলঙ্ক। এ নিয়ে তারা কৌতুকও করেন। পাউলা জেনারেল পেট্রাউসের সাক্ষাৎকার নেওয়াকালীন নানান ঘটনার বর্ণনা দেন, যাতে ফুটে ওঠে সিআইএ প্রধানের অসাধারণ ব্যক্তিত্ব আর দায়িত্বপরায়ণতার কথা।
বর্তমানে পেশায় লেখক-গবেষক হলেও পাউলা মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর রিজার্ভ ফোর্সের একজন মেজরও বটেন। তিনি মার্কিন সামরিক বাহিনীতে এর আগে চাকরিও করেছেন
পাউলার শৈশব কেটেছে নর্থ ডাকোটার বিসমার্ক শহরে। স্থানীয় সেঞ্চুরি হাইস্কুলে পড়াশোনা শেষে তিনি ওয়েস্ট পয়েন্টে অবস্থিত ইউনাইটেড স্টেট্স মিলিটারি একাডেমি থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন ১৯৯৫ সালে। এরপর ইউনিভার্সিটি অব ডেনভার-এর জোসেফ কর্বেল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ থেকে মাস্টার্স পাশ করেন ২০০৬ সালে। তিনি হার্ভার্ডের জন এফ কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্ট থেকে জনপ্রশাসন বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। টাফ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্য ফ্লেচার স্কুল অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসি’র অন্তর্গত জেবসেন সেন্টার ফর কাউন্টার টেররিজম স্টাডিজ এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরবর্তীতে কিংস কলেজ লন্ডনের ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার স্টাডিজ থেকে পিএইচডি অর্জন করেন।
তিনি নিউ ইয়র্ক টাইম্স এবং বোস্টন গ্লোব পত্রিকায় লেখালেখি করেছেন।
তার স্বামী স্কট ব্রডওয়েল পেশায় ইন্টারভেনশনাল রেডিওলজিস্ট। নর্থ ক্যারোলিনার শার্লটের বাসিন্দা এই দম্পতির দু’টি পুত্র সন্তান রয়েছে।
বিনা মেঘে বজ্রপাত!
চলতি নভেম্বরের ৯ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ জানায়, বেআইনিভাবে জেনারেল পেট্রাইসের ই-মেইল অ্যাড্রেসে ঢোকার চেষ্টার দায়ে পাউলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এফবিআই।
জানা গেছে, গত বসন্তেই এফবিআই জানতে পারে সিআইএ প্রধান জেনারেল পেট্রাউসের ই-মেল অ্যাড্রেস তিনি ব্যতীত অন্য কেউ ব্যবহার করছে। তবে বিষয়টি নিয়ে এফবিআই অতি সম্প্রতি জেনারেল পেট্রাউসের সঙ্গে কথা বলে। এতদিন তারা বিষয়টি নিয়ে অতি গোপনে তদন্ত চালিয়ে গেছে। তাতে প্রথমেদিকে তাদের ধারণা হয়, জেনারেলের ঘনিষ্ঠ কেউ তার ই-মেল ব্যবহার করছে। ধীরে ধীরে জানা যায়, এই ঘনিষ্ঠজনটি হচ্ছেন তার জীবনীকার পাউলা ব্রডওয়েল।
সম্পর্কটা বিবাহ বহির্ভূত, তবে শারীরিক নয়!
