কানে শুনতে না পেলেই মানুষটি দেখতে অসুন্দর। সমাজের এমন ধারণা দুঃখজনক।
সম্প্রতি ডেনমার্কের ওটিকন ফাউন্ডেশন ও আইডিএ ইনন্টিটিউট সম্মিলিতভাবে এ সমস্যা সমাধানে এক উদ্যোগ নেয়। এধরনের স্টিগমাকে চিরতরে রুখে দিতেই একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
‘আইডিয়াজ, স্পিক আপ-অ্যাকশন অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস ফর হিয়ারিং লস’ শিরোনামে বিশ্বব্যাপী চলে এ প্রতিযোগিতা। যেখানে মূলত হিয়ারিং এইডের ব্যবহার ও দূর্বল শ্রবণশক্তির মানুষদের মনোবল ফিরিয়ে দিতে সৃষ্টিশীল আইডিয়া চাওয়া হয়।
যে কোনো বয়স, দেশ বা শিক্ষাগত যোগ্যতার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য উন্মুক্ত এ প্রতিযোগিতা শুরু হয় ২০১২ সালের মার্চে। চলে ২০১৩ সালে এপ্রিল পর্যন্ত। প্রতিযোগিতার শেষ পর্বে সেরা ৩ আইডিয়া দেওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করা হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১৩০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অংশ নেয় এ প্রতিযোগিতায়। এবং সেরা তিন আইডিয়ার একটি বাংলাদেশের মাইন্ডক্র্যাফটস অ্যাডভার্টাইজিংয়ের ক্রিয়েটিভের পরিচালক শরীফুল ইসলাম।
পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যানাহেইম থেকে দেশে ফিরে শরীফুল জানান, ‘বিজ্ঞাপনেরই কোনো একটা ওয়েবসাইটে প্রতিযোগিতার বিষয়ে জানতে পেরে আমার আইডিটা সাবমিট করি। মাসখানেক আগে আয়োজকরা জানায়, শীর্ষ তিনের মধ্যে আমার আইডিয়াও আছে। ’
শরীফুল প্রকল্পটি সম্পর্কে বলেন, আমার আইডিয়াটির নাম ছিল ‘ডিফ স্ট্যাচুস (লুক হু ইজ হিয়ারিং)’। হিয়ারিং এইডের স্টিগমা নিয়ে একটু পড়াশোনা করতেই দেখলাম হিয়ারিং এইড জিনিসটার সাথে চশমার পদ্ধতিগত তেমন কোন পার্থক্যই নেই। চশমা সাহায্য করে চোখকে, আর হিয়ারিং এইড কানকে।
হিয়ারিং নিয়ে আজ যেই স্টিগমা আছে চশমা প্রচলিত হওয়ার সময় থেকে অনেক দিন পর্যন্ত চশমা নিয়েও ছিল এমন স্টিগমা, যা আস্তে আস্তে সময়ের সাথে দূর হয়ে গেছে। বর্তমান সময়ে তো চশমা ব্যবহার হয় ফ্যাশন উপকরণ হিসেবেও। এ থেকে বুঝতে পারলাম যে সমস্যাটা আসলে পুরোপুরি মানুষের পছন্দ-অপছন্দের।
তাই হিয়ারিং এইড মানুষকে দেখতে অসুন্দর করে- এই পারসেপশনটাকে বদলে ফেলার জন্য প্রথমে খুঁজতে চাইলাম মানুষের সৌন্দর্যের ধারণা যেখান থেকে তৈরি হয়। সৌন্দর্যের আদিতম উৎসগুলির একটি হল ভাস্কর্য। যেকারণে এখনও পৃথিবীর প্রায় সব কালচারেই সুন্দর গঠনের ছেলেমেয়েদের তুলনা করা হয় গ্রীক দেব-দেবীর সঙ্গে।
‘ডিফ স্ট্যাচুস (লুক হু ইজ হিয়ারিং)’ মূলত একটি অ্যাক্টিভেশন আইডিয়া। একদিনের জন্য পৃথিবীর বিখ্যাত সব স্ট্যাচুদের পরিয়ে রাখা হবে হিয়ারিং এইড। এই বিশেষ হিয়ারিং এইড ডিজাইনের জন্য আহবান করা হবে ওই শহরের সব শিল্পীদের। সেদিন যারাই স্ট্যাচু দেখতে আসবেন, তারা দেখবেন স্ট্যাচুর কানে লাগানো শৈল্পিক এক বিশেষ হিয়ারিং এইড।
কৌতুহলী হয়ে যখন তারা জানতে চাইবেন স্ট্যাচু অব লিবার্টি অথবা ক্রাইস্ট দি রিডিমার-এর কানে ওটা কি, তখন তাদের জানানো হবে হিয়ারিং এইড সম্পর্কিত স্টিগমার কথা। বলা হবে কিভাবে নিজে সচেতন হয়ে এবং অন্যদের সচেতন করে তারা সাহায্য করতে পারেন বহু মানুষকে।
শরীফুল ইসলামের পাশাপাশি আরো যে দুজন সেরা হয়েছেন। তারা হলেন ডেনমার্কের ক্যাসপার রুবিন ও ইংল্যান্ডের কার্টিস এলকট। ক্যাসপার রুবিনের আইডিয়া ছিল শ্রবণশক্তি পরীক্ষার একটি পকেট আকারের কার্ড তৈরি করা এবং কার্টিস এলকটের আইডিয়া ছিল শ্রবণশক্তি পরীক্ষা উৎসাহিত করতে তিন বাদরের পরিচিত নিমোনিকটি ব্যবহার করা (চোখ পরীক্ষা, দাঁত পরীক্ষা ও শ্রবণশক্তি পরীক্ষার জন্য দুই হাতে চোখ, মুখ আর কান ঢেকে রাখা তিনটি বাদর)।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৩
সম্পাদনা: শেরিফ সায়ার, বিভাগীয় সম্পাদক (sheriff.sire@gmail.com)