সিলেট: যান্ত্রিক জীবনে মানুষের দৃষ্টি দূষণ এখন চরমে। প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে চায় মানুষ।
টি-টেস্টার মুরাদ হোসেন ও স্থপতি জেরিন হোসেন দম্পতির গড়ে তোলা দেশের প্রথম (প্রকৃতি নিবাস) রিট্রিট সিলেটের খাদিমনগরে।
গত রোববার বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সাব্বির আহমেদের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রকৃতি নিবাস ‘শুকতারা’র কথা বর্ণনা করেন মুরাদ-জেরিন দম্পতি।
তারা বলেন, “মানুষকে নিসর্গ দেখানো ও প্রকৃতি নিবাসী করতে তাদের সাধনা আর পর্যটকের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরার স্বপ্ন নিয়ে ‘শুকতারা’র রিট্রিট গড়ে তুলেছি। ”
এটি দেশের প্রথম কোনো রিট্রিট উল্লেখ করে টি-টেস্টার মুরাদ বলেন, “প্রকৃতি এখানে খুব কাছে। দূর পাহাড়ে সুদূর দৃষ্টি, সবুজ প্রকৃতি আর চা-বাগানে অবিশ্বাস্য সৌন্দর্য্যে ঘেরা ১৪ একর টিলাভূমি নিয়ে প্রকৃতি নিবাস গড়ে তোলা হয়েছে। ”
তিনি বলেন, “এ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি যত পর্যটক এখানে এসেছেন সকলেই বিমুগ্ধ। শুকতারার স্থাপত্য আর নির্মাণশৈলী এমন, যাতে প্রকৃতির গায়ে একটুও আঁচড় পড়েনি। বিদ্যুতায়ন আর শীতাতপ ব্যবস্থা ছাড়া বাকি সবই প্রকৃতিনির্ভর।
পরিদর্শন বই বের করে যখন দেখালেন। তখন শুরুতেই চোখ পড়লো নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত মি. জনের একটি মন্তব্য।
তিনি লিখেছেন ‘এখানে আবার আসতে চাই’।
শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে শান্ত প্রকৃতির সুশীতল হাওয়ায় সিন্ধগাতার গা হেলিয়ে দিয়ে প্রস্তুত যেন শুকতারার সবুজ প্রকৃতি।
জেরিন হোসেন বলেন, “মানুষকে প্রকৃতির সান্নিধ্যে নিয়ে আসতে তাদের এই উদ্যোগ। নগরে এখন দৃষ্টিদূষণ হয়ে গেছে। ময়লা-আবর্জনার গন্ধে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার মতো। শব্দ দূষণে মানুষ অতিষ্ঠ। তাই প্রাকৃতিক বাতাস, সুবজ সুনির্মল পরিবেশ আর পাখির কল-কাকলী সবই আছে এখানে। ”
তিনি আরো বলেন, “আমরা প্রকৃতি থেকে নগরজীবনকে এতো বিচ্ছিন্ন করেছি যে বুনো গাছ, প্রাকৃতিক গুল্ম এগুলোর সঙ্গে একটি সম্পর্ক যেন নেই। তাই এখানে তার সবই আছে। আর এসবে মূলে তাদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে তুলে ধরা। ”
তিনি প্রকৃতি নিবাস ঘুরে দেখান, এখানের সব আসবাবপত্র দেশের পণ্য দিয়ে তৈরী। স্থানীয় পণ্যকে পর্যটকদের কাছে তুলে ধরাই এর উদ্দেশ্য।
সান বাঁধানো পথ মাড়িয়ে সমতল থেকে প্রায় ৫০ ফুট উঁচুতে উঠলেই দেখা যায় শুকতারা প্রকৃতি নিবাস। এ পথে না উঠতে আছে শুকতারার ট্রেন সোজা পৌঁছে দেবে অভ্যর্থনা গৃহের সামনে।
টিলার চূড়ায় সুবজ গাছগাছালির আড়ালে চারতলাবিশিষ্ট ভবন। পাথরের ডাস্ট দিয়ে বিশেষ ইট দিয়ে তৈরী এই ভবন। কোথাও বিদেশি সাজসজ্যা নেই। দেশীয় পণ্যের পসরাই যেন সব। বেতের কারুকার্যময় আসবাপত্র।
