ময়মনসিংহ : আগে হালখাতা উৎসবের কার্ড ছাপা হতো। কার্ডে হিন্দু ব্যবসায়ীদের জন্য মাটির সরাতে কলাগাছের পাতা, ডাব এবং উপরে হিন্দু দেবতা গণেশের ছবি থাকতো।
অনুরূপভাবে মুসলিম ব্যবসায়ীদের কার্ডে থাকতো মসজিদের মিনার। এ উভয় রীতির মধ্যেও ছিল হালখাতার আমন্ত্রণ। কিন্তু এখন আর ময়মনসিংহের গ্রাম-গঞ্জে হালখাতার কার্ড ছাপা হয় না।
বাংলা বছরের প্রথম দিনে এ উৎসবও খুব একটা পালন হয় না। অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলা নববর্ষের প্রাণ এ উৎসব।
তবে নিছক ঐতিহ্য হিসেবে ময়মনসিংহ শহরের গুটিকয়েক হিন্দু ব্যবসায়ী এ উৎসব পালন করেন। পয়লা বৈশাখে নতুন হিসাবের পাতা খুলেন।
জানা গেছে, ময়মনসিংহের গ্রামে-গঞ্জে আগে বেশ ঘটা করেই হালখাতা উৎসব হতো। দোকানে সাজ সজ্জার পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা তাদের পাওনাদারদের কাছ থেকে বকেয়া টাকা আদায় করে নতুন হিসাবের খাতা খুলতেন।
এ সময় তাদের লুচি আর রসগোল্লা দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো। এখন আর সেই দিন নেই।
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার পোড়াকান্দুলিয়া বাজারে প্রায় দু’শ দোকানের মধ্যে মাত্র ৭ থেকে ৮টি দোকান পয়লা বৈশাখে হালখাতা উৎসব হচ্ছে। তবে কার্ড ছাপিয়ে নয়, মুঠোফোনে কল করে কিংবা ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে।
বাংলা বছরের প্রথম দিনে হালখাতা উৎসব করা পোড়াকান্দুলিয়া বাজারের ক্ষুদে ব্যবসায়ী কামাল খান বলেন, “কার্ড ছাপানো বাড়তি ঝামেলা। এ কারণে মোবাইলে কাস্টমারদের মিষ্টি খাওয়ার দাওয়াত দিয়েছি। ”
নববর্ষের প্রথম দিনে হালখাতা উৎসব না হওয়ার কারণ জানিয়ে পোড়াকান্দুলিয়া বাজারের ব্যবসায়ী শহীদুল্লাহ সরকার জানান, “এক সাথে সবাই হালখাতা করলে সব বকেয়া উঠে না। সবাই পাওনা পরিশোধ করে না। ”
এ কারণে বৈশাখের শেষের দিকে কৃষকের ঘরে নতুন ধান উঠার পর হালখাতা উৎসব হবে।
তবে ঐতিহ্য হিসেবে বছরের প্রথম দিন হালখাতা উৎসব করেন ময়মনসিংহ শহরের বড় বাজার এলাকার ব্যবসায়ী অখিল দেবনাথ (৬০)।
তিনি জানান, “৩০ বছর ধরে এ উৎসব করছি। এখন মোবাইলেই সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। ক্রেতার সঙ্গে ভোক্তার সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় করার জন্য দিনটি গুরুত্বপুর্ণ। ”
বাংলাদেশ সময়: ০৪৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৩
সম্পাদনা: হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর-eic@banglanews24.com