অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী জেফ বেজস নির্বাচিত হলেন ‘ফরচুন বিজনেস পার্সন অব ইয়ার ২০১২’। দীর্ঘসময় ধরে অর্থিক মন্দার পরও বেজস এমন সম্মাননা পেলেন।
ফরচুন ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জেফ বেজস এমন এক আইডিয়া নিয়ে বিশ্বে উপস্থিত হয়েছেন যা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। একমাত্র তার কারণেই বিশ্ব প্রযুক্তির প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে। মানুষ কম্পিউটারে বসে বই পড়া শিখেছে। এমনকি বর্তমান সময়ের ট্যাবলেট, স্মার্টফোন প্রযুক্তি অ্যামাজনের কারণেও জনপ্রিয়তা পেতে সক্ষম হয়েছে।
অন্যদিকে টিম কুক সম্পর্কে ফরচুনে বলা হয়, টিম কুক অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে অ্যাপেলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। স্টিভ জবসের পর অ্যাপল এখনও প্রযুক্তি বাজার মাতিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এর কৃতিত্ব অব্যশই টিম কুকের।
জেফ বেজস
পুরো নাম জেফরি প্রেসটন। বর্তমান সময়ে তিনি জেফ

ছোটবেলা থেকেই সংগ্রামী জীবন তার। সৎ বাবার সঙ্গে সাংসারিক কলহের জন্য শিক্ষাজীবনে বিভিন্ন সময় তার স্কুল পাল্টানো প্রয়োজন দেখা দেয়। রিভার ওকস এলিমেন্টরি স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে সৎ বাবার সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় মা সহ চলে যান ফ্লোরিডায়। সেখানেই মিয়ামি পালমেটো সিনিয়র হাই স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন।
উচ্চতর শিক্ষার জন্য তিনি ভর্তি হন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনা করে ভালো ফল করে সে সময়েই শিক্ষকদের মনে জায়গা করে নেন জেফ।
পড়াশোনা শেষ করে জেফ ওয়াল স্ট্রিটে কম্পিউটার নিয়ে কাজ শুরু করেন। তিনি ফাইটাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য কম্পিউটার নেটওয়ার্কস নিয়ে কাজ করছিলেন। সে সময় ‘অ্যামাজন ডট কম’ প্রতিষ্ঠার কথা তার মাথায় আসে। পরে ১৯৯৪ সালে আলোর মুখ দেখে ‘অ্যামাজন ডট কম’। সে সময় সবাই তাকে কটাক্ষ করে বলতো, ‘ মেধাবী মানুষটি অযথা একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দিয়ে বসেছে। ’
শুরুতে অ্যামাজনের লক্ষ্য ছিল যেকোনো কিছু বিক্রি করা। সেটা শুধু বই না। অ্যামাজন শুরু হওয়ার পর থেকে জেফকে প্রচুর সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে । বিপদেও পড়েছেন বহুবার। বিপদের দিনে কেউ-ই সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। তবে হতাশ না হয়ে সারাদিন অ্যামাজন নিয়ে কাজ গেছেন জেফ।
সারাক্ষণ ভাবতেন কিভাবে এ প্রতিষ্ঠানের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করা যায়। একটা সময় তিনি অনলাইন মার্কেটিং বাজারটাকে ধরে ফেলেন। মানুষও অনলাইনের মাধ্যমে কেনাবেচার পদ্ধতিটিকে গ্রহণ করল। এরপর তাকে আর থামায় কে! অ্যামাজন এখন পৃথিবী বিখ্যাত অনলাইনে বই কেনাবেচার জায়গা।
এদিকে এমন সম্মানে বেজস রীতিমত বিস্মিত হয়েছেন। তিনি ফরচুনকে বলেন, যদিও ই-কনটেন্ট নিয়ে অ্যামাজন কাজ করে; কিন্তু আমাদের অফিসে সবকিছুই হয় কাগজে কলমে। প্রতিদিন মিটিংয়ে আমরা কাগজ কলম নিয়েই বসি। সমস্যা বের করে সব কিছুর সমাধানও কাগজে কলমে হয়।
বেজস আরও বলেন, কোনো নতুন কর্মী অফিসে এসে একটু অবাক হন। যখন দেখেন সবাই এখানে কাগজে কলমে কাজ করছে অথচ এসবই হয় ই-কনটেন্টের জন্য।
