ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

বেড়ানোর সব উপকরন জলপাইগুড়িতে

লিয়াকত হোসনে খোকন, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:২৯, মে ২, ২০১৩
বেড়ানোর সব উপকরন জলপাইগুড়িতে

ঢাকা: পাহাড়, জঙ্গল, বণ্য প্রাণী, নদী, ঝরনা, চা-বাগান, শতাব্দীপ্রাচীন বনবাংলো এবং অতিথিবৎসল স্থানীয় মানুষজনের আন্তরিক ব্যবহার, সব মিলিয়ে ডুয়ার্স সম্পূর্ণ এক অন্য ভুবন। যার তুলনা মেলা ভার।



পশ্চিম ডুয়ার্স বেড়াতে হলে প্রথমে রেলপথে নিউ জলপাইগুড়ি জংশন স্টেশনে আসতে হবে। হাওড়া এবং শিয়ালদা স্টেশন থেকে প্রচুর ট্রেন রয়েছে নিউ জলপাইগুড়ি যাওয়ার।

নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে শিলিগুড়ির মিত্তল বাসস্ট্যান্ডে গেলেই ডুয়ার্সের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার বাস পাওয়া যাবে। যাঁরা গাড়ি ভাড়া করে ডুয়ার্স বেড়াতে আগ্রহী, তাঁদের পক্ষেও শিলিগুড়ি থেকে গাড়ি ভাড়া করাই ভালো।

মংপং
পশ্চিম ডুয়ার্সের প্রথম পর্যটনকেন্দ্রটি হলো মংপং। শিলিগুড়ি শহর থেকে দূরত ২৯ কিলোমিটার। শিলিগুড়ি থেকে মংপং যাওয়ার পথে পড়বে বিখ্যাত সেবকেশ্বরী কালীবাড়ি এবং কালীবাড়ির অদূরে অবস্থিত করোনেশন ব্রিজের ওপর দিয়ে তিস্তা নদী অতিক্রম করতে হবে।

তিস্তা নদী পার হওয়ার পর বেশ কিছুটা পথ ‘বানর কুলের নিয়ন্ত্রণে’ বললে ভুল বলা হবে না। এই পথে একটি সুন্দর ভিউ পয়েন্ট আছে- কিন্তু বানরদের অত্যাচার সহ্য করে কার সাধ্য ভিউ পয়েন্টে গিয়ে তিস্তা নদীর শোভা দেখা।

জনবিরল মংপংয়ে প্রকৃতিই প্রধান আকর্ষণ। ভোরের দিকে হাঁটতে হাঁটতে তিস্তা নদীর ধারে যেতে বেশ লাগবে। চোখে পড়বে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আর কানে আসবে তাদের বৃন্দগান।

কোথায় থাকবেন মংপংয়ে থাকার জন্য রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের চারটি কটেজ। সাধারণ কটেজের ভাড়া এক হাজার টাকা এবং বাতানুকূল ঘরের ভাড়া ১২৬০ টাকা। বাংলোর প্রাঙ্গণে গিয়ে দাঁড়ালে চোখে পড়ে তিস্তা নদীর পাহাড় থেকে নেমে সমতলে বয়ে চলা। বাংলোর অদূরেই রেললাইন চলে গিয়েছে শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার।

অগ্রিম ঘর বুকিংয়ের জন্য এ ঠিকানায় যোগাযোগ করতে হবে।

পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগম : ৬এ, রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার (৪র্থ তলা) কলকাতা-৭০০ ০১৩,  ২২৩৭-০০৬০/ ০০৬১।

মালবাজার
কলকাতার দিক থেকে মালবাজার যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ১৩১৪৯ কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে নিউমাল স্টেশনে পৌঁছে যাওয়া। এই ট্রেনটি প্রতিদিন রাত ৪টা ৩০ মিনিটে শিয়ালদা থেকে ছেড়ে পরদিন সকাল ৯টা ১০ মিনিটে নিউ মাল স্টেশনে পৌঁছায়।

স্টেশন থেকে মালবাজার শহরের দূরত্ব দেড় কিলোমিটার। শিলিগুড়ি থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরবর্তী মালবাজার যাওয়ার জন্য বাসের অভাব নেই।

মহকুমা শহর মালবাজারের জমজমাট বাজার এলাকা ছাড়িয়ে বেরিয়ে এলেই চোখে পড়বে চা-বাগানের অপরূপ বিস্তার আর দূরের পাহাড়। মালবাজারের প্রধান আকর্ষণ হলো মাল উদ্যান।

অনেকটা জায়গা নিয়ে বনদপ্তরের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে এই উদ্যান। এখানে চোখে পড়বে বেশ কিছু বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ এবং ফুলগাছ। যাঁদের বাগানের শখ আছে তাঁরা এখান থেকে ছোট ছোট টবে বসানো বিভিন্ন ধরনের ফুলগাছের চারাও কিনতে পারেন।

কোথায় থাকবেন
মালবাজারে রাত্রিবাসের জন্য রয়েছে রাজ্য পর্যটন দপ্তরের ট্যুরিস্ট লজ। লজের ছাদে চেয়ার নিয়ে বসলে শুধু পাখি দেখেই সময় কেটে যাবে। কারণ লজের পাশেই রয়েছে বড় বড় গাছপালা আর চা-বাগান।

মালবাজার ট্যুরিস্ট লজের ভোজনশালাটির বেশ সুনাম আছে। মালবাজারের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় অনেকেই এখানে চলে আসেন ভালো খাবারের আকর্ষণে।
মালবাজার লজে দ্বিশয্যাবিশিষ্ট ঘরের ভাড়া শুরু হয়েছে ৫০০ টাকা থেকে।

