প্রায়ই মনে হতো, যদি রোবট বানাতে পারতাম! যে রোবট মানুষের মতই হাঁটতে পারে, কথা বলতে পারে। এমন রোবট বানানো কি খুব কঠিন কাজ? এ প্রশ্নের উত্তরও খুঁজতাম।
শুরুটা ছিল খুব হতাশার। কোনোভাবেই কুল-কিনারা খুঁজে পাই না। কোডিং করতে গিয়ে মাথা নষ্ট। প্রোগ্রামিংয়ে যে আমি খারাপ তা নয়, তবে গাণিতিক বিষয় মাথায় রেখে কাজ করাটা কঠিন। প্রথমেই বিপাকে পড়লাম রোবটিক আর্ম নিয়ে। এটির জন্য প্রথমে প্রোগ্রামিং করা হয়। কারেন্ট ডিরেকশান প্রয়োজনমতো বদলে দেওয়ার জন্যই প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়। যখন কারেন্ট ডিরেকশান দিক বদলাবে, সঙ্গে তার মোটরও তার দিক বদলে ফেলবে। বিষয়টা ছিল এমন।
কারণ, রোবট যখন তার নিজের হাত নাড়াবে তখন কারেন্ট ডিরেকশান জরুরী। সে অনুযায়ী সে চলাফেরা করবে। এ সমস্যা থেকে এক পর্যায়ে আমরা বের হই। এখন তো হাত তৈরি করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন জ্যামিতি হিসাব কিতাব। নেমে পড়লাম জ্যামিতিক নানা সমস্যা র্নিণয়ে। হাত তৈরির কাজও খুব সহজে শেষ হলো।
বিভিন্ন রকম মোটর আছে। ঠিক কোন মোটর ব্যবহার করতে হবে সে বিষয়ে সবাই আলোচনা করে বের করলাম। মোটর প্রতিস্থাপন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। প্রতিস্থাপনের কাজ করতে গিয়ে পড়ালাম নতুন সমস্যায়। আমরা দেখি, যত শক্তিশালি মোটর দেই না কেন, রোবটটি কোনোভাবেই তার হাত নাড়াতে পারে না। দেখলাম এখানে আরও একটি বিষয় যুক্ত হবে। সেটা হলো বৈজ্ঞানীক সূত্র টর্ক।
সামনে এলো টর্কের ইকুয়েশন। আমরা টর্ক বাড়াতে পারলেই রোবটটি কাজ করা শুরু করবে। একসময় সমস্ত বাধা পেরিয়ে স্বপ্নের রোবটিক আর্ম এএসআর কে-২৫০ (ASR k-250) তৈরি করে ফেললাম।
সবার মনে নিশ্চয় প্রশ্ন জেগেছে এ রোবট আমাদের কোন উপকারে আসবে? উত্তরটি হলো, এ মডেলের রোবট ব্যবহার করে আমরা ঘরের ছোটখাটো কাজ- যেমনঃ এক ঘর থেকে আরেক ঘরে পাঠানো, রান্না ঘর থেকে বিভিন্ন রকম জিনিস নিয়ে আশা, রান্নায় সাহায্য্ করা, টেলিভিশন, এসি, ফ্রিজ, অন অফ করা ইত্যাদি।
এছাড়া পৃথিবীতে ভূমিকম্প সহ বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলায় বন্ধুর মত সাহায্য করতে পারবে। এএসআর কে-২৫০ (ASR k-250) কারখানায় ভারি জিনিসপত্র উঠানো নামানোসহ এক জায়গা থেকে আরেক জাগায় নেওয়ার কাজও করানো সম্ভব।
রোবট তৈরির কাজ যখন করছি তখন আমার প্রিয় শিক্ষক আলিমুল হক খান স্যার সহযোগিতা না পেলে কিছুই সম্ভব হতো না। অন্যদিকে আমাদের উদ্ভাবনকে সবসময় উৎসাহিত করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির কো-অর্ডিনেটর কাজী তাইফ সাদাত। তাদের দুজনের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
লেখক: আনিসুর রহমান
প্রকৌশল বিভাগ
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৩
সম্পাদনা: শেরিফ সায়ার, বিভাগীয় সম্পাদক