টলটলয়ামান অর্থনীতি, নির্বাচনে তাকে হারাতে বদ্ধপরিকর সুপার প্যাক (PAC, পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি) এবং মিট রমনি— এই তিন কঠিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই বারাক ওবামা এখন স্বস্তিতে। এর মধ্যে প্রতিপক্ষ প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী রিপাবলিকান রমনি নির্বাচনে হেরে দৃশ্যপট থেকে বলা যায় বিদায় নিয়েছেন।
এ বিষয়টি অবশ্য স্বতঃসিদ্ধই বলা যায় যে রাষ্ট্রনায়কদের প্রথম মেয়াদের চেয়ে দ্বিতীয় মেয়াদ সাফল্যের দৌড়ে পিছিয়ে থাকে, বিশেষ করে আভ্যন্তরীন ক্ষেত্রে।
যেমন, প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডিলানো রুজভেল্টের কথাই ধরুন। ১৯৩৭ সালের পরিকল্পনা মোতাবেক দ্বিতীয় মেয়াদে সুপ্রিম কোর্টকে সাইজ (নিয়ন্ত্রণ) করতে গিয়ে তিনি কংগ্রেসের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ হারান। ১৯৮৬ সালে ইরান-কন্ট্রা কেলেঙ্কারিতে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানকে কঠিন ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। হোয়াইট হাউস অ্যাপ্রেন্টিস মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে ‘ওরাল সেক্স’ এপিসোডের জের ধরে প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনকে তার দ্বিতীয় মেয়াদে (১৯৯৮ সাল) অভিশংসন (ইমপিচ) করা হয়। ১৯৭৪ সালে একই ভাগ্য বরণের ঝুঁকির মুখে প্রেসিডেন্ট নিক্সন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন।
এমনকি জর্জ ওয়াশিংটনের মত জাতীয় বীর প্রেসিডেন্টকে রিভল্যুশনারি যুদ্ধের সূত্রে ব্রিটেনের সঙ্গে ‘জে চুক্তি’র (Jay Treaty) জের ধরে ফিলাডেলফিয়ায় নিজ বাসভবনে জনতার ঘেরাওয়ের মুখে পড়তে হয়। জনতার দাবি ছিল, ওই জটিলতায় যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্সের পক্ষ নিক।
তবে এটাও সত্য, এসব এবং আরও কিছু ব্যর্থতাজনিত কারণ সত্ত্বেও দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা লাভ করা প্রেসিডেন্টদের গর্বিত হওয়ার মত অর্জনও আছে। এসব বিষয় নিয়ে ব্রুকিং ইন্সটিটিউশনের পণ্ডিত এবং আইসেনহাওয়ার, নিক্সন, ফোর্ড ও জিমি কার্টার প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা স্টিফেন হেস এর মত হচ্ছে— ‘দ্বিতীয় মেয়াদের অভিশাপ’ এর অনেকগুলো বাস্তবতা রয়েছে।
এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, প্রথমবারে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সাহেবরা গদিতে বসার পরপরই তাদের আইডিয়াগুলোর সর্বসেরাগুলো নিয়ে বাজিমাতের চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এরপর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেসব বিস্মৃত হন দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নয়া কোনো আইডিয়াগুচ্ছের সন্ধান না করেই।
নয়া রাষ্ট্রপতিরা আরও যা করেন তা হচ্ছে, হোয়াইট হাইসের কর্মীদের মধ্যে সর্বসেরাদের বাছাই করে নেন, কেবিনেট সাজানোর ক্ষেত্রেও তাই করেন। কিন্তু যখন ওইসব কর্মীরা আরও ভাল কোনো অফার পেয়ে চাকরি ত্যাগ করেন বা মন্ত্রী মহোদয়রা ওয়াশিংটনের ক্ষমতাবলয়ের চাপে বা অন্যবিধ কারণে কক্ষচ্যুত হন, তখন তাদের বিকল্প হিসেবে যারা স্থলাভিষিক্ত হন, তারা প্রায়ক্ষেত্রেই তাদের সমপর্যায়ের মেধা-যোগ্যতা সম্পন্ন হন না। এই ধরনের পরিস্থিতিতে ‘ছাগল দিয়ে ধান মাড়ানো’ অবস্থায় পড়তে হয় রাষ্ট্রপতিদের। হতে থাকে ভুল আর অদূরদর্শী কর্মকাণ্ড।
দ্বিতীয় মেয়াদ করা মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সবচেয়ে অভিশপ্ত সময় পার করেছেন রুজভেল্ট। তার জীবনীকার জিন এডওয়ার্ড স্মিথ প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের দ্বিতীয় মেয়াদকে ‘একটি দুর্যোগ’ বলে অভিহিত করেছেন। ১৯৩৬ সালে তার দীর্ঘকালের ঘনিষ্ঠতম উপদেষ্টা লুই হাউই’র মৃত্যুর পর, প্রেসিডেন্টকে এ কথা বলার আর কেউ ছিলেন না যে— ‘কোর্ট-প্যাকিং স্কিম’ কত বাজে একটি আইডিয়া ছিল। এ ঘটনা শেষ পর্যন্ত রুজভেল্টের দলকে পর্যন্ত দ্বিধা-বিভক্ত করে দেয়। রক্ষণশীল ডেমোক্রেটরা তাকে ত্যাগ করে প্রতিপক্ষ রিপাবলিকানদের সঙ্গে যোগ দেয় এবং অভ্যন্তরীন প্রায় প্রতিটি আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রেই তার বিরোধীতায় সোচ্চার হয়।