তৃতীয় তলায় সাজানো গোছানো অভ্যর্থনা আর লাউঞ্জ। পাশেই পাঠাগার। এতে আছে দেশ-বিদেশের বই ও পত্র-পত্রিকা এবং বড় পর্দার টেলিভিশন। চায়ের দেশ সিলেটের ইতিহাস-ঐতিহ্য, আর ভ্রমণের বই-ই এর পাঠাগারের মূল বিষয়।
এর এক ছাদ নিচেই রেস্তোরাঁ। পাশেই সভাকক্ষ। চল্লিশজন একসঙ্গে সভা করতে পারবেন এখানে। একেবারে নিচের তলায় আছে ছোট একটি হোম থিয়েটার। এ ভবনটিতে স্থান পেয়েছে নানা রকম শিল্পকর্ম, চিত্রকর্ম আর আলোকচিত্র।
সভা-সেমিনার-কর্মশালা ও পার্টি আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে টিলার চূড়ায়।
সিলেটের আদি-ঐতিহ্যের ধারাকে মনে করিয়ে দিতে অভ্যর্থনায় থাকেন মনিপুরিসহ চা-জনগোষ্ঠীর লোকবল।
তারপর আরও ওপরে নির্মিত ছোট ছোট নিবাস, কটেজ নজর কাড়ে। ফুলের নামে একেকটি কটেজ। আছে নয়নতারা, বরুণ, শিরীষ, দোলনচাঁপা, মাধবী লতা, কামিনী, জুঁই, করবী, শিমুল, হিজল নামের কটেজগুলো। ঘরের ভেতরে খাট থেকে শুরু করে টেবিল-চেয়ার সবই সিলেটের ঐতিহ্য বেতের তৈরি আসবাব।
১১টি কটেজ থেকেই দেখা যায় চেরাপুঞ্জির দূর পাহাড় আর ঝর্ণাধারা। পাহাড়ের পর পাহাড় অবাক লাগানো সৌন্দয্য।
শুকতারা প্রকৃতি নিবাসের চারপাশেই আছে বেশকিছু অসাধারণ বেড়ানোর জায়গা। একটু সামনেই খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান, খাদিম চা বাগান, বরজান চা বাগান, শাহ বদরের মাজার, শাহ পরাণ, শাহজালালের (রহ.) মাজার, রাতারকুল জলের বন, সারি নদী, লালাখাল, জৈন্তা রাজবাড়ি, জাফলং, সারি নদী ইত্যাদি।
শুকতারার ভাড়া সমুহ
শুকতারায় বড় স্যুইট কক্ষ ভাড়া ৬,৫০০ টাকা, সেমি স্যুইট ৫৫০০ টাকা এবং ফ্যামিলি স্যুইট ৫০০০ টাকা। উইক ডেতে ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়। এর রেস্টুরেন্টে বাংলা, থাই, ইন্ডিয়ান, চাইনিজ খাবার পাওয়া যায়। আগ্রহীরা যেতে চাইলে ‘০১৭১২০৩০৮৫৭’ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া শুকতারার রিট্রিট-এর ওয়েবসাইট www.shuktararesort.com। এতে সবকিছুর বর্ণনা দেওয়া রয়েছে।
এছাড়াও শুকতারার ২টি রুম ভাড়া নিলে ১৫ ভাগ ছাড়, ৩টি রুম ভাড়া নিলে ২০ ভাগ। সব রুম ভাড়া নিলে ২৫ ভাড় ছাড়া পাওয়া যায়।
যাতায়াত ব্যবস্থা
সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের পাশে রিসোর্টটির অবস্থান। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের ওই রিসোর্টে যেতে ৪০ মিনিট সময় লাগবে। সিলেট রেলওয়ে স্টেশন বা বাসস্টেশন থেকে নেমে গাড়ি বা অটোরিকশাযোগে যেতে সময় লাগবে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট।
সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক ধরে হযরত শাহপরাণ মাজার গেটের একটু সামনে চৌমুহনীতে বাঁদিকে খাদিম জাতীয় উদ্যানের রাস্তা ধরে হাঁটলেই পাওয়া যাবে ‘শুকতারা প্রকৃতি নিবাস।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৩
এসএ/সম্পাদনা: বেনু সূত্রধর, নিউজরুম এডিটর, জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর