খুলনা: ‘হরতালে শহরে মারামারি অয়, গোলাগলি অয় বোমা পড়ে মানুষ মরে। যার লইগা হরতালে ডর লাগে বাজান।
তিনি বলেন, “হরতাল দিলে গরীবের বিপদ। হাতে টাকাও আসে না। এই কারণে না খাইয়া থাকতে হয়। পরপর এত হরতাল, এইটা কোনো কথা ওইল? হরতালের দিন আমার ধার করে চলতে হয়। ”
রিজিয়া বেগম(৭০)। খুলনা মহানগরীর বাইতি পাড়ার মোড়ে অস্থায়ীভাবে ৩৫ বছর ধরে ফুটপাতে পান, সিগারেট, কলা ও রুটি বিক্রি করেন। বয়সে বৃদ্ধ হওয়ায় ক্রেতারা সবাই তাকে ‘নানী’ ডাকে।
তিনি নগরীর মুড়ি পট্টি এলাকার একটি বস্তিতে দিনমজুর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বসবাস করে আসছেন বহুদিন ধরে। প্রতিদিন দোকানে যা বিক্রি হয় তার অর্থ দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। তাই হরতালের দিন দোকান খুলতে না পারলে ওইদিন কষ্টে দিন কাটাতে হয়।
বুধবার সকালে ১৮ দলের হরতাল চলাকালে রিজিয়া বেগম বাংলানিউজকে তার এসব দুঃখের কথা বলেন।
রিজিয়া বেগম বলেন, “ আজীবনই বাজান কষ্ট করে আইছি। ছোটবেলায় বাপ ছিল না। ছোট ভাই বোনদের লইয়া পাকিস্তান আমলে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া অইতে খুলনা আইছি। কপাল খারাপ বাচ্চা ছোট থুইয়া ওর বাপেও মইরা গেছে। মানষের বাসায় কাজ করয়া বড় বানায়ছি। এহন আর শরীরে কুলায় না। ডান পায়ের দুইঢা আঙ্গুলে পচন লাগায় কাইডা ফ্যালাইছি। খাড়াইতেও কষ্ট অয়। ”
জায়গা জমি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন,“ স্বামী হাকিম হাওলাদারের কোনো ভিটে মাটি ছিল না। টাহার অভাবে নিজেও কিনতে পারি নাই। একটু জায়গার লাইগা বিভিন্ন নেতাদের কাছে কত আবেদন করছি। ভূমিহীনদের জমি দিবে বলে আমার কাছ তে টাহা নিছে। কিন্তু জমি দেয় না। ”
টাকা কে নেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ওরে বাবা তাগো নাম কওন যাবে না। ”
বিলাপ করে তিনি বলেন, “ একমাত্র ছেলেডার তেমন আয় রোজগার নাই। ওরও ভালো একটা কাজ ওইলোনা। ”
একইস্থানে ৩৫ বছর দোকানদারী করা প্রসঙ্গে রিজিয়া বেগম বাংলানিউজকে বলেন, “ এই মোড়ে ৭ বছর বয়সে বিয়ার আগেই আইছি। সবাই আমারে চেনে, ভালোবাসে। তাই, স্বামী মরার পরও এহানে দোকানদারী হরি। ”
বাংলাদেশ সময়: ০৬১১ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৩
সম্পাদনা: প্রভাষ চৌধুরী, নিউজরুম এডিটর