এ ঘটনা রাজনৈতিকভাবে রুজভেল্টকে এতটাই ক্লিষ্ট করে যে তার উল্লেখ করতে গিয়ে স্মিথ বলেন, ‘যেন রুজভেল্ট নিজের পায়ে নিজে গুলি করলেন। ’ এরপর এরচেয়ে বাজে একটি পদক্ষেপ নিলেন রুজভেল্ট, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয় সংকোচনের সিদ্ধান্ত নিলেন এই বিশ্বাসে যে তিনি মন্দা কাটিয়ে উঠেছেন। কিন্তু বাস্তবে এ ঘটনায় চরম অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিল। স্মিথ আরও বলেন, “ওই সিদ্ধান্তের ফলে রুজভেল্ট আসলে নিজের নয়, যুক্তরাষ্ট্রেরই পায়ে গুলি করলেন। ”
দ্বিতীয় মেয়াদের বিশাল বিজয় প্রায় ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রনায়ককে অহঙ্কারের প্রগল্ভতায় আকীর্ণ করে তোলে; তাকে এ ধারণায় চালিত করে যে জনগণ বিশ্বাস করছে যে তার কোনো ভুল হতে পারে না। প্রেসিডেন্ট রিগানের জীবনীকার ওয়াশিংটন পোস্টের হোয়াইট হাউস প্রতিনিধি লৌ ক্যাননের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে: “বিপুল বিজয় বিজয়ীর জন্য বিপজ্জনক। ” ১৯৩৬ এর নির্বাচনে রুজভেল্ট মাত্র দু’টি আসনে পরাজিত হন, ১৯৭২ এর নির্বাচনে নিক্সন হারেন শুধুমাত্র ম্যাসাচুসেট্স আর ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার আসনটি।
আর ১৯৮৪ এর নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট রিগান হারান মাত্র একটি সিট। কিন্তু এর ফলাফলটা হচ্ছে—পরবর্তী দু’টি বছর ছিল রিগানের ১৬ বছরের শাসক জীবনের (ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর থাকার সময়সহ) সবচেয়ে অসফল কাল।
আবার সাদামাটা জয়ও অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসের জন্ম দিয়ে থাকে। যেমন, ২০০৪ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশ ৫০.৭% ভাগ ভোট পান। এটা তার ৪বছর আগের নির্বাচনের তুলনায়ও বিশাল কোনো বিজয় ছিল না (ওই নির্বাচনে তিনি ভোট পান ৪৮.৩%)। কিন্তু ২০০৪ এর ওই সাদামাটা বিজয়টাকে জর্জ ডব্লিউ বুশ বিশাল জনসমর্থন বলে ধরে নিলেন। এরপর মাত্রাতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের বেলুনে চেপে পরের বছরই তিনি সামাজিক নিরাপত্তা (Social Security) খাতকে ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিলেন। এটা অবশ্য পুনর্নির্বাচনকালীন প্রচারণায় অঙ্গীকারও করেছিলেন তিনি।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তার সামাজিক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে নিজ দল রিপাবলিকানরা হতোদ্যম হয়ে পড়ে আর ডেমোক্রেটরা কোমর বেঁধে কঠোর বিরোধিতা গড়ে তোলে।
বাস্তবতার নিরিখে বলা যায়, দ্বিতীয় মেয়াদী প্রেসিডন্টরা হন আসলে ‘ল্যাংড়া ঘোড়া’। এক্ষেত্রে তার নিজ দলের এবং বিরোধীদলের পরবর্তী প্রেসিডেন্টপ্রার্থীদের অবজ্ঞার শিকার হন তারা (যেহেতু তৃতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার বিধান নেই)। ডুয়াইট আইসেনহাওয়ার প্রায়ই সংবিধানের ২২ তম সংশোধনী নিয়ে অনুযোগ করতেন যেখানে প্রেসিডেন্ট হওয়ার অধিকার শুধু দুই মেয়াদের জন্য সীমিত করা হয়েছে।
কিন্তু তার পরেও পূর্বতন রাষ্ট্রপতিরা একই সমস্যা ভোগ করেছেন। কারণ, পূর্বতন ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঐতিহ্যগতভাবে জর্জ ওয়াশিংটন থেকে পরবর্তী সময়ের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ ২টার্মেই সীমিত রয়েছে। শুধু রুজভেল্ট তৃতীয় টার্মের জন্য প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।
যাহোকে, প্রশ্নটা আবারো এসে যায়, দ্বিতীয় মেয়াদ কি আসলেও অভিশপ্ত?
