ঢাকা: মানুষের মনস্তত্ত্বকে বোঝার বৈপ্লবিক প্রচেষ্টায় একটি নতুন উদ্যোগ নিয়েছে হোয়াইট হাউস। দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে আধুনিক বিজ্ঞান সৌর জগতের অনেক কিছুই উদ্ভাবিত করতে সাহায্য করেছে আর তৈরি করেছে সেই সব অদৃশ্য পদার্থের বিশদ মডেল যে সব মডেল পৃথিবীর অনেক রহস্যকে উন্মোচন করেছে, তৈরি করেছে অনেক নতুন নতুন বস্তু।
১০০ বিলিয়ন (১০ হাজার কোটি) নিউরনের তৈরি অসংখ্য সংযোগের একটি জটিল ও রহস্যময় যন্ত্র মানুষের মস্তিষ্ক! যার দিক-নির্দেশনামূলক কোন মানচিত্র বা নকশা বিজ্ঞানীদের কাছে নেই। কিন্তু তাই বলে কি এটা কখনো আবিষ্কার হবে না।
এই আফসোস খুব শিগগির শেষ হতে চলেছে হয়তোবা। কারণ, গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মানব দেহের সবচেয়ে রহস্যজনক মস্তিষ্কের সম্মুখভাগের রহস্যন্মোচনের জন্য ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের (১০ কোটি) অনুদান সাপেক্ষে ‘ব্রেইন ইনিসিয়েটিভ’ প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এটা প্রাথমিক অনুদান বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ কাজের অগ্রগতি হলে অনুদান আরও বাড়বে, অতএব প্রকল্প সাফল্যের দিকে এগোলে শেষ দেখা পর্যন্ত ছাড়ছেন না বিজ্ঞানীরাও।
হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলনে ওবামা বললেন, “এই প্রকল্পের ফল হাতে এলে বিজ্ঞানীরা সে সব নির্দেশনা পাবেন যেসব নির্দেশনা মতো কর্মরত মস্তিষ্কের গতিশীল ছবি পাওয়া যাবে। এতে করে আমরা কিভাবে চিন্তা করি, শিক্ষা গ্রহণ করি এবং মনে রাখি তা অনেক স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবো। ”
ওবামা বলেন, “এই প্রকল্প সফল হলে মস্তিষ্কে কিভাবে তথ্য সংরক্ষিত, উদ্ধৃত এবং ব্যবহৃত হয় তা বুঝতে পারবো আমরা। বিজ্ঞানীরা আলযাইমার, পারকিন্সন এবং প্রতিবন্ধিত্ব’র মত মস্তিষ্কজনিত রোগগুলো সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানতে পারবেন। ”
এ প্রকল্পের ব্যাপারে অস্ত্রেলিয়ার ‘নিউরোসায়েন্স রিসার্চ’র প্রধান পিটার শোফিল্ড বলেন, “প্রকল্পটি অত্যন্ত উচ্চাভিলাসী হলেও অবশ্য ফলপ্রাপ্তির যোগ্য। ঠিক এমনি ছিল মানব জিনোম আবিষ্কারের প্রকল্পও। ”
অধ্যাপক শোফিল্ড বলেন, “এটা মোটেও ব্যর্থ প্রয়াস হবে না, যে নতুন রহস্য এ প্রকল্পের মাধ্যমে উন্মোচিত হবে তা খুব দ্রুত মানুষ ও তার মানসিকতার অস্থিতিশীলতাকে একত্রিত করে প্রদর্শন করবে। ”
দশকের পর দশক ধরে মস্তিষ্ক গবেষণা এবং মস্তিষ্কের প্রতিচ্ছায়ায় প্রগতির অর্থ হিসেবে মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম অংশ যা মৌলিক মানবীয় কার্যক্রম যেমন ভাষা, অনুভূতি, স্মৃতি আর ভয়কে নিয়ন্ত্রণ করে এমন বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
অধ্যাপক শোফিল্ড আরও বলেন, “এখনও অনেক অতিসূক্ষ্ম বিষয় বুঝতে বাকি, যেমন- কিভাবে এই সকল সংযোগ কাজ করে এবং যখন স্মৃতি তৈরি হয় তখনকার সঠিক ধারাবাহিকতা অথবা যখন মস্তিষ্ক স্মৃতিচারণ করে তখনকার ধারবাহিকতা। যদিও আমরা জানি হিপ্পোক্যাম্পাস স্মৃতি তৈরিতে জড়িত, আর আলযাইমারের সময় ওটাই ক্ষয়ে যায় এবং কিছু টেস্ট টিউব মডেল থেকে দেখা যায় কোনকিছু শেখার কাজটা হয় হিপ্পোক্যাম্পাসেই। ”
প্রকল্পটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর মানব মস্তিষ্ক প্রকল্পকে অনুসরণ করবে। এছাড়া গবেষণায় অসংখ্য উপাত্ত তৈরির মাধ্যমে কম্পিউটার মডেল এবং মস্তিষ্ক ব্যাজ তৈরি করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
বাংলাদেশ সময় : ১৩৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৩
সম্পাদনা : বুশরা ফারিজমা হুসাইন ও হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর