ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

ইশারা দিয়েই অ্যাপ চলবে

শেরিফ আল সায়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৩৩, এপ্রিল ১০, ২০১৩
ইশারা দিয়েই অ্যাপ চলবে

ইমাজিন কাপের চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেওয়া তরুণদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবে। বাংলাদেশ যে উদ্ভাবনী তরুণদের হাতেই গড়ে উঠবে এ কথাও নিশ্চিত করে বলা যায়।

এ বছর ইমাজিন কাপের বাংলাদেশ পর্বে দ্বিতীয় হয়েছে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ‘টিম ব্লু’।  

এ দলে আছেন ৪ বন্ধু। শাহরিয়ার হোসেন, আসিফ উর রহমান, জায়েদ তালুকদার এবং আসাদুল আমিন। চার বন্ধুর তৈরি প্রকল্পের নাম ‘প্রজেক্ট সেন্স’।    

ইমাজিন কাপের সব প্রকল্পই উইন্ডোজ ফোননির্ভর। বিভিন্ন অ্যাপের সঙ্গে হার্ডওয়্যারের সংযোজনও করা যাবে। সে লক্ষ্যেই টিম ব্লু যারা কানে শুনতে পায় না এবং কথা বলতে পারে না, তাদের জন্যই একটি উইন্ডোজ অ্যাপ তৈরি করেছেন।

এ দলের অন্যতম সদস্য শাহরিয়ার হোসেনের সাথে কথা বলে বাংলানিউজ। তিনি বলেন, ২০১১ সালের ইমাজিন কাপে অন্ধদের জন্য একটি অ্যাপলিকেশন তৈরি হয়। তখন থেকেই মাথায় ছিল বিষয়টি। শুধু অন্ধ কেন! অ্যাপ হতে হবে সবার জন্য। সব প্রতিবন্ধীদের জন্য অ্যাপলিকেশন তৈরি হওয়া উচিত। সে লক্ষ্যই টু-ওয়ে কমিউনিকেশন নিয়ে আমাদের চিন্তা ভাবনা শুরু হয়।

এটি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণামূলক প্রকল্প ছিল বলেও জানান শাহরিয়ার। তারপর সেটির বর্ধিত অংশ নিয়েই ৪ বন্ধু কাজ শুরু করেন।

কাজ শুরুর সময় তারা অর্থের বিষয়টিও চিন্তা করেছেন। এর আগে এ ধরনের যত সেবা বিশ্বব্যাপী চালু আছে সেগুলোর মূল্য মার্কিন ডলারে ১২০০ থেকে ২০০০ ডলার।

সুতরাং বাংলাদেশের কথা চিন্তা করলে এ মূল্য অনেক বেশি। সুতরাং যে কোনো সেবা হতে হবে কম মূল্যে। এ ছাড়াও হার্ডওয়্যারেরও বিষয়টি তারা চিন্তা করেছে। যে কোনো সেবা গ্রহণ করতে গেলে হার্ডওয়্যারও সঙ্গে নিয়ে থাকা সম্ভব না।

এ ভাবনা থেকেই মোবাইল অ্যাপলিকেশনের কথা মাথায় আসে। কারণ প্রতিটি মানুষের হাতে মোবাইল ফোন থাকে।

প্রজেক্ট সেনসে তিনটি মডিউলের কথা বলেন শাহরিয়ার। প্রথমটি টেক্সট কমিউনিকেশন। এটি সম্পর্কে তিনি বলেন, কেউ কথা বলতে পারে না বা কানে শুনতে পারে না। সে কোনো প্রশ্ন করতে চায়। এবং উত্তরও চায়।

এ কাজটা করার জন্য মোবাইলের টেক্সট অপশনে গিয়ে লিখে দিলেই হবে। তখন সে ভয়েস জেনারেট করবে। এতে যার কাছে সহযোগিতা চাওয়া হবে তার সুবিধা হবে। কিন্তু সে যখন উত্তরটি দেবে তখন ভয়েস জেনারেট হলেই তো পূর্ণ সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।

এ জন্যই আমরা প্রতিবন্ধীদের জন্য আবিষ্কৃত বিশেষ সাংকেতিক ভাষার ভিডিও জেনারেট করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এতে যিনি শুনতে পান না তার সুবিধা হবে।

দ্বিতীয় মডিউল সম্পর্কে শাহরিয়ার বাংলানিউজকে বলেন, টেক্সট লেখার দরকার নেই। আপনার কাছে একজন প্রতিবন্ধী মানুষ এসে তার মোবাইলটি দিল। আপনি ভিডিও অপশন চালু করে তার সামনে ধরলেন। তিনি ইশারায় তার সাংকেতিক ভাষায় প্রশ্ন করবেন। এ প্রশ্ন চলে যাবে সার্ভারে। সার্ভার সাংকেতিক ভাষাকে প্রসেস করে ভয়েস জেনারেট করে মোবাইলের পর্দায় তুলে দেবে। সঙ্গে টেক্সটও থাকবে। এতে আপনি প্রশ্ন জানতে পারবেন।

ঠিক একই ভাবে আপনি উত্তর দিবেন। এ ভয়েসটি চলে যাবে সার্ভারে। সার্ভার সেটিকে প্রসেস করে আবার মোবাইলে সাংকেতিক ভাষায় উত্তরটির ভিডিও জেনারেট করে পাঠিয়ে দেবে। এতে করে প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে খুব সহজেই কমিউনিকেশন তৈরি করা সম্ভব।

তৃতীয় মডিউলটি হলো লার্নিং। এই সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ বা সাংকেতিক ভাষায় অনেকেই কথা বলতে জানে না। তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতেই এই মডিউলটি তৈরি করা হয়েছে।

নিজেদের এ অ্যাপ সম্পর্কে শাহরিয়ার বলেন, এটির জন্য শুধু সার্ভার খরচ গুনতে হবে। যেহেতু ইমেজ প্রসেসিংয়ের একটি বিষয় আছে। তাও মাত্র ৩ ডলারের মত খরচ লাগবে। এ ছাড়া পুরো অ্যাপটি এখন পর্যন্ত ফ্রি।

নিজেদের এ উদ্ভাবনের কৃতিত্ব তারা দিতে চান আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক অভিষেক আহমেদকে। তার সহযোগিতায় পুরো কাজটি সফলভাবে শেষ করা সম্ভব হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ৬ এপ্রিল ইমাজিন কাপের বাংলাদেশ পর্বের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। বাংলাদেশ পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ‘বুয়েট ১০১’ দল এবং দ্বিতীয় হয় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ‘টিম ব্লু’।

বাংলাদেশ সময় ১৫১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৩
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।