ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

টেলিস্কোপ কারিগর আজাদ

স্বপ্নযাত্রা ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:০৫, মে ৮, ২০১৩
টেলিস্কোপ কারিগর আজাদ

রাতের আকাশের নক্ষত্ররাজি মন কাড়ে সকলের। উৎসুক মানব মন হয়তো আবার খুব কাছ থেকে এসব আলোর দলকে দেখতেও চেয়েছেন।

মনের সুপ্ত বাসনাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার জন্য কাজ করে যাওয়া এমনই এক তরুণ সাফায়াত আজাদ।
 
২০০৭ সালে অনার্স চতুর্থ বর্ষে থাকালে বাবা মারা গেলে সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় নানার দেওয়া উপহার হিসেবে হাতে পেয়েছিলেন হুমায়ুন আজাদের ‌মহাবিশ্ব নামক বইটি।

সে থেকেই জ্যোর্তিবিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ শুরু। বড় মামা আকাশ দেখতেন নিয়মিত। মামার সাথে মিশে সেই ছোটবেলায় চিনে নিয়েছেন মাথার উপরের আকাশ। ইচ্ছে ছিল ভবিষ্যতে এ নিয়ে পড়াশুনাও করবেন। তাই ২০০৬ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়াশনে। বেসিক অ্যাস্ট্রোনমির ২ মাসের কোর্সও করেন সেখানে। এরপর একে একে অনুসন্ধিৎসু চক্র, বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি এবং বিজ্ঞান যাদুঘরে যান উচ্চ শিক্ষা লাভের সন্ধানে। কিন্তু তা আর মিললো কই। সামান্য আকাশ দেখার জন্য একটা টেলিস্কোপ হন্য হয়ে ঘুরেও কারো কাছে পান নি তিনি। মনে মনে ভাবলেন নিজেই কেন তৈরি করে ফেলছি না একটা!

সে থেকেই শুরু। ২০০৯ সাল থেকে মনোনিবেশ করেন টেলিস্কোপ তৈরির পেছনে। চাকরি বাকরি করে কিছু টাকা পয়সাও জোগাড় করেন। ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত অনেক চেষ্টার পর একটা বেসিক লেভেলের টেলিস্কোপ তৈরিতে সফলও হন। নিজ হাতে বানান ১০০০ মিমি ৪ ইঞ্চি ব্যাসের নিউটনিয়ান টেলিস্কোপ। আরো বানান ২ ইঞ্চি গ্যালিলিয়ান টেলিস্কোপ। ট্রাইপড সহ যার দাম পড়ে মাত্র পাঁচ হাজার থেকে সাড়ে আট হাজার টাকা। শুরু করেন বাণিজ্যিকভাবে মার্কেটিং। সাড়াও আসে প্রচুর।

টেলিস্কোপের পর আজাদের লক্ষ্য এখন প্ল্যানেটেরিয়াম বানানো। বাইরের দেশে যেখানে ডোমসহ একটি প্ল্যানেটেরিয়ামের পেছনে খরচ পড়ে যায় তিন থেকে ১৭ লাখের মত, সেখানে আজাদের প্ল্যানেটেরিয়ামে খরচ পরবে মাত্র ৩০ হাজার টাকা। টেকনোলজিকে সহজ করে এনে মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য এতে ব্যবস্থা থাকবে ভয়েস কমান্ড সিস্টেমের। খুব শিঘ্রই বানাতে যাচ্ছেন বাইনোকুলার। ফর্মুলা রেডি। অভাব স্পন্সরের।
 
আজাদের কথায় সেই ক্ষোভ ধরা পড়ে সহজেই- আমাদের দেশে বিজ্ঞানের কোনো পৃষ্ঠপোষকই নেই। একটা গানের কিংবা নাচের অনুষ্ঠান করে দেখুন। দেখবেন কোটি কোটি টাকার স্পন্সর হামলে পড়ছে সেখানে। লোকে বলে এগুলা করে আমাদের কী কাজে লাগবে? এমনিতে আমদের দেশ শিক্ষায় অনেক পিছিয়ে আছে। ঢাকার মানুষ হয়তো একটু সচেতন। কিন্তু ঢাকার বাইরে গ্রামে যারা আছেন, সেখানকার মেধাবীদের জন্য সুযোগ সুবিধা নেই বললেই চলে।

আমরা দেখেছি ড. ইউনুস, ড. আতিউর রহমানের মত লোক গ্রাম থেকে উঠে এসেছে। গ্রামের কিছু লোককে একটু সাহায্য সহযোগিতা দিতে পারলে, তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনতে পারলে আমরা অচিরেই একটা বিজ্ঞান সচেতন জাতি উপহার দিতে পারবো। মজার ব্যাপার হলো অনেকে এখনো বিশ্বাস করে সূর্য গ্রহণ একটি দৈব ঘটনা মাত্র। এটা যে আসলেই হয় তা আর জানে না। জানলেও কেন হয় জানে না। যদি টেলিস্কোপ দিয়ে দেখাতে পারতাম চাঁদের ছায়া কিভাবে এসে সূর্যকে ঢেকে রেখেছে তাহলে তারা এই অন্ধ কুসংস্কার থেকে বের হয়ে আসতে পারতো। এভাবে আমাদের সুযোগ ও পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। হয়তো একদন বিশ্ব পরিমণ্ডলে তাঁরা কাজ করতে পারবে। এ জন্য যা দরকার তা হলো ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপ। নীল আর্মস্ট্রং এর ভাষায় বলতে হয়, ‘One small step for man, one giant leap for mankind’।

আমার এই টেলস্কোপ বানানোর লক্ষ্যও এরকম। একদিন হয়তো বাংলাদেশের প্রত্যেকটি ঘরে পৌছে যাবে আমার এই প্রয়াস। আপাতত সেদিনের অপেক্ষায়।

কৃতজ্ঞতা: জিরো টু ইনফিনিটি (বিজ্ঞানভিত্তিক পত্রিকা)

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৩
সম্পাদনা: শেরিফ সায়ার, বিভাগীয় সম্পাদক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।