ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

উদ্ভাবন

নির্মাণ ব্যয় কমাবে পুরাতন কংক্রিট ব্যবহার

মাহবুব আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:০১, মার্চ ২৭, ২০১৩
নির্মাণ ব্যয় কমাবে পুরাতন কংক্রিট ব্যবহার

চট্টগ্রাম: বাংলাদেশে ভূমির তুলনায় জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় পুরাতন ও ছোট ভবন ভেঙ্গে দিন দিন বাড়ছে সুউচ্চ ভবন নির্মাণ। একারণে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কংক্রিটের (ইট, বালি, পানি আর সিমেন্টের মিশ্রণ) চাহিদা।

এই চাহিদা পূরণে নতুন ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে পুরাতন ভবনের কংক্রিটের স্তুপ সরাতে চরম ঝামেলা পোহাতে হয় নির্মাণ শ্রমিকদের।

আর এই কংক্রিট বর্জ্য যেমন নাগরিকদের নানা ভোগান্তির কারণ হয় তেমনি পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। কিন্তু এখন থেকে এই বর্জ্য আর নাজেহাল করবে না কাউকে। তা দিয়ে ফের নতুন নির্মাণ কাজ করা যাবে। যা পরিবেশ বান্ধব ও কমাবে নির্মাণ ব্যয়।

গবেষণা চালিয়ে এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে সদ্য পাশ করা দুই তরুণ প্রকৌশলী।

চুয়েট থেকে পাশ করা তরুণ প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান খান ও কায়সার আহমেদ দীর্ঘ এক বছর গবেষণা চালিয়ে এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। ‘ইভালুয়েশন অব শেয়ার স্ট্রেনথ ডেমুলিশ কংক্রিট’ শিরোনামে এ গবেষণা পরিচালনা করেন তারা।  

এক বছর গবেষণা চালিয়ে তারা পরিবেশকে বিপর্যয় ও নাগরিকদের নির্মাণ ব্যয় কমাতে নতুন ইট-পাথরের কিছু অংশের পরিবর্তে পুরাতন কংক্রিট পুনরায় ব্যবহারের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।  

এ পদ্ধতিতে পুরনো কংক্রিট ব্যবহার করে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি নির্মাণ ব্যয় কমবে বলে মনে করছেন তরুণ এ দুই প্রকৌশলী।

প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন,‘বাংলাদেশে সাধারণত পুরাতন কংক্রিট ফেলে দেওয়া হয়। এটি আমাদের কাছে কোনো বাজার মূল্য নেই। আমরা এনিয়ে গবেষণা করেছি। গবেষণায় দেখা গেছে বিভিন্ন স্থাপনার নির্মাণ কাজে নতুন ইট বা পাথরের কিছু অংশের পরিবর্তে ফেলে দেওয়া পুরাতন কংক্রিটের বর্জ্য ব্যবহার করলে নির্মণ খরচ কমবে। এতে পরিবেশও বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে। ’

গবেষকরা জানান, প্রতি বছর ভবন, সেতু, মহাসড়ক, বাঁধসহ বিভিন্ন পুরকৌশল বিষয়ক নির্মাণে গড়ে ১২ বিলিয়ন টন কংক্রিটের দরকার হয়। এজন্য ১০ বিলিয়ন টন ইট ও পাথর (এসরিগেট) প্রয়োজন। এছাড়া ইট তৈরি, পাথর উত্তোলণ এবং কংক্রিট বর্জ্যের অব্যবস্থাপনা যেমন পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে তেমনি বাড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণতাও।

নির্মাণ কাজে এর ব্যবহার সর্ম্পকে তরুণ প্রকৌশলীরা বলেন, ‘ পুরাতন কংক্রিটের পুন:ব্যবহার হবে সাশ্রয়ী, পরিবেশ বান্ধব ও নির্মাণ সহায়ক। নতুন কংক্রিটের (ইট ও পাথর) বদলে অনেক ক্ষেত্রে পুরাতন কংক্রিটের একাংশ পুনরায় ব্যবহার করে ঢালাই (কংক্রিট) তৈরি করলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড কম নি:সরন হবে। এছাড়া নির্মাণের ক্ষেত্রে এ বর্জ্য ব্যবহার করা গেলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ কমবে অন্যদিকে সাশ্রয় হবে নির্মাণ খরচ। ’

বাংলানিউজকে তরুণ গবেষক আসাদুজ্জামান জানান, গবেষণায় তারা  পাঁচটি  অনুপাতের নতুন ও পুরাতন কংক্রিটের মিশ্রণে তৈরি কংক্রিট সিলিন্ডার ও বীমের শক্তি পর্যবেক্ষণ করেন।   এসব নমুনার বিভিন্ন পরীক্ষা ও গুণগত মান বিচার করে দেখা  হয়। এসময় বিভিন্ন অনুপাতের মিশ্রণের মধ্যে নতুন এবং পুরাতন এগরিগেটের মিশ্রণ সবচেয়ে ভাল মানে পৌঁছে বলে তিনি জানান।  

তিনি বলেন,‘নতুন ইট বা পাথরের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত পুরাতন কংক্রিট দ্বারা অপসারণ করলে যে শক্তি সম্পন্ন কংক্রিট পাওয়া যায় তা দ্বারা নির্মাণ কাজ করা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে পুরাতন ইট ও পাথরের ঘনত্ব ২১০০ কেজি/ঘনমিটারের বেশি, শোষণ ক্ষমতা ৫০ শতাংশের এর কম এবং অপদ্রব্য ১ শতাংশের কম হওয়া দরকার। ’

গবেষণা কর্মটির তত্ত্বাবধানে ছিলেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদ ওমর ইমাম।

তিনি বলেন, ‘নতুন ইট-পাথরের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত রিসাইকেল এসরিগেট (পুরাতন কংক্রিট) দিলে কম খরচে গ্রহণযোগ্য শক্তি সম্বলিত নির্মাণ সম্ভব। পাশাপাশি নির্মাণ প্রক্রিয়াও পরিবেশ বান্ধব হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯ ১৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৩
এমবিএম/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।