ভোলা: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ভোলার চরফ্যাশনের তারুয়া দ্বীপে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে। কক্সবাজার ও কুয়াকাটার মতো তারুয়া দ্বীপও হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা।
এ দু’টি সমুদ্র সৈকতের চেয়ে তারুয়া দ্বীপ কম সুন্দর নয়। বরং এখানে একই সঙ্গে বন ও সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে জেগে ওঠা এই দ্বীপটি এরই মধ্যে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে।
এই দ্বীপের সৌন্দর্যের কথা জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ায় শত শত মানুষ এখানে বেড়াতে আসছে।
তাই সব মহল থেকে নয়নাভিরাম তারুয়া দ্বীপকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি উঠেছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করে সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে দ্বীপটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুললে এটি আরও বেশি আকর্ষণ করবে পর্যটকদের।
দ্বীপটি ঘুরে জানা গেছে, চারিদিকে জলরাশি পরিবেষ্টিত সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে পলি জমতে জমতে প্রায় ৪০ বছর আগে বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠে তারুয়া দ্বীপ।
এরপরেই সেখানে বন বিভাগ নানা ধরনের গাছপালা রোপণ করে। ধীরে ধীরে তারুয়া দ্বীপটি সবুজের দ্বীপে পরিণত হয়।
বাহারি প্রজাতির গাছপালা, তরুলতা, সি-বিচ, বালু, বৈচিত্রময় প্রাণী আর সাগরের উত্তাল গর্জন সব মিলিয়ে এক মায়াবী হাতছানী। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে দ্বীপটিকে সাজিয়ে তুলেছে। তবে সেখানে এখনো গড়ে ওঠেনি মানুষের বসতি।
এখানে হরিণ ও ভাল্লুকসহ নানা প্রাণী ও দৃষ্টি নন্দন মাটি রয়েছে।
সবুজ বৃক্ষের ঝঙ্কার আর পাখিদের কলরবে মুখরিত তারুয়া দ্বীপ পর্যটন এলাকা হিসেবে গুরুত্বের দাবি রাখে।
এখানে বেড়াতে আসা স্কুল শিক্ষিকা সাহিদা আক্তার সুমনা বলেন, ‘ভোলাতে এমন সুন্দর জায়গা রয়েছে তা আমরা আগে জানতামই না। এখানে এসে বুঝতে পারলাম তারুয়া দ্বীপটি কক্সবাজারের চেয়ে অনেক সুন্দর’।
পর্যটক আনোয়ার পারভেজ বলেন, ‘এখানে যদি হোটেল-রেস্তোরা থাকতো তাহলে মানুষ এখানে এসে ৫/৬দিন থাকতে পারতো’।
সংগীত শিল্পি মনজুর আহমেদ বলেন, ‘জায়গাটা সত্যিই সুন্দর। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে এখানে আরও বেশি পর্যটক এসে ভীর জমাবে। এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে’।
অ্যাডভোকেট নজরুল হক অনু বলেন, ‘তারুয়ায় যে বিশাল বৃক্ষরাজি ও সমুদ্র সৈতক রয়েছে সেখানে যাওয়ার জন্যে চরফ্যাশনের ঢালচর এবং কচ্ছপিয়া দিয়ে যদি একটি রাস্তা নির্মাণ হয় বা সি-ট্রাকের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে খুব শিগগিরই তারুয়ায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠবে’।
পর্যটক মনজুর রহমান, নিরব ও শাহে আলম বলেন, ‘তারুয়া দ্বীপের কথা আগে অনেকবার শুনেছি কিন্তু কখনোই দেখিনি। এখন দেখে আমাদের খুবই ভালো লাগছে। এখানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়’।
এ দ্বীপটিকে পর্যটন এরিয়ার আওতায় এনে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তারা।
পর্যটক সজিব বলেন, ‘এখানে এলে বন ও সমুদ্রের সৌন্দর্য দেখা যায় এক সঙ্গে। অন্য পর্যটন কেন্দ্রে একই সঙ্গে দু’টি সৌন্দর্য উপলদ্ধি করা যায়না। সরকার সু-দৃষ্টি দিলেই তারুয়ায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে’।
স্থানীয় মাহাবুবুর রহমান বলেন, ভোলার দক্ষিণের সর্বশেষ এ অঞ্চলটি হচ্ছে তারুয়া। এরপরে আর কোনো দ্বীপ নেই। এই সমুদ্র সৈকতটিকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব।
এদিকে, প্রকৃতির রূপ আলো আধারির বাহারী খেলার দেখা মেলে এখানে। তারুয়ায় দাঁড়িয়ে ভোরের সূর্যের আগমনী বার্তা দেখা যায়। পাশাপাশি সন্ধ্যার আকাশে সিঁড়ি বেয়ে এক পা দু’পা করে লালিমায় ভরে ওঠার সেই অতুলনীয় দৃশ্যও দেখা যায়।
পর্যটক আর ভ্রমণ পিপাসু মানুষকে মুগ্ধতার বন্ধনে আবদ্ধ করার যাদুকরি শক্তি রয়েছে তারুয়া দ্বীপের।
তারুয়ায় শীতকালে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে সুদূর সাইরেরিয়া থেকে ছুটে আসা অতিথি পাখি। তখন পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয় এই দ্বীপ।
ভোলা শহর থেকে তারুয়ায় যেতে সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হলেও নৌ-পথে যাওয়ার রয়েছে সহজ উপায়। তারুয়া দ্বীপটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুললে দক্ষিণাঞ্চল তথা সারাদেশের পর্যটকরা ছুটে আসবে। এতে বদলে যেতে পারে এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট।
ভোলার উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোল্লা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘তারুয়া দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা বিবেচনা করে সেখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। খুব শিগগিরই দ্বীপটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৩
সম্পাদনা: রাফিয়া আরজু শিউলী ও শিমুল সুলতানা, নিউজরুম এডিটর
eic@banglanews24.com