ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

মধ্যপ্রদেশের নয়নাভিরাম খাজুরাহো ও ভূপাল

লিয়াকত হোসেন খোকন, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:০৪, এপ্রিল ২৩, ২০১৩
মধ্যপ্রদেশের নয়নাভিরাম খাজুরাহো ও ভূপাল

ঢাকা : মধ্যপ্রদেশের মন্দিরনগরী হিসেবে খ্যাত খাজুরাহো। এখানে রয়েছে সেরা দ্রষ্টব্যস্থান।

এখানকার মন্দিরগুলো বানিয়েছিলেন চান্দেলা রাজবংশের রাজারা। সময়টা ছিল ৯৫০-১০৫০ খ্রিষ্টাব্দ।

জুরাহোর মন্দিরগুলো ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত। মন্দিরের গায়ে অনবদ্য কারুকার্য আজও জ্বলজ্বল করছে।

পুরাণ থেকে শৃঙ্গার সবই ফুটে উঠেছে পাথরের গায়ে। ভালোভাবে দেখতে সারা দিন লেগে যাবে। খাজুরাহোর পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ অংশে মন্দিরগুলো ছড়িয়ে আছে। যার মধ্যে পশ্চিমাংশের মন্দিরগুলো সব থেকে আকর্ষনীয়। তার গঠনশৈলী আর কারুকার্যের জন্য।

পশ্চিমাংশের মন্দিরগুলো হেঁটেই দেখে নিন। আর পূর্ব ও দক্ষিণাংশের মন্দিরগুলো দেখার জন্য অটো ভাড়া করুন।

পশ্চিমাংশে দেখবেনÑ মহাদেব, চিত্রগুপ্ত, , জগদম্বা, চৌষট যোগিনী প্রভৃতি মন্দির। এখানে প্রতিদিন সন্ধেবেলা অনুষ্ঠিত হয় লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো।

খাজুরাহোর সব মন্দির খোলা থাকে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। এখানের মাতঙ্গেশ্বর শিবমন্দির ছাড়া অন্যান্য কোনো মন্দিরেই পুজো হয় না।

পূর্ব অংশের মন্দিরগুলো সবই জৈন মন্দির। এখানে দেখুন শান্তিনাথ, ঘণ্টাই, আদিনাথ, পার্শ্বনাথ জৈন মন্দির। দুলাদেও, বিজামল আর চতুর্ভুজ মন্দির রয়েছে দক্ষিণাংশে।

এছাড়া খাজুরাহোর এএসআই মিউজিয়াম, লোককলা মিউজিয়াম ও ৩০ কিলোমিটার দূরের পান্না অভয়ারণ্য দেখে নিতে পারেন। পান্না বেড়ানোর জন্য অতিরিক্ত আরেকটা দিন বরাদ্দ করুন।
 
কীভাবে যাবেন : হাওড়া থেকে ৯৩০৬ শিপ্রা এক্সপ্রেস (ছাড়ে সোম, বৃহস্পতি, শনি), ২৩২১/২৩৫৭ মুম্বাই মেল ট্রেনে চেপে সাতনা নামুন।

সেখান থেকে খাজুরাহো ১১৭ কিলোমিটার। বাস যাচ্ছে খাজুরাহোর ১০ কিলোমিটার আগে বামিঠা  পর্যন্ত। সেখান থেকে জিপ যাচ্ছে খাজুরাহোতে।

খাজুরাহো থেকে দূরত্ব : গোয়ালিয়র ২৭৫ কিলোমিটার, জব্বলপুর ২৯৬ কিমি।

কোথায় থাকবেন : মধ্যপ্রদেশ পর্যটনের হোটেল ঝঙ্কার ২৭৪০৬৩, ভাড়া ১১৯০ টাকা, পায়েল ২৭৪০৭৬, ভাড়া ৬৯০-১১৯০ টাকা, রাহিল ২৭৪০৬২, ভাড়া ৪৯০ টাকা।

প্রাইভেট হোটেল : লেকসাইড ২৭৪১২০, ভাড়া ৫৫০-৯২৪ টাকা, গৌতম ২৭২৬৭৫, ভাড়া ৪৫০-৯৫০ টাকা।
খাজুরাহোর এসটিডি কোড : ০৭৬৮৬।
 
ভূপাল : এছাড়াও মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভূপাল আধুনিকতা ও  ইতিহাসকে একসঙ্গে নিয়ে গড়ে উঠেছে। ভূপাল শহর ও শহরের বাইরের দ্রষ্টব্য স্থানগুলো দেখার জন্য এখানে দুটি দিন বরাদ্দ করুন ভ্রমণসূচিতে।

দশম শতকে পারমার রাজা ভোজ এই শহরের গোড়াপত্তন করেন। ৫০০-৬০০ রুপিতে অটো নিয়ে ঘুরে নিন স্থানগুলো। শহরের মুসলিম প্রধান শহর ভূপালের জুমা মসজিদ, তাজউল দীন মসজিদ, মোতি মসজিদের গঠনশৈলী ও কারুকার্য দেখার মতো।

