ঢাকা: মাওবাদী সাম্যবাদী বিপ্লবীদের হাতে সরকার পরিচালিত হলেও মুদ্রাস্ফীতি কিংবা দারিদ্র্য কোনোটিই কমেনি হিমালয়ের দেশ নেপালে! উন্নয়নশীল নেপালের জনগোষ্ঠী অবশ্য কম পরিশ্রম করছেন না দেশকে এগিয়ে নিতে।
কতটা পরিশ্রম করছেন নেপালের নাগরিকরা সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন নুডলস বিক্রেতা বিনোদ চৌধুরী।
পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর জীবন-যাপন থেকে ‘বিলিয়নিয়ার’দের তালিকায় স্থান করে নেওয়া এই শিল্পপতি বলেন, “পরিশ্রম মানুষকে হতাশ করে না। পরিশ্রমের পর অর্জন অবশ্যই আপনাকে চমকিত করবেন। ”
নেপালের সর্বোচ্চ শিল্প নির্দেশনায় তৈরি নিজের অনিন্দ্যসুন্দর বাসভবনে বসে বিনোদ চৌধুরী বলেন, “কেবল পারিবারিক ব্যবসাকে পুঁজি করে আমার এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। ” আর তাঁর মতো পরিশ্রম করে নেপালের পুরো জনগোষ্ঠীকেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘চৌধুরী গ্রুপ’র প্রধান ৫৭ বছর বয়সী এই ধনকুবের সিঙ্গাপুরে আবাসন (রিয়েল এস্টেট) ও সিমেন্ট ব্যবসাসহ বিভিন্ন বড় ধরনের প্রকল্পে ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
১৮ বছর বয়সেই ‘ওয়াই ওয়াই নুডলস’ নামের নিজের উদ্ভাবিত সুস্বাদু নুডলস বিক্রয়ের মাধ্যমে ১৯৮০ সালের মধ্যভাগে নেপালে ব্যবসা শুরু করেন স্বল্পশিক্ষিত তরুণ বিনোদ। ২০০৫ সালে ভারতসহ এশিয়ার ৩০টিরও বেশি দেশে শাখা খুলে বিনোদের নুডলস বিক্রয়ের প্রতিষ্ঠান।
তারপর শুধুই অর্জনের গল্প। নুডলস ব্যবসাসহ বিভিন্ন অভিজাত ও লাভজনক ব্যবসায় সাফল্যের গল্প লিখতে থাকেন এই নেপালি শিল্পপতি।
এ মাসের শুরুর দিকে প্রকাশিত প্রভাবশালী ‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিনের শীর্ষ কোটিপতিদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান করে নেন ৩ সন্তানের জনক এই শিল্পপতি। এই স্বীকৃতিকে নোবেল প্রাপ্তি হিসেবে মনে করছেন বিনোদ।
ভারতের আধ্যাত্মিক গুরু শ্রী শ্রী রবি শঙ্করের ভক্ত এই কোটিপতি বলেন, “উন্নয়নের ধারণা কেবল ধনী দেশ থেকেই আসে না, নেপালের মতো উন্নয়নশীল দেশ থেকেও উন্নয়নের ধারণা অনুসরণ করে কোটিপতি হতে পারেন যে কেউ। ”
এশিয়ান ডেভেলমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) হিসেব মতে, ২ কোটি ৭০ লাখ জনগোষ্ঠীর দেশ নেপালের বার্ষিক আয় ৬০০ মার্কিন ডলারেরও কম।
প্রতিবেশিদের গতিশীল উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে নেপালকেও পাল্লা দিয়ে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ধনী হয়ে গেলে কেউ আমাদের সম্পদ নিয়ে যাবে এ ধরনের মনোভাব দূর করা উচিত। ”
নেপালের আইনে বিদেশে বিনিয়োগ নিষিদ্ধ হলেও বিনোদ চৌধুরীর সম্পদের মূল উৎস বিদেশে বিনিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোই।
রাজনীতিতে ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে বিনোদ বলেন, “এখন নেপালের জাতীয় উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিতে চাইছি।
সরকারি ও বিদেশি প্রচেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে নেপালের বেসরকারি বিনিয়োগও জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে মন্তব্য করে বিনোদ বলেন, “উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার এখনই সময়। ”
বিনোদ চৌধুরী বলেন, “আমি আমার দেশকে ভালোবাসি। দেশই আমার প্রথম ও শেষ ঠিকানা”
বাংলাদেশ সময় : ১৮০২ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৩
সম্পাদনা : হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর-eic@banglanews24.com