ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

শুরু হচ্ছে পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী “বৈসাবী’ উৎসব

অপু দত্ত, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:২৬, এপ্রিল ৭, ২০১৩
শুরু হচ্ছে পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী “বৈসাবী’ উৎসব

খাগড়াছড়ি: আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। এপ্রিলের মাঝামাঝি বাংলা নববর্ষের পাশাপাশি উদযাপিত হবে পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী “বৈসাবী” উৎসব।



তাই পাহাড়ে এখন উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। শহরসহ প্রত্যন্ত এলাকায় চলছে বর্ষ বিদায় এবং বর্ষ বরণের শেষ প্রস্তুতি।

ঘরে ঘরে ইতিমধ্যে সাজ সাজ রব পড়েছে। সন্ধ্যার পর দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। কেউ কিনছে কাপড়, কেউ ঘর সাজানোর জিনিস। আবার কেউ উৎসব উপলক্ষে আগত অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনছে। এরই মধ্যে জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা শহুরে মানুষগুলো পাহাড়ে আসতে শুরু করেছে। হরতালসহ নানা প্রতিবন্ধকতা এড়াতে অনেকে আগে ভাগে এসে পড়েছেন। অনেকে দল বেধে রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে আসছেন।

পাহাড়ের বর্ষবরণ মানে ভিন্ন কিছু। তাইতো পর্যটকরা এই উৎসব দেখতে অনেক আগে থেকে পরিচিতজন বা নিজেরাই যোগাযোগ করে স্থানীয় আবাসিক হোটেলে সিট বুকিং দিয়ে রেখেছেন। অনেকে আবার এরই মধ্যে পরিচিত জনের বাসায় এসে উঠেছেন।  

“বৈসাবী”উৎসবকে মূলত পাহাড়ে বসবাসরত তিন আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাৎসরিক একটি উৎসবকে বোঝানো হয়। এখানে বৈ-তে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের উৎসব বৈসু, সা-তে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই এবং বি-তে চাকমা সম্পদ্রদায়ের বিজু উৎসবকে বোঝানো হয়।

বৈসু: ১২ এপ্রিল থেকে ত্রিপুরা সম্প্রদায় তিন দিনব্যাপী এই বৈসু উৎসব করে থাকে। প্রথমদিন হারি বৈসু, দ্বিতীয় দিন বৈসু এবং শেষদিন অনুষ্ঠিত হয় বিশিল কাতাল। হারি বৈসুতে ত্রিপুরা তরুণ-তরুণীরা বন জঙ্গল থেকে ফুল সংগ্রহ করে।

তারপর বাড়ি ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ফুল দিয়ে সাজায়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং সাজানো থেকে বাদ পড়েনা গৃহপালিত পশু-পাখিরাও। দ্বিতীয়দিন বৈসুতে সকালে ছেটরা প্রণাম করে বড়দের আশির্বাদ নেয়। তারপর প্রায় ২৮ ধরনের সবজির মিশ্রণে তৈরি করা হয় বিশেষ পাঁচন। যা আগত অতিথিদের পরিবেশন করা হয়।

তৃতীয় দিন অর্থ্যাৎ ১৫ এপ্রিল ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের দিনপঞ্জী অনুযায়ী নতুন বছর। ওইদিন ছোটরা বড়দের গোসল করিয়ে বস্ত্র দান করে এবং মন্দিরে মন্দিরে পূজা দিয়ে থাকে।

সাংগ্রাই: ১৪ এপ্রিল থেকে মারমা সম্প্রদায় এই সাংগ্রাই উৎসব চারদিন ধরে করে থাকে। চারদিন যথাক্রমে সাংগ্রাই, আক্যে, আটাদা এবং আতং অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এই চারদিনই বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খেলা, অতিথি আপ্যায়ন, বিশেষ পাঁচন রান্না করে উৎসব উদযাপন করে থাকে।

বিজু: ১২ এপ্রিল থেকে চাকমা সম্প্রদায় তিনদিন ধরে এই বিজু উৎসব উদযাপন করে থাকে। এর প্রথমদিন ফুল বিজু, দ্বিতীয়দিন মূল বিজু এবং  শেষদিন অনুষ্ঠিত হয় গজ্জাপজ্জা। ফুল বিজুর দিন সকালে চাকমা তরুণ-তরুণীরা বন-জঙ্গল থেকে ফুল এনে ঘরবাড়ি সাজায়। আবার অনেকে সবার মঙ্গল কামনা করে নদীতে ফুল ভাসিয়ে দেয়। বাকি দুইদিন বিভিন্ন সামাজিক আনুষ্ঠানিকতায় উদযাপন করা বিজু উৎসব।

এদিকে, এবারের বাংলা নববর্ষ এবং বৈসাবী উদযাপন উপলক্ষে পাবত্য জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন, সম্মিলিত বৈসাবী উদযাপনের পক্ষ থেকেও ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৩
    
সম্পাদনা: শিমুল সুলতানা, নিউজরুম এডিটর /eic@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।