ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

‘ছোটু’ শিক্ষক!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:১৬, মার্চ ৪, ২০১৩
‘ছোটু’ শিক্ষক!

ঢাকা: প্রতিবেদনের ছবি দেখেই ভাবছেন এই ‘পিচ্চি’ বোধ হয় স্কুলের কোনো শিক্ষকের বাচ্চা শিশু, যে দুষ্টুমিচ্ছলে বাবার অনুপস্থিতিতে টেবিলে দাঁড়িয়ে স্কুলের ছাত্রীদের সঙ্গে দুষ্টুমি করছে!

ছবি আপনাকে এমন ধারণা দিলেও আসল ঘটনা ভিন্ন। এই ‘পিচ্চিটা’ই শিক্ষক।

‘ছোটু’ শিক্ষক। ভারতের হরিয়ানা প্রদেশের সরকারি গার্লস স্কুলের ‘ছোট স্যার’।

নাম আজাদ সিং। বয়স ২২। শারীরিক উচ্চতা মাত্র ৩ ফুট। ওজন ৪১ পাউন্ডের (১৮.৫ কেজি) কাছাকাছি! গায়ের পোশাক-আশাক ৭ বছর বয়সী শিশুর মতো!

হরমোন ঘাটতির কারণে মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় আজাদের। অভাবের সংসারে এই প্রাকৃতিক রোগের চিকিৎসাও করাতে পারেনি আজাদের পরিবার।

কিন্তু আজাদ কি থেমে গেছেন? আজাদের বর্তমান অবস্থান বলছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাই তার মানসিক শক্তির কাছে হার মেনে গেছে!

আজাদ বলেন, “আমার কোনো রকমের কষ্ট নেই! যা চেয়েছি তার সবই অর্জন করতে পেরেছি আমি। ”

হরিয়ানা প্রদেশের সরকারি গার্লস স্কুলে ১০ হাজার রুপি সম্মানিতে অন্য সব শিক্ষকের মতোই কম্পিউটার শিক্ষা বিভাগে শিক্ষকতা করছেন আজাদ। তার ছাত্রীরা তাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সুরে ‘ছোট‍ু’ বলে ডাকে।

সাফল্য অর্জনে আজাদকে কতটা সংগ্রাম করতে হয়েছিল? বলছেন আজাদ নিজেই, “যখন স্কুলে ভর্তি হই। স্কুল ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমাকে অনেক ভয় দেখানো হয়। অস্বাভাবিক উচ্চতার কারণে সার্কাসওয়ালার‍া নিয়ে যেতে পারে এমন ভয়ও দেখানো হয়েছিল। তবু আমি দমে যাইনি। ”

মানসিক শক্তিই নিজের লক্ষ্য অর্জনে বড় শক্তি উল্লেখ করে আজাদ বলেন, “আমাকে ভয় দেখানো হয়েছিল বলেই সফল হতে পেরেছি। ”

শিক্ষকদের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে আজাদ বলেন, “তাঁরা আমাকে ভিন্নপন্থায় শিক্ষা দিয়েছিলেন বলে আমি সম্মানও পেয়েছি, ‍চাকরিও পেয়েছি। ”

আজাদের ছাত্রীদের তার সঙ্গে দাঁড় করানো হলে ছাত্রীদেরকে তার শরীরের তুলনায় অনেকটা টাওয়ারের মতো লাগে। এ রকম মজার একটি গল্প তুলে ধরে ‍আজাদ বলেন, “যখন আমার বয়স ১৮, তখন আমাকে শিশু ভেবে ট্রেনের কর্মকর্তার‍া কোলে নিয়ে আদর করেছিলেন!”

আজাদের পরিবারে আরও দু’বোন রয়েছেন। একজন আজাদের মতোই শারীরিক প্রতিবন্ধী। নাম লক্ষ্মী, বয়স ১৯। তবে ১৫ বছর বয়সী আরেক বোন সুমন শারীরিক প্রতিবন্ধী নয়। সুমন বাদশাহপুরের গুরগাঁও মাধ্যমিক স্কুলে পড়ে।

আজাদকে স্কুটারে করে সবসময় তার কর্মস্থলে পৌঁছে দেয় সুমন। ভাইয়ের অর্জনে আনন্দ প্রকাশ করে সুমন বলে, “তার সাফল্যে আমরা গর্বিত। ”

আজাদের ৫২ বছর বয়সী মা প্রভাতি বলেন, “মানসিক শক্তির কারণে সে চূড়ান্তভাবে সুখী হয়েছে। তার মানসিক শক্তিকে হারানো অসম্ভব ছিল। ”

রাজ্যের প্রতিবন্ধী সংগঠনের কর্মকর্তারা বলছেন, “আজাদের সাফল্য শারীরিক প্রতিবন্ধী অন্য শিশুদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে উৎসাহ যোগাবে। সত্যিই তার অর্জন ঈর্ষণীয়। ”

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৩
সম্পাদনা : হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর-eic@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।