বিলাইছড়ি( রাঙামাটি): ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা আর আমেজের মধ্য দিয়ে শেষ হলো পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অন্যতম ঐহিত্যবাহী অনুষ্ঠান ‘বৈসাবি’।
পুরোনো বছরের গ্লানি ও কালিমাকে ধুয়ে মুছে নিজেদের সংস্কৃতি চর্চার মধ্যদিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে বরণ করতে পাবর্ত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় ভ্ন্নি ভিন্ন আয়োজন করা হয় বৈসাবির।
কিন্তু কালের বিবর্তনে এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় ক্ষুদ্র এসব জাতিগোষ্ঠীকে হারাতে হচ্ছে অনেক ঐতিহ্য-সংস্কৃতি। ঐহিত্যঘেরা তাদের এ উৎসবে অতিরিক্ত আধুনিকতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
‘বৈসাবি’ উৎসবকে মূলত পাহাড়ে বসবাসরত তিন আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাৎসরিক একটি উৎসবকে বোঝানো হয়। ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের উৎসব বৈসু, মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই এবং চাকমা সম্প্রদায়ের বিজু উৎসবের নামগুলোর আদ্যাক্ষর দিয়ে সম্মিলিত এ উৎসব বোঝানো হয়।
মূলতঃ চৈত্রমাসের শেষের দুই দিন এবং নতুন বছরের প্রথম দিন বিজু উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। এ তিন দিনে পূর্ব পুরুষদের পালিত (মেনেচলা) কতগুলো রীতি-নীতি থাকলেও এখন এসব মেনে চলতে তেমন আর দেখা যায় না। বিজুর এ তিন দিন ভোরে পশু-পাখি না জাগার আগে শরীরের রোগব্যাধি ও অশুচিকে ধুয়ে-মুছে পবিত্র করার জন্য স্নানের প্রতিযোগিতা হতো। কে প্রথম গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে আসতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলত। যাকে বলা হয় বিজুগুলো (বিজু ফল) খাওয়া। ভোরে স্নানের পর ফুল বিজুর দিনে সকালে নানা ফুল সংগ্রহ করে মা গঙ্গার (জল বুদ্ধের) উদ্দেশ্যে মঙ্গলময় প্রার্থনা দ্বারা পানিতে ভাসানো হতো। এর পর একই দিনে সকালে পুরো সমাজে (পাড়ায়) একে অন্যের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মোরগ-মুরগীর খাদ্য (ধান, চাল) উঠানে ছিটিয়ে দেওয়া হতো। নতুন বছরের প্রথম দিনে স্থানীয় কবিরাজ বা বৈদ্যদের তিল পড়া, করলা শাক সিদ্ধ পড়া, নারিকেলের পানি পড়া ইত্যাদি মন্ত্র দ্বারা পড়ে খাওয়ানো হতো। এগুলো সারা বছর কুষ্ঠ রোগ, বসন্ত ও কলেরা না হওয়ার জন্য প্রতিষেধক হিসেবে খাওয়াতেন বলে পূর্ব পুরুষরা বলে থাকতেন।
এছাড়া দুই গ্রুপের প্রতিযোগিতায় সারারাত কেরচিনের বোম্বা’র (বাঁশের তৈরি বাতি) সাহায্যে ঘিলে খেলা প্রতিযোগিতা হতো। এ খেলা যার বাড়ির উঠোনে সারারাত পোহানো হতো সে বাড়ির মালিককে পরদিন দুপুরে মুরগি কিংবা শুকর জবাই করে ভাত খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হতো। কিন্তু এসব রীতি এখন প্রায় বিলুপ্ত হতে বসেছে।
এ বছরও পার্বত্য অঞ্চলের বিজুতে বিভিন্ন সমাজে এসবের তেমন আয়োজন করা হয়নি বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
বংশ পরম্পরায় লালন করে আসা এসব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য আধুনিকতার করালগ্রাসে হারিয়ে যেতে বসেছে। আশু উদ্যোগ না নিলে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র গোষ্ঠীগুলোর এসব চিরায়ত ঐহিত্য হয়তো এক সময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৩
সম্পাদনা: সোহেলুর রহমান, নিউজরুম এডিটর