ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

উজানধলে শাহ আবদুল করিমের ‘পিরিতি’

মাজেদুল নয়ন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:২২, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৩
উজানধলে শাহ আবদুল করিমের ‘পিরিতি’

বাংলা বাউল গানের কিংবদন্তী শাহ আব্দুল করিমের গান ভাটি অঞ্চল ছাড়িয়ে, দেশের সবপ্রান্তে সমান জনপ্রিয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি আব্দুল করিমের জন্মবার্ষিকী।

১৯১৬ সালের এই দিনে সুনামগঞ্জের দিরাই থানার উজানধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এই গ্রামেই তার অনুসারী-ভক্তকুল তাকে স্মরণে লোক উৎসবের আয়োজন করে। উজানধল থেকে লিখেছেন বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মাজেদুল নয়ন। ছবিতে সঙ্গ দিয়েছেন ডেপুটি চিফ ফটো করেসপন্ডেন্ট নাজমুল হাসান।

উজানধল, দিরাই (সুনামগঞ্জ) থেকে: কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু/ ছাইড়া যাইবা যদি। পরান পাখি ছাইড়া চইল্যা গেছে, কিন্তু বাউল ছাইড়া যায় নাই। কেউ বলে বাউল, কেউ বলে সাঁইজি কেউ বলে করিম ভাই, কেউ বলে পাগল। বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের পিরিতে যে পড়েছে তাকে বারবারই আসতে হইছে উজানধলে।

বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামের মাঠে আয়োজিত লোক উৎসবে গান গাইতে আসা বাউল লাল শাহও এসেছেন এই প্রেমে।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জের উজানিগাঁও থেকে এসেছেন তিনি। বলেন, “ভাটির মানুষ তার প্রেমে মত্ত। সাঁইজি আর ভাটি কোনোটারেই ছাড়া যায় না। শাহ আবদুল করিমের গান গেয়ে ওঠেন, “কই যাওরে ভাটিয়াল নাইয়্যা, ললিত সুরে গাইয়্যা গান, তোমার গান শুনিয়া চমকে ওঠে প্রাণ। ”

শুক্রবার বিকেল থেকেই উজানধলের দিকে ছুটে আসতে থাকে ভক্ত-শ্রোতারা। মুখে মুখে বাউল সম্রাটের গান। দিরাই উপজেলার সব দোকানপাটে বাজে করিমের গান।

ধনী-গরিব ছুটে আসেন উজান ধলে। করিমের শিষ্য লাল শাহ গেয়ে ওঠেন, “গরিব যারা হয়/ তারা কি তোমার নয়/ তবু কেন দয়াময় দয়া হয় না। ” বলেন, “তিনার মধ্যে ছিল দয়ার মায়া। মায়ায় ছুটে আসতে হয়। ”

এ মায়ায় দিরাইয়ের দায়পুর থেকে এসেছেন বাউল মনীন্দ্র সরকার, বাহাদুরপুর থেকে বাউল ফারুক মিয়া, জানতরটুকির বাউল আব্দুল ওয়াদুদ। ভাটির এসব বাউলদের বাউল তিনি (শাহ আব্দুল করিম), তাই না এসে পারেন না।

গুরুর ভাষায় বাউল আব্দুল কাইয়ুম বলেন, “মানুষ যদি হইতে চাও/ করো মানুষের ভজনা...’। মানুষের ভজনা করতেন আব্দুল করিম। ২০০৪ সাল থেকে সঙ্গ পাওয়া কাইয়ুম বলেন, “বাড়িতে ছোট বড় যেই আসুক উনি নিজে এসে গ্রহণ করতেন। যেতে দিতেন না। ”

তিনি বলেন, “হিন্দু-মুসলমান সকলেই এসেছেন এই ধলে। বাউল সম্রাট গেয়েছেন, “এইসব নিয়ে দ্বন্দ্ব কেন/ কেউ হিন্দু কেউ মুসলমান...। ”

বাহারকলি গ্রামের এই শিষ্য জানান, বাইল সম্রাট আব্দুল করিম ‘গণধর্মা’ মানুষ ছিলেন। ভাটির মানুষ উনাকে ভালবাসে, কারণ উনি ভাটির মানুষ, এখানকার প্রকৃতিকে ভালোবেসেছেন। এখানকার দুঃখী মানুষকে নিয়ে তিনি ভেবেছেন। সরকারের কাছে লিখেছেন, ‘ভাটির চিঠি’।

এখানে এসে ভক্তরা মত্ত হয় সাধন-ভজনে। বাউলদের গানের সুরে শাহ আব্দুল করিম ভাসেন হাওরের বাতাসে। ভক্তদের দেহঘড়ি ঘুরে ঘুরে যায়, মিস্ত্রীর খোঁজে...।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৩
এমএন/এসএইচ/‌আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।