বান্দরবান: পুরনো বছরকে পেছনে ফেলে আসে নতুন বছর, আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে তিন পার্বত্য জেলার মারমা আদিবাসীরা “সাংগ্রাই” আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে।
প্রতিবছর আদিবাসীদের ঘরে “সাংগ্রাই” আসে নতুন সাজে।
আগামী ১২ এপ্রিল থেকে বান্দরবান পার্বত্য জেলার আদিবাসী মারমা সম্প্রদায়ের চার দিনব্যাপী নব বর্ষবরণ উৎসব “সাংগ্রাই” শুরু হচ্ছে। নববর্ষ বরণের এ আয়োজনকে ঘিরে এখন থেকেই পাহাড়ে বিভিন্ন স্থানে চলছে ব্যাপক আয়োজন।
সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে পার্বত্য জেলায় শুরু হয়েছে আনন্দের বন্যা। দেশের অন্যতম পর্যটন শহর বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ির বিশেষ করে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা সম্প্রদায় পুরাতন বর্ষকে বিদায় ও নবর্বষকে স্বাগত জানিয়ে বর্ষ বিদায় ও বর্ষবরণ উৎসব উদযাপন করে।
বান্দরবান পার্বত্য জেলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ আদিবাসী মারমা, রাঙামাটির চাকমা ও খাগড়াছড়ির ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসবাস। চাকমা সম্প্রদায়রা এ উৎসবকে বিঝু, মারমারা সাংগ্রাই এবং ত্রিপুরারা বৈসু বা বৈসুক বলে। ত্রিপুরাদের বৈসুর (বৈ), মারমাদের সাংগ্রায়ের (সা) চাকমাদের বিঝুর (বি) থেকে “বৈসাবি”।
এছাড়া ১৩ এপ্রিল পুরাতন রাজার মাঠ থেকে শোভাযাত্রা, ১৪ এপ্রিল সাঙ্গু নদীতে বুদ্ধ মূর্তি স্নান, ১৫ এবং ১৬ এপ্রিল পুরাতন রাজবাড়ি মাঠে পানি বর্ষণ উৎসবের মধ্যে দিয়ে দুর্গম এলাকার আদিবাসী পল্লীর বিভিন্ন স্থানে মারমারা সাংগ্রাইয়ের আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎসবে মেতে উঠবে। ১৯ এপ্রিল ধর্ম দেশনা শ্রবণ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানের ইতি টানা হবে।
মারমা আদিবাসীদের কাছে বর্ষবরণের এ উৎসব “সাংগ্রাই” নামে পরিচিত।
বান্দরবান সাংগ্রাই কমিঠির সভাপতি অং চ মং মার্মা বাংলানিউজকে জানান, আনন্দঘন আয়োজনে সাংগ্রাই উৎযাপনের জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বান্দরবানের তংচঙ্গ্যা সম্প্রদায় ১২ এপ্রিল জেলার সদরের রেইছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ঘিলা খেলার আয়োজন করছে। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন- পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী দীপংকর তালুকদার এবং বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বীর বাহাদুর এমপি, পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যা শৈ হ্লা প্রমুখ।
এ ব্যাপারে উৎসব কমিটির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ তংচঙ্গ্যা বাংলানিউজকে জানান, বিষুকে কেন্দ্র করে ঐতিহ্যবাহী ঘিলা খেলার আয়োজন করা হয়েছে।
২০১০ সালে সাংগ্রাই উৎসবে স্থানীয় সাংবাদিকদের মারধর এবং পানি দিয়ে ইচ্ছামূলকভাবে ক্যামেরা নষ্ট করে দেওয়ার কারণে জেলার পুরানো রাজ বাড়ির মাঠে সংগ্রাইয়ের বড় আয়োজন সংবাদিকরা বর্জন করে আসছে। এ বছরও এই অনুষ্ঠান বর্জন করা হবে বলে জানান স্থানীয় সাংবাদিকরা।
প্রতিবছর এ আয়োজন দেখতে বান্দরবানসহ অপর পার্বত্য জেলায় পর্যটকদের ভিড় পরিলক্ষিত হলেও এবার হরতাল ও অবরোধের কারণে পর্যটকদের উপস্থিতি দেখা যাবেনা এমন মনে করছে পর্যটন ব্যাবসায়ের সঙ্গে থাকা সংশ্লিষ্টরা।
বান্দরবান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, বান্দরবানের এ উৎসবকে ঘিরে উৎসবস্থলে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৩
সম্পাদনা: শামীম হোসেন, নিউজরুম এডিটর