সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে পাথর-কঠিন ভাবলেশহীন মুখের জাঁদরেল তালেবান কমান্ডার সাহেব অট্টহাসিতে ভেঙ্গে পড়লেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সদ্যপদত্যাগী সিআইএ প্রধান পেট্রাউস প্রসঙ্গে।
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সম্প্রতি দেওয়া এক ইন্টারভিউতে এ ঘটনা ঘটে। প্রসঙ্গত, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কেলেংকারিতে জড়িয়ে হঠাৎ করেই ডেভিড পেট্রাউসের পদত্যাগ ওয়াশিংটনকে চরম অস্বস্তিতে ফেলে দিলেও এর বিপরীতে তালেবানদের জন্য তা বিশাল আনন্দের খোরাক হয়ে দেখা দিয়েছে। তারা বিষয়টি নিয়ে নিত্য ‘হাসি-মজাক’ উড়াচ্ছে। আর অবৈধ সম্পর্কের কারণে পেট্রাউসের কী কী ধরনের শাস্তি হওয়া উচিৎ তার বিশ্লেষণও তাদের অবসর বিনোদনের একটি প্রিয় অনুসঙ্গে পরিণত হয়েছে এখন।
“শরীয়া আইন মোতাবেক তাকে পাথর ছুড়ে হত্যা করা উচিৎ। ” সিআইএ চিফ পেট্রাউসের কী শাস্তি হতে পারে— সে সম্পর্কে তালেবানদের একটি মূল্যায়ন এটি।
তবে এক্ষেত্রে পাখতুন উপজাতিদের নিয়ম মানলে— পেট্রাউসকে তার স্ত্রী পক্ষের লোকজনের গুলি করে মারা উচিৎ। এই মতও দেন কেউ কেউ।
প্রসঙ্গত, আফগানিস্তান-পাকিস্তানে তালেবানদের সদস্য সংগ্রহ করা হয় প্রধানত পাখতুন উপজাতি থেকে। উষর পাহাড়ি এলাকার কঠিন জীবনধারায় অভ্যস্ত কট্টরপন্থি পাখতুনরা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কারণে আরও অনেক ধরনের কঠিন শাস্তির বিধান অনুসরণ করে থাকে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আফগানিসস্তান শাসনকালে কট্টরপন্থি তালেবানরা দেশজুড়ে চরম নিষ্ঠুরতা আর নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের ক্ষেত্রে নাগরিকদের প্রকাশ্যে নির্মম শাস্তি দেওয়ার অনেক নজির রয়েছে তালেবানদের।
এদিকে, তালেবান কমান্ডার জানান, পেট্রাউসের ঘটনায় তিনি অবাক হননি।
প্রসঙ্গত, সিআই প্রধান সম্পর্কে তালিবান প্রধানের সংক্ষিপ্ত ওই সাক্ষাৎকার প্রতিবেদনে কোনো তালেবান কমান্ডার বা জঙ্গির নামোল্লেখ করা হয়নি।
“এ ধরনের আচরণে অভ্যস্ত মার্কিনি তথা পশ্চিমাদের ক্ষেত্রে এসব ঘটনা খুবই স্বাভাবিক। তারা উন্মুক্ত যৌনতার সমাজে বসবাস করে যেখানে কেউ এসব নিয়ে খুব একটা ভাবিত হয় না। এ ধরনের পটভূমিতে আপনি আর কী-ই বা আশা করতে পারেন?” পশ্চিমাদের বিষয়ে চরম নেতিবাচক ধারণা পোষণকারী তালেবান কমান্ডার স্বভাবসুলভ প্রশ্ন রাখেন।
উল্লেখ্য, গত ০৮ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন দোর্দণ্ড প্রতাপ সিআউএ চিফ চার তারকা জেনারেল পেট্রাউস। বিবাহিত ও ২ সন্তানের জনক পেট্রাউস তার জীবনীকার পলা ব্রডওয়েলের (তিনিও বিবাহিত এবং ২ সন্তানের জননী) সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার সূত্রে এ সিদ্ধান্ত নেন। তবে এতে মূল ভূমিকা রাখে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রভাবশালী সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)।
এদিকে, এ ঘটনায় আফগানিস্তানে বর্তমান ন্যাটে কমান্ডার মার্কিন নাগরিক জেনারেল জন অ্যালেনের নামও শোনা যাচ্ছে। গুঞ্জনে জানা গেছে, তিনিও একই ধরনের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত থাকতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সৌখিন সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি জেনারেল অ্যালেন একজন দুঁদে এফবিআই এজেন্ট হিসেবেও আলো ছড়িয়েছেন। তবে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সম্ভবত অ্যালেনের বিষয়টি এখন দেখছেন। ওবামা জাতিকে আশ্বস্ত করেছেন, এ ঘটনায় জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে কোনো আপোষ করা হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, ১৭ নভেম্বর, ২০১২
একে