ঢাকা: কখন আসবে কোনো ক্ষুধার্ত রিকশাচালক, সেই আশায় রাজধানীর মিরপুর ১৩ নম্বরের ফুটপাতে তাওয়া গরম করে বসে থাকেন রুটি বিক্রেতা দোলেনা বেগম।
স্বামীকে হারিয়ে ১০ বছর ধরে ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসার টানতে রাস্তায় বসে রিকশাচালক ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আটার রুটি তৈরি করে বিক্রি করেন তিনি।
এক সময় প্রতিদিন ১০-১২ কেজি আটার রুটি বিক্রি করে চলত দোলেনার সংসার। তবে এখন আর আগের মতো রুটি বিক্রি হয় না। কারণ রিকশাচালকদের আর আগের মতো ক্ষুধা লাগে না। আগে যারা রিকশা চালাতেন পায়ে, তারা কষ্ট করে রাস্তায় বসে খেতেন। এখন রিকশাগুলো অটোরিকশায় রূপ নিয়েছে, চালকদের কষ্ট কমেছে, তাই খিদেও কমে গেছে বলে মনে করেন দোলেনা।
এমনও সময় যায়, টানা দুই-তিন ঘণ্টা কোনো বেচাকেনা হয় না। বাধ্য হয়েই চুলা বন্ধ করে বসে থাকতে হয়। দিনে পাঁচ-ছয় কেজি রুটি বানালেও সবটা বিক্রি হয় না।
দোলেনা বলেন, ১০ বছর আগে স্বামী মারা যায়। তখন অনেক কষ্ট করে ছেলে মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছি, মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। ছোট ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে, তার খরচ আর ঘরভাড়া আমি দিই। এখন প্রতি মাসে ১০-১২ হাজার টাকার প্রয়োজন হয়, কিন্তু ইনকাম হয় মাত্র ৫-৬ হাজার।
এই রুটির দামও সাধারণ মানুষের আয়ত্তে। একটা রুটি ও এক টুকরো গুড় ১৫ টাকা, রুটি ও ভাজি ২০ টাকা আর রুটি ও ডিম ৩০ টাকা। অথচ এত অল্প দামেও এখন বিক্রি বন্ধ হওয়ার পথে।
রিকশাচালক মো. সিরাজ (৫০) বলেন, সারাদিন রিকশা চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে গেলে এসব রুটি খেতাম। দাম কম, পেটও ভরে। কিন্তু এখন মানুষ অটো চালায়, তারা বাসা থেকে খেয়ে আসে আবার দুপুরে গিয়ে খায়। তাই আর রাস্তায় কিছু খাওয়ার দরকার পড়ে না।
অটোরিকশাচালক মো. হানিফ (৪০) বলেন, আমাদের আগের মতো আর কষ্ট করতে হয় না। এখন আর রুটি বা কলা খেতে হয় না, বাসায় খাওয়া হয়। তাই রুটিওয়ালাদের বিক্রিও কমে গেছে, এটা স্বাভাবিক।
মিরপুর ১৩ নম্বর ফুটপাতের আরেক রুটি বিক্রেতা তহমিনা বলেন, গতকাল ৮ কেজি রুটি বিক্রি করে হাতে পেয়েছি মাত্র ১৪০ টাকা। এই টাকায় বাজার করব, ঘরভাড়া দেব, না ছেলেমেয়েকে খাওয়াব কিছুই বুঝতে পারছি না।
জিএমএম/এসআইএস