ঢাকা: এবারের স্বাধীনতা দিবস কিছুটা ভিন্ন বলে মনে হচ্ছে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর। তিনি বলেন, ‘‘চেতনায়, গণজাগরণের দিক থেকে এবারের স্বাধীনতা দিবস কিছুটা ভিন্ন।
সঙ্গে সঙ্গে তিনি এটাও বলেন, ‘‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এসেছে। সেই দেশকে ‘ভয়ংকর’দের হাত থেকে রক্ষা করতে আরও একটি মুক্তিযুদ্ধ হবে। ’’
ফেরদৌসী বলেন, ‘‘বর্তমান প্রজন্ম চালাকির ধার ধারে না। আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ হবে, বর্তমান প্রজন্ম নেতৃত্ব দেবে তাতে। কোনো চালাকি চলবে না তাদের সামনে। ’’
স্বাধীনতা পদক হাতে ‘মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিতাদের বীরাঙ্গনার পরিবর্তে মুক্তিযোদ্ধা বলাই শ্রেয়’ অভিমত ব্যক্ত করা প্রিয়ভাষিণী বলেন, ‘‘দেশ বদলাবেই। স্বাধীনতাবিরোধীদের এই অন্যায় চলবে না। অন্যায়কারীদের উপযুক্ত জবাব পেতেই হবে। ’’
২৬ মার্চ মঙ্গলবার স্বাধীণতা দিবসে বাংলানিউজকে তিনি খুলে বলেন তার এসব ভাবনার কথা। ঠিক এক বছর আগে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপের কথাগুলোরই অনেকটা প্রতিধ্বনি টের পাওয়া যায় তার বক্তব্যে।
ফেরদৌসী বলেন, ‘‘নতুন প্রজন্মের ওপর অগাধ আস্থা নিয়ে বেঁচে আছি। আমার শক্তি, সম্বল ওই একটাই। নতুন প্রজন্মের মাধ্যমেই আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ হবে। ’’
নিজের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘শারীরিক শক্তি এখন অনেক কমে গেছে। মনের টানে দাঁড়াই। ’’
২৭ ও ২৮ মার্চের হরতালের সমর্থনে গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘‘আজ স্বাধীনতার দিন। আজও হরতাল সমর্থকরা, স্বাধীনতাবিরোধীরা সহিংসতা করেছে, গাড়ি পুড়িয়েছে। নিজেদের শক্তি প্রমাণ করতে চাইছে। খুবই দুঃখ, লজ্জার কথা। ’’
এজন্য তিনি সরকারের সমালোচনাও করেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই শক্ত ও সচেতন থাকলে এমন হতো না। সরকারকেও আমাদের শাসন করতে হবে। তাদের ভুল ধরিয়ে দিতে হবে। ’’
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যতো দ্রুত সম্ভব করে ফেলার পক্ষপাতী তিনি। বলেন, ‘‘যতো দিন গড়াচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধীরা আরো শক্তিশালী হচ্ছে। বিচারে কালক্ষেপণ না করে দ্রুত বিচার কাজ সমাধা করে ফেলা উচিৎ। ’’
সরকারকে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন ফেরদৌসী। বলেন, ‘‘সরকারের আগাছাগুলো বাছাই করে ফেলতে হবে। মন্ত্রীদের আশেপাশে হাত কচলে চাটুকারিতা যারা করে, তারাই সরকারের মূল শত্রু। তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। না হলে সরকার কখনোই জনবান্ধব থাকতে পারবে না। ’’
তিনি বলেন, ‘‘সরকারকে সত্যিকারের ভালো লোক চিনতে হবে। ভালোদের পাশ কাটিয়ে চাটুকারদের কাছ ঘেষতে দিলে পরিণতি খারাপই হবে। ’’
ফেরদৌসী বলেন, ‘‘এখন সবাইকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। আরাম-আয়েশ করে কাটানোর সময় নেই আর। সবাইকে রাস্তায় নেমে পড়তে হবে। ’’
তিনি বলেন, ‘‘এখন দায়িত্ব আরো বেড়ে গেছে। গনজাগরণ বেড়েছে। এই সময়েই দেশকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে নিতে হবে। ’’
ফেরদৌসী বলেন, ‘’২১ বছর রাজপথে থেকেছি। নানাভাবে সংঘবদ্ধ হয়েছি। এবার সুফল দেখতে চাই। ’’
তিনি শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের তরুণদের প্রশংসা করেন, বলেন, ‘‘তারা সর্বশক্তি নিয়ে কাজ করছে। তাদের সঙ্গে থাকতে হবে। এই শক্তিকে আরও বাড়াতে হবে। ’’
মনে করিয়ে দেন, ‘‘আন্দোলনের দেড় মাস হয়ে গেছে। ’’
গণমাধ্যমের কৌশল পরিবর্তনের কথাও বলেন তিনি। তার মতে, ‘‘স্বাধীনতাবিরোধীদের সহিংসতার খবর বেশি ফলাওভাবে প্রচার করলে তাদের উৎসাহ আরো বাড়বে। এক্ষেত্রে কৌশলী হতে হবে। এসব খবর বুঝে-শুনে প্রচার করতে হবে। ’’
চট্টগ্রামের গণজাগরণ সমাবেশে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যাপারে কিছুটা উদ্বেগ প্রকাশ পায় তার কথায়। ফেরদৌসী বলেন, ‘‘যেভাবে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে তাতে সেখানে নিরাপত্তার বিষয়টি ঠিকঠাক দেখা হচ্ছে কিনা জানি না। অন্যায়কারীদের সুযোগ দেওয়া যাবে না। ’’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গও টানেন তিনি। ফেরদৌসী বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার আচরণ দুঃখজনক। স্বাধীনতাবিরোধীদের পক্ষে কথা বলছেন তিনি। তাকে মানুষ হত্যার দায় নিতে হবে। ’’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সঙ্গে যুক্ত ফেরদৌসী বলেন, ‘‘বেঁচে থাকতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখতে চাই। এ বিচার দেখার অপেক্ষায় প্রতিটি মুহূর্ত কাটাচ্ছি আমি। ’’
ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী ১৯৪৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি খুলনা জেলা শহরের ডাকবাংলা মোড়ের কাছে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম রওশন হাসিনা, বাবার নাম সৈয়দ মাহবুবুল হক। ১১ ভাই-বোনের মধ্যে ফেরদৌসীই সবার বড়।
খুলনার পাইওনিয়ার গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি এবং খুলনা গার্লস স্কুল থেকে এইচএসসি ও স্নাতক ডিগ্রি নেন প্রিয়ভাষিণী।
কর্মজীবনেও অনেকটা বৈচিত্র্যময় সময় পাড়ি দেন তিনি। স্কুলে শিক্ষকতা বা কারখানার টেলিফোন অপারেটর থেকে শুরু করে কানাডিয়ান দূতাবাসসহ অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদেও চাকরিতে কেটে যায় ১৯৭৭ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত।
এরপরে ঝুঁকে পড়েন শিল্পকর্মের দিকে। এ কাজেই খোঁজেন পরিতৃপ্তি। ঝরাপাতা, মরা ডাল বা গাছের গুঁড়ির নানামুখী ব্যবহার তার শিল্পকর্মকে করে তোলে আরো বৈচিত্র্যময়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৬ ঘন্টা, মার্চ ২৬, ২০১৩
এসকেএস/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর- eic@banglanews24.com