ঢাকা: বনানী কবরস্থানের সি ব্লক পার হয় নিমিষেই। একটি কবর থেকে আরেকটি কবরে।
স্বাস্থ্যবান লেজ উচিয়ে, নাড়িয়ে চাড়িয়ে এদিক সেদিক দ্রুত ছোটে, খেলে বেড়ায়।
লোমশ শরীরের ছোট প্রাণীটিকে যত আদূরেই মনে হোক না কেন, সাপের কিন্তু যমদূত সে।
বেজির রণকৌশল, দ্রুততা আর ধারালো দাঁতের কাছে বেশিরভাগ সাপই পরাজিত হয়। বাড়িতে বেজি থাকলে যমদূতের ভয়ে সে আঙ্গিনার প্রবেশের সাহস পায় না সাপ। তবে অনেক সময় বিষাক্ত সাপের মোক্ষম কামড়ে মৃত্যুও ঘটে বেজির।
দূরে দাঁড়ানো মানুষের উপস্থিতি তখনো টের পায়নি বেজিটা। আবারো পালিয়ে যাওয়ার আগেই ক্যামেরাবন্দি করে ফেলেন স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট কাশেম হারুন।
মনুষ্য প্রজাতির বন্ধু হিসেবে বেজির পরিচয় থাকলেও সাপের পরিচয় শত্রু হিসেবে। আজন্ম দুই শত্রু সাপ আর বেজির মহারণ দেখিয়ে এখনো টাকা আয় করে বেদে সম্প্রদায়। টানটান এ লড়াই অবশ্য সাঁপুড়ে কখনোই শেষ হতে দেয় না। তার আগেই খাঁচায় ঢুকিয়ে ফেলে দুই শত্রুকে। এমন ঘটনা জনশ্রুতিতে দুর্লভ নয়। সাপের যমদূত নামে পরিচিত বেজি মানুষকে নিশ্চিত মৃত্যুর কবল থেকে রক্ষা করছে, এমন অসংখ্য কাহিনী ছড়িয়ে আছে এ দেশে।
লোকে বলে, বেজি নাকি সাপের বিষের ওষুধ জানে। তাই সাপ বেজিকে হারাতে পারে না। আসলে ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। ব্যাপারটা বেজির রণকৌশল, দ্রুততা আর ধারালো দাঁত।
বেজি মাংসাশী প্রাণী। খাদ্যতালিকায় রয়েছে ইঁদুর, পাখি, খরগোশ ইত্যাদি। তৃণভূমি অঞ্চলের ‘প্রেইরি ডগ’ও বেজির শিকারের আওতায় পড়ে। আবার স্বয়ং বেজিই অনেক প্রাণীর খাবারের খাতায় নাম লিখিয়েছে। বেজিখাদকদের মধ্যে নামকরা হলো কয়োট, পেঁচা, শিয়াল ও নেকড়ে বাঘ। সাপের সঙ্গে বেজির লড়াই এক বিচিত্র দৃশ্য। কিন্তু বেজিরা ইঁদুর ধরতেই বেশি পছন্দ করে। ঠিক এ কারণেই মধ্যযুগে ইউরোপে পোষা প্রাণী হিসেবে বেজি খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।
ত্রয়োদশ থেকে চতুর্দশ শতাব্দীজুড়ে রাজা ও ধনীদের কাছেও পোষ্য হিসেবে বেজির খুব কদর ছিল। যদিও পোষ্য হিসেবে বেজির যাত্রা শুরু হয় কয়েক হাজার বছর আগেই। তবে পোষা বেজিকে আবার জঙ্গলে ছেড়ে দিলে বেঁচে থাকা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। বেজির তিনটি প্রজাতির নাম বল্গাকফুটেড, সাইবেরিয়ান পোলক্যাট ও স্তেপ এলাকার বেজি। এর জাতভাইদের মধ্যে আছে ভোঁদড়, উদ্বিড়াল ও নকুল। বিশ্বের দুর্লভতম একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী হচ্ছে উত্তর আমেরিকার বল্গাকফুটেড বেজি। একসময় জীববিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন, বল্গাকফুটেড বেজি বুঝি বিলুপ্তির খাতায় নাম লিখিয়েছে।
১৯৮৪ সালে উইয়োমিংয়ে অনেক বল্গাকফুটেড বেজির দেখা পেয়ে তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। বিচিত্র এই বেজিগুলো প্রায় সারাজীবন মাটির নিচেই কাটিয়ে দেয়। গায়ের রঙের কারণেই ওদের এই নাম। শরীরের প্রায় পুরোটাই হলদে। তবে পায়ের নিচের দিকটায়, লেজে, পিঠে আর চোখের চারপাশে ঘন কালো পশমের ছোপ দেখা যায়। পায়ের দিককার কালচে লোমগুলোর জন্যই ওদের নাম হয়ে গেছে ‘বল্গাকফুটেড’। সারা পৃথিবীতে এখন মাত্র হাজারখানেক এই প্রজাতির বেজি আছে।
আমাদের দেশীয় বেজিরাও ভালো নেই। খাদ্য আর বাসস্থান সংকটের মধ্যে থেকেও শিকারিদের হাতে মারা পড়ছে ওরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৩
এমএন/ সম্পাদনা: জনি সাহা, নিউজরুম এডিটর