তবে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পাউলার সঙ্গে ডেভ-এর (সহকর্মীদের কাছে জেনারেল ডেভিড পেট্রাউস সংক্ষেপে ‘ডেভ’ নামে পরিচিত) বিবাহ বাহির্ভূত সম্পর্ক থাকলেও তা শারীরিক সম্পর্কের পর্যায়ের নয়। তাদের সম্পর্কের সূচনা হয় ২০১১ সালের আগস্টে সামরিক বাহিনী থেকে পেট্রাউসের অবসর নেওয়ার পর থেকে। পেট্রাউস জেনারেল থাকাকালীন পাউলার সঙ্গে তার ই-মেল যোগাযোগ ছিল।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
তবে কম্পিউটার-নিরাপত্তা তদন্তে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নই পেট্রাউসের ভাগ্যকে কন্টকিত করে দিয়েছে। এভাবে নিজের ই-মেইল অন্যকে ব্যবহার করতে দিয়ে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মারাত্মক অবহেলা দেখিয়েছেন পেট্রাউস। এ সূত্রে তার মত শীর্ষ পর্যায়ের অতি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান যে কোনো ধরনের ব্লাকমেলিংয়ের শিকার হতে পারতেন যা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারতো।
সাম্প্রতিক সময়ে উইকিলিকসের ঝামেলায় এমনিতেই ম্যালা হ্যাপা পোহাতে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। সে সূত্রে দায়িত্বরত সিআইএ প্রধানের ই-মেল অ্যাকাউন্ট মারাত্মক সেনসিটিভ একটি বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের অনেক মহাগুরুত্বপূর্ণ চূড়ান্ত গোপনীয় তথ্য সেখানে আদান-প্রদান করা হয়। আর দুনিযাজুড়ে তৎপর অতি দক্ষ হ্যাকাররা তো এমনিতেই সারাক্ষণ ওৎ পেতে আছে এ ধরনের হাই-অফিশিয়ালদের ই-মেল অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার ধান্ধায়। এসব বিষয় বিবেচনায় হোয়াইট হাইস স্বাভাবিকভাবেই মনে করেছে— শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে পেট্রাউসের থাকাটা কোনোমতেই উচিৎ নয়।
জন্মদিনের ঠিক পরদিনই শুরু অশুভ দিনটির...
এর আগে পাউলার সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কথা স্বীকার করে নিজের ৬০তম জন্মদিনের একদিন পর গত ০৮ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগপত্র জমা দেন জেনারেল পেট্রাউস। পরদিন ০৯ নভেম্বর ওবামা সিআইএ প্রধানের পদত্যাগপত্র অনুমোদন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) প্রধান চার তারকাবিশিষ্ট জেনারেল ডেভিড পেট্রাউস বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে দেখা করে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন। শুক্রবার প্রেসিডেন্ট তার পদত্যাগপত্র অনুমোদন করেন।
২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে গত ৯ নভেম্বর পদত্যাগ করা পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে দাপুটে আর শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী পেট্রাউস তার আচরণের জন্য অনুতপ্ত হয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে পেট্রাউস প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে নিজের আচরণকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
চার তারকা মর্যাদার এই জেনারেল নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করে সিআইএ কর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া ওই বিবৃতিতে বলেন, ‘‘বিয়ের ৩৭ বছর পর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে চরম বোকামির পরিচয় দিয়েছি। ”
তার মতে, একজন স্বামী এবং সিআইএ’র মত সংস্থার প্রধান হিসেবে তার এমন আচরণ একদমই অপ্রত্যাশিত।
অপরদিকে, পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে প্রেসিডেন্ট ওবামা সিআইএ প্রধান হিসেবে এবং মার্কিন সামরিক বাহিনীতে পেট্রাউসের অবদানের কথা স্বীকার করে বলেন, “গত কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে অসামান্য সেবা দিয়ে গেছেন পেট্রাউস। তিনি আমাদের দেশকে নিরাপদ ও শক্তিশালী করেছেন। ’’
‘জায়ান্ট কিলার’ এফবিআই!
