ঢাকা: পূরবী সিনেমা হল, সকাল ৭টা। হরতালে বাসের চাপ কম রাস্তায়।
গাড়ি দেখলেই ছুটে দৌড়। কার আগে কে যাবে। চলন্ত গাড়ির হাতল ধরতে পারলেই হলো। এক লাফে গাড়িতে। পেটের দায়ে থাকেনা মৃত্যুর ভয়ও।
বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের ডাকা টানা ৩৬ ঘণ্টা হরতালের প্রথমদিন মঙ্গলবার সকাল ৭টায় রাজধানীর মিরপুরের পূরবী বাসস্ট্যান্ডে সংবাদপত্র বিক্রেতাদের চিত্র এটি।
এমনই একজন সুমন(৯)। থাকে মিরপুরের রূপনগরে। পরিবারে কে কে আছে জানতে চাইলে মা, খালা আর বোন আছে বলে জানায় সুমন। তবে বাবা নেই। মা একটি গার্মেন্টসে চাকরি করে।
মঙ্গলবার সকালে মিরপুর থেকে আজিমপুরগামী সেফটি পরিবহনের একটি গাড়ি দেখে দৌড় দেয় সে । উদ্দেশ্য সংবাদপত্র বিক্রয়। কিন্তু গাড়ির গতিপথ সর্ম্পকে ধারণা না থাকায় গাড়িতে ওঠার আগেই গাড়ির নিচে প্রায়ই চাপা পড়তে গিয়ে বেঁচে যায় সে।
জানতে চাইলে সুমন বলে, “ভাবছিলাম গাড়িটা পেছন দিকে যাইবো। কিন্তু পরে দেখি...। ” আর কিছু না বলে তাকিয়ে থাকে সুমন।
পড়াশুনা না জানা সুমন জানায়, প্রতিদিন সংবাদপত্র বিক্রি করে দু’ থেকে তিনশ’ টাকা আয় হয় তার। অনেক সময় আবার কমও হয়। তবে হরতালের দিন একটু ব্যতিক্রম। কারণ মানুষ বাইরে কম বের হয়।
বিক্রি করা সংবাদপত্রের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিন, আমাদের সময়, মানবকণ্ঠ, সকালের খবর ইত্যাদি।
সংবাদপত্র বিক্রি না হলে কি করা হয় জানতে চাইলে সুমন বলে, “যেদিন বিক্রি করতে না পারি সেদিন ক্ষতি হয়। পত্রিকাগুলো আগে কিনে আনতে হয়। তাই বিক্রি করতে না পারলে লস হয়। ”
রাজধানীর প্রায় প্রতিটি বাসস্ট্যান্ডে ভোর হতেই দেখা যায় এসব সংবাদপত্র হকারদের। টার্গেট অফিসগামী মানুষের হাতে দেশ-বিদেশের সংবাদ পৌঁছে দেওয়া। আর জীবিকা অর্জনের বিষয়টি তো থাকছেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোনো রকমে চলন্ত গাড়ির হাতল ধরেই উঠে পড়ে গাড়িতে।
আর একটু ভুল হলেই ঘটে যেতে পারে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যা আমাদের কারোই কাম্য নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৩