জেফ বেজস সম্পর্কে ফরচুন মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, অর্থিক ক্ষতির মধ্যেও অসাধারণ এ উদ্যোগটি নিয়ে বেজস এগিয়ে চলেছেন। প্রতিটি কর্মীকে তিনি উৎসাহ দিয়ে কাজ করান। বিশেষ করে গ্রাহকের প্রতি তার শ্রদ্ধা অসীম। কোনো অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে তা সমাধানের সব উদ্যোগ নেন জেফ বেজস।
জেফ বেজসকে এমন সম্মাননা দিতে পেরে ফরচুন ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষ গর্বিত বলেও উল্লেখ করা হয়। তারা এও বলেন, বেজসের অসাধারণ দক্ষতা ও অর্থিক ক্ষতির পরও এ উদ্যোগ একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি। সব বাধা বিপত্তিকে পেছনে ফেলে বেজস এগিয়ে যাচ্ছেন। এজন্যই তাকে এ বছরের ‘বিজনেস পার্সন অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এবং ব্যবসাসফল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আমাজন ডট কম (amazon.com)। ১৯৯৪ সাল থেকে সাইটটির কার্যক্রম শুরু হয়। আমাজন ডট কম শুরুতে শুধু অনলাইনে বই বিক্রি করলেও এখন এ সাইট থেকে ডিভিডি, এমপিথ্রি, সিডি, কম্পিউটার সফটওয়্যার, ভিডিও গেইম, ইলেকট্রনিক পণ্য, ফার্নিচার, খাবার, খেলনাসহ প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই কেনা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, জাপান ও চীনে ব্যবসা পরিচালনা করছে আমাজন ডট কম।
টিম কুক

কুকের জন্ম আমবালা প্রদেশে ১৯৬০ সালের ১ নভেম্বর। মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা কুকের বাবা জাহাজে কাজ করতেন। মায়ের কাছেই তিনি বেড়ে উঠেছেন।
রবার্টডেল হাই স্কুল থেকে পড়া শেষ করে ভর্তি হন আবার্ন ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে ইন্ডাজট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ১৯৮২ সালে স্নাতক শেষ করেন। পরে এমবিএ করার জন্য চলে যান ডিউক ইউনিভার্সিটি। ১৯৮৮ সালে এমবিএ শেষ করেন।
চাকরি শুরু করেন কমপেক নামে একটি প্রতিষ্ঠানে। পরে ১৯৯৮ সালে স্টিভ জবস তাকে অ্যাপলে নিয়ে আসেন। শুরুতে তিনি ওয়ার্ল্ড অপারেশনস বিভাগের সিনিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। দায়িত্ব পেয়েই তিনি বিশ্বব্যাপী অ্যাপলের অকেজো ওয়্যার হাউসগুলো বন্ধ করে দেন। সেগুলোর জন্য বরাদ্দ অর্থ স্থানান্তর করেন উদ্ভাবনী অঙ্গ-প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এতে অল্প সময়ের মধ্যে অ্যাপলের লাভ বাড়তে থাকে। পুরস্কার হিসেবে তাকে চিফ অপারেশনস অফিসার হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
২০০৪ সালে ক্যান্সারের জন্য প্রথমবার শল্যচিকিৎসা নেন স্টিভ জবস। তখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কুক। অ্যাপলের পরিচালক পর্ষদ কুকের কাজে বেশ সন্তুষ্ট। ২০১১ সালে স্টিভ আবার অসুস্থ হলে পরিচালনা পর্ষদ কুককেই প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। ২০১১ সালে ২৪ আগস্ট থেকে তাঁর এ পদ ও দায়িত্ব কার্যকর হয়। এখনো তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
অ্যাপেলের হিসান অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়ে হয়েছে ৭০৫ ডলার ৭ সেন্ট এবং প্রথম সপ্তাহেই ৫ লাখত নতুন আইফোন বিক্রি হয়ে যায়।
স্টিভ জবসের আসনে বসে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে টিম কুক ফরচুনের চোখে সেরা ব্যবসায়ীদের তালিকায় দ্বিতীয়স্থান লাভ করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১২
সম্পাদনা: শেরিফ সায়ার, বিভাগীয় সম্পাদক