পেট্রাউসের পদত্যাগের ঘোষণার পরপরই সংবাদমাধ্যমে ছাপা হয় নিজের জীবনী লেখক পাউলা ব্রডওয়েলের সঙ্গে পেট্রাউসের গোপন সম্পর্কের বিষয়টি।
পেট্রাউস-পাউলার অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি এখন এফবিআইয়ের তদন্তাধীনে রয়েছে। প্রসঙ্গত, একই রাষ্ট্রের দু’টি গুরুতত্বপূর্ণ সংস্থা হওয়া সত্বেও পেশাগত কারণে ‘সিআইএ-এফবিআই দ্বন্দ্ব’ অনেক পুরনো আর বহুল চর্চিত গল্প। ৯/১১ অর্থাৎ টুইন-টাওয়ারে হামলার ঘটনায়ও অনেক আগে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ ও পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে এ দু’টি সংস্থার পারষ্পরিক লুকোছাপার মানসিকতা আর পরষ্পরকে টেক্কা দেওয়ার প্রতিযোগিতাকেও অনেকে দায়ী করে থাকেন। ধারণা করা যায়, সিআইএ-এফবিআই ক্লাসিক দ্বন্দ্বের রসায়ন পেট্রাউস-পাউলা গোপন সম্পর্ক উন্মোচনে কিছুটা হলেও ভূমিকা রেখেছে। তবে এই উন্মোচনে ভাল না মন্দ হয়েছে সে প্রশ্নের চেয়েও বড় বিষয় হচ্ছে, বিষয়টি ওবামা প্রশাসনের জন্য অপ্রত্যাশিত এক সমস্যা তৈরি করে দিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১১ সালে আফগানিস্তানে দায়িত্বপালনকালে ব্রডওয়েলের সঙ্গে অবৈধ প্রণয়ে জড়ান পেট্রাউস। যখন তাদের গোপন প্রেমলীলা চলছিল, ওই সময়টাই সিআইএ প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান পেট্রাউস। এর আগে ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
২০১১ সালের ৩০ জুন সিআইএ’র পরবর্তী প্রধান হিসেবে তার নাম ঘোষণা করে সিনেট। সিআইএ প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তুতি হিসেবে একই বছরের ১৮ জুলাই আফগানিস্তানে নিয়োজিত ইউএস ও ন্যাটো ফোর্সেস কমান্ডের দায়িত্ব ত্যাগ করেন। এরপর একই বছরের ৩১ আগস্ট ইউএস আর্মি থেকে অবসর নেন পেট্রাউস।
অসাধারণ যোগ্যতাপূর্ণ বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার
১৯৫২ সালের ৭ নভেম্বর নিউইয়র্কের হাডসনের কর্নওয়াল এলাকায় জন্ম নেন ডেভিড পেট্রাউস। তার বাবা নেদারল্যান্ডের নাগরিক ও সমুদ্রগামী জাহাজের ক্যাপ্টেন সিক্সটাস পেট্রাউস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রে নোঙর করেন। তিনি বিয়ে থা করে কর্নওয়ালে স্থায়ী আবাস গাড়েন। জেনারেল পেট্রাউসের মা মিরিয়াম ওরফে নি হাওয়েল পেশায় লাইব্রেরিয়ান ছিলেন। পেট্রাউস ১৯৭০ সালে কর্নওয়াল সেন্ট্রাল হাইস্কুল থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এরপর ওয়েস্ট পয়েন্টে ইউএস মিলিটারি একাডেমিতে ভর্তি হন। সেখানে তিনি অসাধারণ যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখেন এবং নিজেকে একজন সেরা চৌকস ক্যাডেট হিসেবে প্রমাণ করেন। ১৯৭৪ সালে ইউএস আর্মিতে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন পান।
সামরিক বাহিনীতে দায়িত্বপালনকালে যেসব সম্মান-পদক লাভ করেছেন পেট্রাউস সেসবের মধ্যে আছে— ডিফেন্স ডিসটিংগুইশ্ড সার্ভিস মেডাল, আর্মি ডিসটিংগুইশ্ড সার্ভিস মেডাল, ডিফেন্স সুপিরিয়র সার্ভিস মেডাল, লিজিয়ন অব মেরিট, ন্যাটো মেরিটোরিয়াস সার্ভিস মেডাল, অফিসার অব দি অর্ডার অব অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি।
গ্রাজুয়েশন সম্পন্নের দু’বছরের মাথায় ওয়েস্টপয়েন্ট মিলিটারি একাডেমির তৎকালীন সুপারিন্টেন্ডেন্ট জেনারেল উইলিয়াম এ নল্টন-এর কন্যা হলি নল্টনকে বিয়ে করেন তিনি। হলি একজন ন্যাশনাল মেরিট স্কলার ছিলেন। পেট্রাউস-হলি দম্পতির অ্যান নামে এক কন্যা ও স্টিফেন নামে এক পুত্র আছে। ম্যাসাচুসেট্স ইন্সটিটিউট থেকে গ্রাজুয়েশন করা স্টিফেনও পিতার মত সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন। ২০০৯ সালে তিনি সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। প্রসঙ্গত, ছেলের কমিশনপ্রাপ্তিকালীন শপথপাঠ (ওথ অব অফিস) পরিচালনা করেন জেনারেল পেট্রাউস। ১৭৩তম এয়ারবোর্ন ব্রিগেডের কমব্যাট টিমের সদস্য হিসেবে আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালন করেন স্টিফেন।