প্রেসিডেন্ট সংক্রান্ত বিষয়ে জর্জ ম্যাস বিশ্ববিদ্যালয়ের পণ্ডিত রিচার্ড নর্টন স্মিথ এ বিষয়টির নিরীক্ষণে আরও সূক্ষ্ণদর্শী হওয়ার পরামর্শ দেন। তার মতে এর প্রধান উদাহরণ হতে পারেন প্রেসিডেন্ট আইসেনহাওয়ার যিনি খুব সহজেই পুনর্নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় মেয়াদে তার নিত্য-নতুন আইডিয়ার অভাব ছিল, তিনি সঙ্গে পাননি আগের মেয়াদে তার কেবিনেটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের, চিফ অব স্টাফ শেরমান অ্যাডাম্সও ছিলেন না। তিনি চরম বিব্রত অবস্থায় পড়েন যখন ১৯৬০ সালের একদিন একটি মার্কিন ইউ-টু গোয়েন্দা বিমান সোভিয়েত ইউনিয়নের আকাশ থেকে গুলি করে ভূ-পাতিত করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ প্যারিসে এক জরুরি সম্মেলন ডেকে বসেন যুক্তরাষ্ট্রকে চেপে ধরার জন্য।
কিন্তু এই আইসেনহাওয়ারই ১৯৫৭ সালে আরকানসাসের লিটল রকে ওই রাজ্যের গভর্নরের বিরুদ্ধে সৈন্য প্রেরণ করেছিলেন। কারণ গভর্নর অর্ভাল ফাউবাস আদালতের দেওয়া বিদ্যালয়ে বর্ণবাদলোপী আইনের বিরোধিতা করেছিলেন।
এক্ষেত্রে স্মরণ করা যেতে পারে ১৯৬১ সালে তার বিদায়ী ভাষণে আইসেনহাওয়ারের সেই অসাধারণ সতর্কবাণী— কাঙ্খিত-অনাকাঙ্খিত যাই হোক, পররাষ্ট্র আর অর্থনীতির ক্ষেত্রে সামরিক আর প্রতিরক্ষা শিল্পের অবাঞ্ছিত প্রভাবকে অবশ্যই ঠেকাতে হবে।
তার কালে সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল, স্নায়ুযুদ্ধকালীন ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ওই সময়টায় তিনি সোভিয়েত ইউনিয়েনের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখতে পেরেছিলেন যা করতে পারা ৫০ দশকের ওই জটিল অস্থির আর অরিনামদর্শী সময়টার বিচারে অসাধারণ সাফল্যই বলা যায়।
এবার আসুন বিল ক্লিনটনের বিষয়ে। কয়েক দশকের মধ্যে ১৯৯৭ সালে ক্লিনটনের সময়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট প্রণয়ক করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এজন্য রিপাবলিকানরাও কৃতিত্ব দাবি করতে পারে কারণ এতে তাদের সমর্থন-সহযোগিতাও ছিল। এবং ন্যাটো বাহিনী মোতায়েন ব্যাতিরেকেই ইউরোপের কসোভোয় সার্বদের চালানো গণহত্যাযজ্ঞ থামাতে সফল হয়েছিলেন ক্লিনটন। এ ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আন্তর্জাতিক মর্যাদা বয়ে এনেছিল। কিন্তু এরপর ক্লিনটনের অভিসংশনের মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা ছিল মারাত্মক এক ফাড়া— শুধু ক্লিনটনের নিজের জন্যই নয়, পক্ষান্তরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারীদের জন্যও। কারণ, ক্লিনটন-মনিকা লিউনস্কি কেলেংকারির বিষয়টি নিয়ে মাসব্যাপী চলা বিতর্ক ১৯৯৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে আইনসভায় ডেমোক্রেটদের সাফল্যের ভিত গড়ে দিয়েছিল।
রুজভেল্ট তার দ্বিতীয় মেয়াদে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে খুব কমই সাফল্য অর্জন করেছেন— সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগদানের প্রসঙ্গটি বাদে। পরবর্তীতে এসব বিচারপতি দীর্ঘকাল যুক্তরাষ্ট্রের আইনি গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করেছেন। তার অসাধারণ বাগ্মীতা আর দক্ষতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে দ্বিধা বিভক্ত মার্কিন জাতি আর কংগ্রেসকে জার্মানির বিরুদ্ধে ব্রিটেন-ফ্রান্সের পক্ষাবলম্বনে মনস্থির করতে প্রভাবিত করেছিল। ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধোঁয়ার গন্ধ পেয়েই তিনি মার্কিন সশস্ত্র বাহিনী পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করে বিজ্ঞতার পরিচয় দেন। এছাড়া আর্মি চিফ অব স্টাফ পদে বেশ কয়েকজন সিনিয়র জেনারেলকে ডিঙ্গিয়ে জেনারেল জর্জ সি মার্শালকে বেছে নিয়েও তিনি অসাধারণ দূরদর্শিতার পরিচয় দেন।