গরুমারা জাতীয় উদ্যান
গরুমারা জাতীয় উদ্যানের আয়তন ৯৮ বর্গকিলোমিটার হলেও এই অরণ্যের উদ্ভিদ এবং জীববৈচিত্র্য সত্যিই বিস্ময়কর। গরুমারার জঙ্গলে রয়েছে বুনো হাতি, গন্ডার, গাউর বা ভারতীয় বাইসন, চিতল, সম্বর, বার্কিং ডিয়ার, বুনো শুয়োর, বনবিড়াল, চিতাবাঘ, শিয়াল এবং বিভিন্ন প্রজাতির সরীসৃপ ও পাখি।

শিলিগুড়ি বা মালবাজার থেকে গরুমারা ন্যাশনাল পার্ক দেখতে হলে প্রথমে লাটাগুড়ি শহরে আসতে হবে। শিলিগুড়ি থেকে লাটাগুড়ির দূরত ৮০ কিলোমিটার আর মালবাজার থেকে দূরত ২৫ কিলোমিটার।

এছাড়া রেলপথে নিউ ময়নাগুড়ি স্টেশনে নেমেও লাটাগুড়ি আসা যায়, দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার।

গরুমারা জঙ্গলে প্রবেশ করার জন্য ডে-ভিজিট পাস সংগ্রহ করতে হবে লাটাগুড়িতে অবস্থিত বনদপ্তরের নেচার ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার থেকে।

জঙ্গলে ঢোকার অনুমতি মেলে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৪টা, সকাল সাড়ে ৪টা থেকে বেলা সাড়ে ১০টা আর দুপুর ১টা থেকে বেলা ৩টা এবং বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৫টা। ডে-ভিজিট পাস ইস্যু করা আরম্ভ হয় দিনে দুবার। সকালের শিফটের পাস দেওয়া হয় দিনে দুবার।

সকালের শিফটের পাস দেওয়া শুরু হয় ভোর সাড়ে ৫টা আর দুপুরের শিফটের পাস দেওয়া আরম্ভ হয় বেলা ১২টা থেকে। পাস সংগ্রহের সময় জঙ্গলে প্রবেশ করার জন্য মাথাপিছু অ্যান্ট্রি ফি, গাড়ির প্রবেশমূল্য এবং গাইডের ফি জমা দিতে হয়।

শুধু গরুমারাই নয়, ডে-ভিজিট পাস ইস্যু করা হয় চাপড়ামারির জঙ্গল এবং বেশ কয়েকটি ওয়াচটাওয়ারের জন্য। সমস্যা হলো প্রতি শিফটে মাত্র ২৫ জন পর্যটককে একেকটি জঙ্গল বা ওয়াচটাওয়ারে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

এর ফলে ভরা মরসুমে, বিশেষ করে পুজোর সময় ডে-ভিজিট পাস সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে বনভ্রমণ সুনিশ্চিত করতে বেশির ভাগ পর্যটক লাটাগুড়ি শহরে রাত্রিবাস করেন।

লাটাগুড়ি থেকে চালসার দিকে প্রায় ১০ কিলোমিটার যাওয়ার পর পথের ডান দিকে চোখে পড়বে গরুমারা জাতীয় উদ্যানের প্রবেশপথ। এখানেই চেকপোস্টে অনুমতিপত্র পরীক্ষা করে পর্যটকদের সঙ্গে একজন করে গাইড দেওয়া হয়।

চেকপোস্ট থেকে গরুমারা বনবাংলো-সংলগ্ন রাইনো পয়েন্ট প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে। এই বনপথ ধরে যাওয়াটাই এক দারুণ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। কপাল ভালো হলে এই পথেই দেখা হয়ে যেতে পারে একাধিক বন্যজন্তুর সঙ্গে।

বন্য প্রাণী দর্শনের জন্য রাইনো পয়েন্ট এবং কিছু দূরে অবস্থিত যাত্রাপ্রসাদ ওয়াচটাওয়ার বেশ ভালো জায়গা। আর কিছু না হোক, গন্ডার, বাইসন, বুনো শুয়োর, ময়ূর এবং একাধিক প্রজাতির হরিণের দর্শন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

লাটাগুড়িতে কোথায় থাকবেন  
লাটাগুড়িতে এখন হোটেলের ছড়াছড়ি। এদের মধ্যে কয়েকটির নাম নিচে দেওয়া হলো। ভরা পর্যটন মরসুমে বেশির ভাগ হোটেলের ভাড়াই ওঠানামা করে। হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে নেওয়াই ভালো। হোটেল গ্রিন লেগুন ( ২০৩১৭৭), হোটেল বনবিতান ( ৯৪৩৩৩-২১৯৫০, ৯৪৭৭১-৫২৬৬৪), রোজ ভ্যালি রিসর্ট ( ৯৮৩১৩-৯৯৯৮৮, ৯৮৩১৫-৯৯৯৮৮), পঞ্চবটী রিসর্টস ( ২৬৬২৮৪), হোটেল ডাইনেস্টি (৯৮৩০২-৬৪৭৯২), গ্রিন ভিউ হোটেল ( ২৬৬২৫৮), লেক ভিউ রিসর্ট।

বাংলাদেশ সময় : ১৫০৭ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৩
সম্পাদনা: সুকুমার সরকার, আউটপুট এডিটর 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।