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের মার্চের প্রথম দিকে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ন্যাটো হেলিকপ্টার থেকে নিক্ষিপ্ত গোলায় লাকড়ি সংগ্রহরত একদল শিশুর মধ্যে ৯জন নিহত ও ১জন মারাত্মক আহত হয়। এ ঘটনায় ইউএস ও ন্যাটো কমান্ডার হিসেবে পেট্রাউস আফগান সরকার, জনগণ ও হতাহতদের পরিবারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। ন্যাটো সেনাদের ওই দায়িত্বজ্ঞানহীন হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ফোর্স কমান্ডার হিসেবে তার এই দুঃখ প্রকাশ অনেকের প্রশংসা কুড়িয়েছিল।
ভারপ্রাপ্ত সিআইএ প্রধান
জেনারেল পেট্রাউসের পদত্যাগ এমন সময়ে ঘটলো যখন সম্প্রতি লিবিয়ায় মার্কিন দূতাবাসে হামলা ও মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ ৪ কমকর্তা-কর্মচারির নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিআইএ বেশ জটিল সময় পার করছে। গত ১১ সেপ্টেম্বরের ওই ঘটনার কারণ ও দায়-দায়িত্ব অনুসন্ধান, লিবিয়ার বেনগাজিতে মার্কিন দূতাবাস ও তাদের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ নানা কাজে গত কয়েক সপ্তাহ যাবত সিআইএ’কে প্রচুর গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী সপ্তাহে মার্কিন সিনেটের ইন্টেলিজেন্স কমিটির সামনে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল জেনারেল পেট্রাউসের। তবে পেট্রাউসের পদত্যাগের পর সিআইএ প্রধানের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব গ্রহণকারী মাইকেল মোরেল সেই সাক্ষ্যপ্রদান করবেন এখন। জানা গেছে, শীতল মষ্তিষ্কের মোরেল সিআইএ সহকর্মীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় এবং ক্যাপিটল হিলেও তার রয়েছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা।
স্বাস্থ্য সমস্যা
পেট্রাউস চাকরি জীবনের শেষদিকে কিছুটা স্বাস্থ্যগত সমস্যায় পড়েন। প্রাথমিক স্তরের প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়ার পর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওয়াল্টার রিড আর্মি মেডিকেল সেন্টারে রেডিয়েশন চিকিৎসা নেন। রেকর্ডপত্র মোতাবেক, ওই চিকিৎসায় তিনি সেরে ওঠেন। তবে তার ক্যান্সার ধরা পড়া ও চিকিৎসার বিষয়টি একই বছরের অক্টোবর পর্যন্ত চেপে রাখা হয়। এ প্রসঙ্গে পেট্রাউস ও তার পরিবার জানায়, বিষয়টি একান্তই তার ব্যক্তিগত। এটি তার চাকরিগত কর্মকুশলতায় কোনো প্রভাব ফেলেনি। তাই তা সাধারণ্যে জানানো হয়নি।
তবে ২০১০ সালের ১৫ জুন সিনেট আর্মড সার্ভিসেস কমিটির জিজ্ঞাসাবাদের মুখে হঠাৎ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন জেনারেল পেট্রাউস। একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। তবে দ্রুতই তিনি সুস্থও হয়ে ওঠেন এবং কারও সাহায্য ছাড়াই নির্দিষ্ট কক্ষ থেকে হেঁটে বেড়িয়ে আসেন। পরে এ ঘটনাকে তিনি সম্ভাব্য পানিশূন্যতাজনিত অসুস্থতা বলে অভিহিত করেন।
৯/১১ পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সফল শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয় পেট্রাউসকে। ‘ইরাক অভিযানে’ নেতৃত্বদানে বিশেষ ভূমিকা পালন ও আফগানিস্তানে কার্যকর সন্ত্রাসবিরোধী কৌশল বাস্তবায়নের জন্য প্রশংসিত হন তিনি। ইরাক, আফগানিস্তান যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পারন করেন পেট্রাউস।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, দ্য ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলাদেশ সময়: ২১০১ ঘণ্টা, ১০ নভেম্বর, ২০১২
একে