শহরের পুরনো অংশের সদর মঞ্জিল, শওকত মহল প্রাসাদগুলোতে বর্তমানে সরকারি অফিস বসেছে। শহরের মাঝে রয়েছে দুটি হ্রদ- আপার লেক ও লোয়ার লেক।

হ্রদের জলে বোটিং করা যায়। হ্রদের ধারে দেখবেন অ্যাকোয়ারিয়াম, ভারত ভবন, আদিবাসী সংগ্রহশালা। হ্রদ লাগোয়া পথ চলে গিয়েছে বনবিহার চিড়িয়াখানায়।

এটি প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য জাতীয় উদ্যানের তকমা পেয়েছে। প্রবেশমূল্য ১৫ টাকা। খোলা থাকে সকাল ৭টা থেকে ১১টা ও বেলা ৩টা থেকে সন্ধে ৬টা। মঙ্গলবার বন্ধ।

ভূপাল থেকে দিনে দিনে গাড়ি ভাড়া করে দেখে আসতে
পারেন ভোজনপুর-ভীমবেটকা। ভূপাল থেকে ভোজপুর ২৮ কিলোমিটার, ভীমবেটকা ৪৬ কিলোমিটার।

ভীমবেটকায় আদিম মানুষের আঁকা গুহাচিত্র দেখে বিস্মিত হতে হয়। গাড়িতে পৌঁছতে ঘণ্টা দেড়েক লাগে। ভোরবেলা রওনা হয়ে দুপুরে ফিরে আসা যায়।

ভূপাল থেকে ৪৬ কিলোমিটার দূরে বৌদ্ধতীর্থ সাঁচি বিখ্যাত। এখানকার বৌদ্ধ স্তূপগুলোর জন্য। এখানে সম্রাট অশোক বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা নেন বৌদ্ধ ভিক্ষু উপগুপ্তের কাছে।

ভূপাল থেকে সাঁচিতে প্রচুর বাস যাচ্ছে। সাঁচিতে অনেকগুলো স্তূপ রয়েছে। এছাড়া আছে পুরাতত্ত্ব মিউজিয়াম। সাঁচির   স্তূপগুলো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত।

এগুলোর গায়ে অপরূপ কারুকার্য। সাঁচিতে বৌদ্ধমন্দিরও রয়েছে। ভূপাল থেকে গাড়ি নিয়ে সাঁচি ঘুরতে খরচ বারোশ’ টাকা।

কীভাবে যাবেন : ১৯৩০৬ শিপ্রা এক্সপ্রেস প্রতি সোম, বৃহস্পতি, শনিবার সন্ধে ৫টা ৪৫ মিনিটে হাওড়া থেকে ছেড়ে পরদিন রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে ভূপাল পৌঁছায়।

১৯৬০৫ সারে জাঁহা সে আচ্ছা এক্সপ্রেস প্রতি শনিবার দুপুর ১টা ১০ মিনিটে কলকাতা টার্মিনাল থেকে ছেড়ে পরদিন সন্ধে ৭টা ৫৫ মিনিটে ভূপাল পৌঁছায়।

এছাড়া ১৩০২৫ হাওড়া-ভূপাল এক্সপ্রেস প্রতি সোমবার দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে হাওড়া থেকে ছেড়ে পরদিন সন্ধে সাড়ে ৬টায় ভূপাল পৌঁছায়। ইন্দোর থেকে ভূপালে বাস যাচ্ছে। প্রায় ৪ ঘণ্টার জার্নি।

কোথায় থাকবেন : মধ্যপ্রদেশ পর্যটনের হোটেল পলাশ রেসিডেন্সি ২৫৫৩০০৬, এসি দ্বিশয্যা ঘরের ভাড়া ২৬৯০ টাকা, এসি ডিলাক্স ঘরের ভাড়া ৩১৯০ টাকা এবং এসি স্যুটের ভাড়া ৪৯৯০ টাকা (সঙ্গে ব্রেকফাস্ট)।

হোটেল লেক ভিউ অশোক ২৬৬০০৯০, স্ট্যান্ডার্ড এসি ঘরের ভাড়া ৪৫০০ টাকা এবং এসি স্যুটের ভাড়া ৭০০০ টাকা।
 
 প্রাইভেট হোটেল : গৌরব- ২৭৪১২৫৪, ভাড়া ৫০০-১৪০০ টাকা। সূর্য ২৭৪১৭০১, ভাড়া ৬৬০-১১৫০ টাকা। শালিমার ডিলাক্স ৪২৫৬৩৫১, ভাড়া ৩০০-২২০০ টাকা।

মেঘদূত ২৭১৩৪০৭, ভাড়া ৪০০-১০০০ টাকা। গুলশন ৪২৫৯৮৯৫, ভাড়া ২০০ টাকা। রামা ইন্টারন্যাশনাল ২৭৪০৫৪২, ভাড়া ৪৫০-১০০০ টাকা। হোটেল শ্রীমায়া, ভাড়া ৯৫০-১৫০০ টাকা। রাজদূত গৌরব, ভাড়া ৯০০-১৪০০ টাকা। বুকিং : ২২২৬-৪৬৬১। ভূপালের এস টি ডি কোড : ০৭৫৫।

বাংলাদেশ সময় : ১২৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৩
সম্পাদনা: সুকুমার সরকার, আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।