ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

পায়ের শূন্যতায় দমেনি হের

স্বপ্নযাত্রা ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:২১, মার্চ ১৬, ২০১৩
পায়ের শূন্যতায় দমেনি হের

পড়াশোনায় তেমন আগ্রহ নেই। বই পড়তেও ভালো লাগে না।

ভালো লাগে শুধু ঘুরে বেড়াতে। বিশেষ করে পাহাড় তার বড্ড প্রিয়। পৃথিবীকে সর্বোচ্চতায় উঠে দেখতে খুবই ভালোবাসে হের নামের ছেলেটি। সে নেশাতেই মাউন্ট টেম্পলে চড়ে গেল হের। তখন তার বয়স সবে ৭।

আলবার্টার ১১ হাজার ৬২৭ ফুট মাউন্ট টেম্পলে ওঠার পর যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ বুঝে গেল এ ছেলের সাহস ও যোগ্যতা আছে বটে। দমার পাত্র সে নয়।

তবে অদম্য হেরকে হার মানালো প্রকৃতি। সেটা ১৯৮২ সালের ঘটনা। নিউ হ্যাম্পশায়ারের মাউন্ট ওয়াশিংটন জয় করতে বন্ধু জেফ ব্যাটজারের সঙ্গে পাড়ি জমালো হের। তখন হলো বিপদ। তুষার ঝড় বিপদ হয়ে সামনে এসে দাঁড়ালো।

এবার ভাগ্য সহায় হলো না। তিন রাত পর যখন দুজনকে উদ্ধার করা হলো তখন মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে দুবন্ধু অচেতন। বেঁচে থাকার আশাও কেউ করেনি। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা সহায়। ফ্রস্টবাইটে আক্রান্ত হয়ে দুজনকেই হারাতে হলো পা। যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ ভেবে বসলো, শেষ হলো হেরের অধ্যায়।

এ ভাবনা সম্পূর্ণ্ হলো। পরাজয় মেনে নেওয়ার জন্য পৃথিবীতে জন্মায়নি হের। বুঝে গেল এখন তার শক্তি পড়াশোনা। পা গেছে তাতে কি! মাথা তো আছে। শুরু হলো পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া। পদার্থ বিদ্যা পছন্দের বিষয়। এ বিষয়েই পদার্থ বিদ্যায় স্নাতক।

বিখ্যাত এমআইটি থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স। না। যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। পিএইচডি করতে হবে। উড়ে গেলে আরেক বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। গবেষণায় মত্ত থাকেন সারাদিন। ভাবেন নিজেকে নিয়েই।

তার মতো অসংখ্য পা হারানো মানুষগুলোকে তিনি তুলে দাঁড় করাতে চান। এ জন্য তার ভাবনার অন্ত নেই। পিএইচডি শেষ করে ফিরে এলেন এমআইটিতে। সেখানে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ শুরু করলেন।
পড়াশোনা থাকা অবস্থা থেকেই তিনি নিত্যনতুন গবেষণার কাজ করতেন। তবে সব গবেষণাই ছিল কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিষয়ে। কারণ একটাই। তিনি উঠে দাঁড়াতে চান। তিনি বিশ্বকে দেখাতে চান এ পৃথিবীতে সাহস এবং আত্মবিশ্বাস থাকলে সবই সম্ভব। গবেষণা করতে দেখা গেল ৬০টি গবেষণাপত্র লিখে ফেলেছেন। সঙ্গে আছে ১৪টি পেটেন্ট।

যেই হের এক সময় পাহাড় পর্বত জয়ের জন্য পত্রিকায় আসতেন। কিংবা পরে দুর্ঘটনায় পড়ে পা হারানোর জন্য পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছিলেন। সেই হের এখন ভিন্ন পরিচয়ে শিরোনাম হচ্ছেন নাম করা সব পত্রিকায়। তাকে বলা হচ্ছে আধুনিক বিশ্বের ভিন্ন ধরনের উদ্ভাবক।

এর একমাত্র কারণ হলো তিনি আবিষ্কার করছেন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। তিনি বলেই বসলেন, আমি চাই না হুইল চেয়ারে বসে কোনো মানুষের জীবন কাটুক। আমি চাই প্রতিটি মানুষ মুক্তি পাক। হুইল চেয়ারে বসে থাকা কোনো জীবন নয়। এ জীবন থেকে বের হতেই হবে।  

হের বেশ কিছু কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি করে ফেলেছেন। এগুলো অনেকে ব্যবহারও শুরু করে দিল। তিনি একদম পায়ের মতই করেই যান্ত্রিক পা তৈরির কাজে মনোযোগ দেন।

বর্তমানে হেরকে দেখলে হাঁটুর নিচ থেকে তাকে দেখতে রোবটই মনে হবে। তার এ আধাযান্ত্রিক জীবন মেনে নিয়েছেন হাসিমুখে। মজা করে বলেন, আমি টাইটানিয়াম, কার্বন, সিলিকন এবং একগুচ্ছ নাট-বোল্টের সমন্বয়। আমার প্রতিটি দিন নিয়ন্ত্রিত হয় ১২টি কম্পিউটার ও ৫টি সেন্সর দিয়ে।

এমনই হচ্ছেন হাগ হের। যান্রিক শরীর হলেও তিনি খুশী। সঙ্গে খুশী অসংখ্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারানো মানুষ। তাদের পাশে হেরই একমাত্র ভরসা। তবে হেরের চিন্তা অন্যখানে। যারা তখন বলেছিল পাহাড়ের পথে হেরের যাত্রা শেষ।

তাদের জন্য জবাব তৈরি করছেন হের। তিনি এক পা তৈরিতে কাজ করছেন যা দিয়ে পাহাড়ে ওঠা যায়। যন্ত্রের পা দিয়েই তিনি প্রমাণ করে দিতে চান যাত্রা তার এখনও অনেক বাকি। তিনি তা জয় করেই ছাড়বেন। হেরের সঙ্গে অপেক্ষায় আছে অসংখ্য বিজ্ঞানপ্রেমীরাও।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৩
সম্পাদনা: শেরিফ সায়ার, বিভাগীয় সম্পাদক/ সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।