ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

স্টিভকে সফল করেছেন ডেনিস!

শেরিফ সায়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৫২, এপ্রিল ১৬, ২০১৩
স্টিভকে সফল করেছেন ডেনিস!

স্টিভ জবস পাল্টে দিয়েছেন বিশ্ব প্রযুক্তির ধারণাকে। এ কথা নতুন নয়।

কিন্তু স্টিভ সফল হয়েছেন ডেনিস রিচির জন্য এ কথা সহজেই কেউ মানতে নারাজ।

স্টিভ জবসকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। তবে ডেনিস এখনও অনেকের কাছে অচেনা, অজানা একজন মানুষ। অথচ এ মানুষটির জন্যই প্রযুক্তিবিশ্বে বিপ্লব এসেছে।

ডেনিস প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সি-এর জনক। তার এ উদ্ভাবনের ফলে তৈরি হয়েছে সফটওয়্যার ছাড়াও এ সময়ের মোবাইল অ্যাপলিকেশন।

ডেনিস কম্পিউটার বিজ্ঞানী। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞান এবং গণিতে পড়াশোনা শেষ করেছেন ১৯৬০ সালে। তার বাবা জনপ্রিয় বেল ল্যাবের গবেষক ছিলেন।

তখন থেকেই গবেষণার প্রতি ছিল তার অদম্য আগ্রহ। তার স্বপ্নই ছিল বাবার মতো বেল ল্যাবে বসে তিনি গবেষণার কাজ করবেন। এ লক্ষ্য নিয়েই তিনি বেল ল্যাবে কাজ করার সুযোগ পান।

সে সময় পিএইচডির গবেষণারও কাজ করে যাচ্ছিলেন। ডেনিস রিচি ১৯৬৮ সালে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। এরপরই তিনি ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেমের জন্য সি-প্রোগ্রামিং নিয়ে কাজ শুরু করেন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত কাজ করে তিনি কম্পিউটারের পরিচালনায় নতুন ভাষার সৃষ্টি করেন।

কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা তখনই এ ভাষা নিয়ে বিভিন্ন কাজ শুরু করেন। একে বলা হয় কম্পিউটার বিজ্ঞানের মাতৃভাষা। তবে এ মাতৃভাষাকে জনপ্রিয় করতে দিনরাত কাজ করেছেন ডেনিস। তিনি সি-প্রোগ্রামিংয়ের ওপর প্রবন্ধ ছাড়াও একটি বহুল জনপ্রিয় বইও লিখেছেন।

ডেনিস উদ্ভাবিত এ ভাষা এখন নিত্যনতুন সফটওয়্যার তৈরিতে কাজে লাগছে। এমনকি অ্যাপল অ্যাপ, অ্যানড্রইডের অ্যাপ তৈরিতেও কাজে লাগছে এ সফটওয়্যার।

তবে তার আগে সি-প্রোগ্রামিং মাইক্রোকন্ট্রোলার, সিকিউরিটি সিস্টেম, জিপিএস স্যাটালাইট, ভেহিক্যাল সিস্টেম, ট্র্যাফিক লাইট, ইন্টারনেট রাউটার, ডিজিটাল ক্যামেরা, আধুনিক টেলিভিশন এবং ওয়েব সার্ভার তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। প্রযুক্তিবিশ্বে অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন এনে দেয় এ ভাষা।

অন্যদিকে স্টিভ জবসও প্রযুক্তিজগতে এনেছেন আমূল পরিবর্তন। তবে যখন ডেনিস কাজ শুরু করেছিলেন তখন পার্সোনাল কম্পিউটার ছিল না। প্রযুক্তি তখনও এতটা বিস্তার লাভ করেনি। কিন্তু স্টিভ জবস যখন কাজ শুরু করেন, তখন ডেনিসের কল্যাণে প্রযুক্তিবিশ্বে যুক্ত হচ্ছে নিত্যনতুন সব আবিষ্কার।

অনেকেই বলেন, স্টিভ বিজ্ঞানী কিংবা প্রকৌশলী নন। কিন্তু স্টিভের ছিল অসীম উদ্ভাবনী ক্ষমতা। এ বিষয়ে একটি গল্পও প্রচলন আছে। গল্পটি এমন- স্টিভ তখন আটারি নামে এক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। উদ্দেশ্য টাকা জমিয়ে ভারত ভ্রমণে যাবেন। আটারি তাকে একটি গেইম তৈরির কাজ দেয়।

মূলত সার্কিট ডিজাইনের মাধ্যমে গেমটি তাকে তৈরি করতে বলা হয়। এটি তৈরি করতে পারলেও বোনাস হিসেবে স্টিভকে ১০০ ডলার দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। স্টিভ সার্কিট ডিজাইনের কাজ পারে না। কিন্তু তারপরও তিনি কাজটি নেন।

পুরোনো বন্ধু ওজনিয়াকের কাছে গিয়ে এ কাজের কথা বলেন। সঙ্গে এও বলেন, কাজটি করতে পারলে ১০০ ডলার বোনাস পাওয়া যাবে। এ বোনাস দুজনে মিলে ভাগাভাগি করে নিবেন। সুতরাং ওজনিয়াক কাজটি করে দেওয়ার জন্য রাজি হন। করেও দেন সফলভাবে।

এই হলেন স্টিভ জবস। তিনি জানেন, কাকে দিয়ে কোন কাজটি করানো উচিত। অনেক প্রযুক্তিবিদেরা বলেছেন, স্টিভ যোগ্য ব্যক্তি খুঁজে বের করতে দারুণ পারদর্শী। তিনি যোগ্য লোক খুঁজে বের করে আনেন। তাদের দিয়ে কাজ করিয়ে ব্যবসায় সফলতা অর্জন করেন।

এবারে আসা যাক বিতর্কের প্রশ্নে। সাধারণ মানুষের চোখে প্রযুক্তিবিশ্বের স্বপ্নদ্রষ্টা স্টিভ জবস। অন্যদিকে অনেকটা আড়ালেই রয়ে গেলেন মূল আবিষ্কারক ডেনিস রিচি। স্টিভ স্বনামধন্য সিইও হয়ে ওঠেন।

কিন্ত ডেনিস সাধারণ জীবন যাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন। আড়ালে শুধু গবেষণার কাজই করে গেছেন। তবে সত্যি কথা হলো দুজন আসলে দু মেরুর মানুষ। একজন বিজ্ঞানী ও ভাষা গবেষক। আরেকজন ব্যবসায়ী ও উদ্ভাবক। দুজনই নিত্যনতুন দূরদর্শী ভাবনা নিয়ে মাত করেছেন পুরো বিশ্ব।

তবে আজ দুজনই স্রষ্টাই নেই। স্টিভ মারা যান ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর। অন্যদিকে একই বছরে ১২ অক্টোবরে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যান ডেনিস। কিন্তু স্টিভ যেভাবে বিশ্ব মিডিয়ায় সরব ছিলেন, সেভাবে দেখা যায়নি ডেনিসকে। সৃষ্টি কখনও স্রষ্টাকে হারিয়ে যেতে দেয় না। ডেনিসের বেলায়ও যেন একই কথাই প্রযোজ্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৩
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।