ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২০ মে ২০২৫, ২২ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

রক্তাক্ত ফুটবল আর বান্ধবীদের রোনালদো

মনোয়ারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫:৩১, নভেম্বর ১৩, ২০১২
রক্তাক্ত ফুটবল আর বান্ধবীদের রোনালদো

ঢাকা: পর্তুগিজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো শুধু একজন তারকা খেলোয়ার বা প্রেমিকই নন, নিবেদিতপ্রাণ ফুটবলারও বটে।

বর্তমান বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে দামি ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো প্রচণ্ড আঘাতে কাতর হয়ে রক্তাক্ত চোখে ব্যান্ডেজ নিয়ে খেলায় অংশ নিয়ে আবারও আলোচনায় এসেছেন।

 

তবে তিনি সবসময় আলোচিত থাকেন ফুটবল অথবা বান্ধবীদের নিয়ে।  
 
রক্তাক্ত চোখে খেলে তিনি প্রমাণ করেছেন পেশাদার মানে শুধু টাকা পয়সার লেনাদেনা নয়, সেই সঙ্গে আত্ম নিবেদনও।

জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই রোনালদো ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন, এর জন্য তিনি তার বিছানার পাশে ফুটবল নিয়ে ঘুমাতেন। আর স্কুলে রোনালদোর প্রিয় বিষয় ছিল ইতিহাস। আর তাই বোধহয় তিনি নিজেই ইতিহাস তৈরি করেন।
 
রোববার স্পেনের লা লিগায় লেভান্তের বিপক্ষে এতে ২-১ গোলের জয় ও পূর্ণ পয়েন্ট নিশ্চিত হয় শিরোপাধারী রিয়াল মাদ্রিদের। এতে শীর্ষ দল বার্সেলোনার সঙ্গে ৮ পয়েন্টের ব্যবধান বহাল থাকলেও টেবিলে তৃতীয় স্থানটি ধরে রেখেছে রিয়াল মাদ্রিদ। এদিন লা লিগায় জয় পেয়েছে দ্বিতীয় স্থানের দল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদও।  

তার রক্তাক্ত চোখ নিয়ে খেলার ব্যাপারে ম্যাচ শেষে কোচ হোসে মরিনহো জানান,  রোনালদো চোখের নিচে গুরুত্বর আঘাত নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে ঝাপসা দেখছিলেন । কিন্তু দৃঢ় রোনালদো খেলা চালিয়ে যেতে চাইছিলেন।   আমি চিন্তিত ছিলাম এ সময় বৃষ্টিভেজা মাঠে রিয়ালের প্রতিটি আক্রমণেই রোনালদোর দেখভালে একজন ডিফেন্ডারকে তার কাছাকাছি রাখা হয়েছিল। তবে রোনালদোর আন্তরিকতার ব্যাপারটা অসাধারণ।
 
রোনালদোর বিষয়ে জানা যায়, রোনালদোর বাবা আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও অভিনেতা রোনাল্ড রিগ্যানের নামানুসারে ছেলের নাম রাখেন রোনালদো। সেই নামের যথাযথ মর্যাদা রেখেছেন রোনালদো । জোসে ডিনিজ অ্যাভিয়েরো এবং মারিয়া ডোলোরেসের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ১৯৮৫ সালের ৫ই মে পর্তুগালে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই বেশ ডানপিঠে স্বভাবের ছিলেন তিনি। বাল্যকালে তাকে সান্তোস অ্যাভিরো নামে ডাকা হতো। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি অদম্য টানই রোনালদোকে আজকের এ অবস্থানে নিয়ে এসেছে।
 
ইএসপিএনের এক জরিপে দেখা গেছে, ডেভিড বেকহ্যামের পর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোই একমাত্র ফুটবলার যিনি সকার খেলোয়াড় হিসেবে সারা বিশ্বব্যাপী পরিচিত। সকার নামক একটি ছোট ক্লাবের হয়ে প্রথম খেলাধুলা শুরু করেন তিনি। আর এই ক্লাবের সরঞ্জাম ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিলেন তার বাবা ডিনিজ। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রোনালদো মাদিরাস ক্লাবের সবচেয়ে চৌকস খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত হন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে লিসবনের একটি খেলোয়াড়ী ক্লাবে মাসিক বেতনের বিনিময়ে তিনি চাকরি নেন। লিসবনের খেলোয়াড়ী ক্লাবে যুবক সকার দলের হয়ে ২০০১-০৩ সাল পর্যন্ত খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন রোনালদো।  

২০০১ সালের পর্তুগাল লিগ ম্যাচে বিজীত দলের হয়ে প্রথম খেলায় অংশগ্রহণ করেন, যেটা তাকে খেলাধুলার প্রতি আরো বেশি মনোযোগী করে তুলে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে লিভারপুলের ব্যবস্থাপকের নজরে আসেন এই তুখোড় খেলোয়াড়। ২০০৩ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে রোনালদোর বেতন যেখানে মাসিক ২০০০ ডলার ছিল তা বেড়ে মাসিক ১ লাখ ৯ হাজার ডলারে দাঁড়ায়। সেই সময় তাকে জার্সি দেওয়া হয় ৭ নম্বর। এই ৭ নম্বরের জার্সি কি না পরিধান করতো জর্জ বেস্ট এবং ডেভিড বেকহ্যামের মতো তুখোড় খেলোয়াড়রা।
 