আইনপ্রণয়ন সংক্রান্ত বেশ কিছু উদ্দেশ্য হাসিলে ব্যর্থ হয়েছেন জর্জ ডব্লিউ বুশ, যেমন সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে বেসরকারিকরণ, অভিবাসন আইনকে উদারিকরণ এবং কর আইন-বিধির সংস্কার প্রভৃতি। কিন্তু ২০০৮ সালে আফ্রিকায় এইড্স বিস্তার রোধ এবং এর চিকিৎসা ও প্রতিষেধক উদ্ভাবনের পেছনে বিশাল ব্যয়ের সংস্থান করেন তিনি।
এবং তার সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল ‘ট্রাবল্ড অ্যাসেট্স রিলিজ প্রোগ্রাম’। ৭০০ বিলিয়ন ডলারের ওই প্রকল্প বন্ধকী পাকচক্রের গ্যাঁড়াকলে ফেঁসে যাওয়া ব্যাংকগুলোকে রক্ষায় ভূমিকা রাখে।
নিক্সন তার সংক্ষিপ্ত দ্বিতীয় মেয়াদে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে খুব কমই সাফল্য পেয়েছেন। কিন্তু ১৯৭৩ সালে তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর পরপর প্যারিস শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পরই ভিযেতনাম থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার এবং যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি দেওয়া শুরু হয়। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের ‘শাটল ডিপলোম্যাসি’ আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ থামাতে ভূমিকা রাখে। তবে নিক্সন যে মনে করতেন চিলির প্রেসিডেন্ট আলেন্দেকে উৎখাত মার্কিন সাফল্যের পরিচায়ক— তা বর্তমানে একটি মারাত্মক ভুল হিসেবে বিবেচিত।
রিগানের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ দ্বিতীয় মেয়াদের খুত অনেকটাই পুষিয়ে দেয় ১৯৮৬ সালের ট্যাক্স আইন। এই আইন ট্যাক্সখাতের নানান ফাঁকফোকড় বন্ধে ভূমিকা রাখে এবং সরকারের রিজার্ভ ব্যবহার করে উচ্চ ট্যাক্সরেট কমাতে ভূমিকা রাখে। এছাড়া তৎকালীন সোভিয়েত নেতা মিখাইল এস গর্ভাচেভের সঙ্গে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিও তার সাফল্যের পরিচায়ক।
সবকিছু বিবেচনায় মোদ্দা কথা হিসেবে বলা যায়, নিজেদের দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রের কর্ণধাররা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। আর দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচিত বতৃমান প্রেসিডেন্ট ওবামার সামনে বেশ কিছু সমস্যার প্রাচীর অপেক্ষা করছে। এই সমস্যাগুলো তার জন্য বিশেষ কিছু। ধরে নেওয়া য়ায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট আর কংগ্রেস অবশ্যই একসঙ্গে কাজ করতে চাইবে। কিন্তু দলমুখী ওয়াশিংটনের ক্ষমতাবলয়ের ঘাত-প্রতিঘাতে পরবর্তী চার বছর সে মতে কংগ্রেস আর প্রেসিডেন্টের যুথবন্ধী হয়ে চলা বাস্তবিকই কঠিন হবে বলে মনে হচ্ছে।
“তবে, অন্যসব আধুনিক প্রেসিডেন্টদের মত ওবামাকেও ‘স্পর্শকাতর’ (Snatky) মিডিয়ার সঙ্গে মিত্রতা করে চলতে হবে”— এই মত জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের পণ্ডিত স্মিথের। তার মতে, এই মিডিয়াই একজন প্রেসিডেন্টকে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে, যাতে প্রেসিডেন্টের কোনো কাজকে বিশাল সাফল্য হিসেবে ফুটে ওঠে। আর বিশেষ করে পারে ব্যর্থতাগুলোকে আরও প্রকটভাবে ফুটিয়ে তুলতে!
অর্থাৎ ‘বিপজ্জনক’ মিডিয়াকে দ্বিতীয় টার্মে বেশ সমঝে চলতে হবে ওবামাকে।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, ১৩ নভেম্বর, ২০১২
একে