২০০৬ সালে সর্বপ্রথম পর্তুগাল জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ পান ফুটবল গ্রেট । ১৩১ মিলিয়ন রেকর্ড পরিমাণ ডলারের বিনিময়ে ম্যানচেস্টার থেকে রোনালদোকে কিনে নেন ক্লাব দল রিয়াল মাদ্রিদ। সেই সঙ্গে রোনালদোর মাসিক ১০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তিও সম্পন্ন করে এই ক্লাবটি।

এটি একটি রেকর্ড একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে সর্বোচ্চ দামে তাকে কিনে নেওয়া এবং তার সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করা।

রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ৭ নম্বর জার্সি গায়ে নিয়মিত মাঠে নামেন এই খেলোয়াড় এবং বিভিন্ন সময়ে  নিজের সেরা খেলাটাই উপহার দিয়েছেন তিনি।
 
রোনালদো তার খেলোয়াড়ী জীবনে অসংখ্য সম্মান এবং পুরষ্কার পেয়েছেন। এক ডজন খেলোয়াড়ের মধ্যে এক বছরে ২০টিরও বেশি সম্মানান পেয়েছেন তিনি। তার উল্লেখযোগ্য সম্মানাননাগুলো হলো: ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়, উয়েফা বর্ষসেরা খেলোয়াড় এবং সোনার বুট, পর্তুগীজ বর্ষসেরা ফুটবলার ২০০৬ ও ২০০৭।

রোনালদো ২০১০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলে পর্তুগালের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। লা লিগায় এই পর্তুগিজ তারকাই এখন সর্বোচ্চ গোলদাতা।

সিআর-৭ নামে পর্তুগালে ফ্যাশনিস্ট রোনালদোর একটি বুটিক হাউস আছে। বিশ্বের নামী তারকাদের সঙ্গে মাদাম তুসোর জাদুঘরে রোনালদোর মোমের প্রতিকৃতি বিদ্যমান। তা ২০১০ এর বিশ্বকাপের আগে উন্মোচিত হয়।

রোনালদোকে ছোট বেলায় ক্রাই বয় ডাকা হত কারন তার পাস থেকে তার বন্ধুরা গোল করতে ব্যর্থ হলে সে কেদে ফেলতো। রোনালদো সর্বপ্রথম পর্তুগীজ খেলোয়াড় যিনি কিনা ম্যানচেস্টারের হয়ে খেলেছেন। শুধু তাই নয় রোনালদো কিন্তু খুবই ভালো টেবিল টেনিস খেলোয়াড়।


বার্সেলোনার সাবেক কোচ চার্লস রেক্সাচের মতে, রোনালদো বিশ্বের একজন শীর্ষ ফুটবলার। যার অর্থবিত্তের অভাব নেই, শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ ও সাফল্যমণ্ডিত একজন মানুষ।  
 
বান্ধবী কাহিনী    

পর্তুগিজ তারকা রোনালদো ফুটবল মাঠ ছাড়াও আরেক প্রেমের মাঠে ভালোই খেলেন। মার্কিন মডেল কিম কারদেশিয়ান মোটামুটি নামজাদা মডেল। মডেলদের প্রতি রোনালদোর যেমন আগ্রহ, কিমেরও নাকি সমান আগ্রহ ফুটবলারদের প্রতি। তার সাবেক প্রেমিকও ছিলেন একজন আমেরিকান ফুটবলার। এই দুজনকে চুম্বনরত অবস্থায় আবিষ্কার করা গেছে বলে খবর রটেছিল। শুধু এক বান্ধবী নয় নেরেইদা গ্যালার্দো, বিপাশা বসু, প্যারিস হিলটন, ইরিনা...মাঠের মতো অনেক ঘাটেও বিচরণ রোনালদোর।  

বান্ধবীদের সংখ্যা নিয়েও তিনি আলোচিত ২০০২ সালে জার্ডেল ও ক্যারিনা ফেরো, ২০০৫ সালে অ্যাগুয়ার ও ইসাবেলা, ২০০৬ সালে একসঙ্গে চার বান্ধবী ডায়না, নুরিয়া, সুরাইয়া রোমেরো, ২০০৭ সালে বিপাশা বসু,    
অনেকে বলেন, ফুটবল মাঠে মাঝেমদ্যে সময়টা খুব ভালো যাচ্ছে না গেলেও রোনালদোর প্রেমের মাঠের খেলা খারাপ হয়না। বরং মাঠের বাইরের সময়টা ভালোই কাটে।

বাংলাদেশ সময়: ০৫২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১২
সম্পাদনা: শাফিক নেওয়াজ সোহান, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।