ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

কি করমু খায়া বাঁচন লাগবো তো?

মেহেদী হাসান পিয়াস, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬:৪১, মে ১৫, ২০১৩
কি করমু খায়া বাঁচন লাগবো তো?

ঢাকা: হরতাল, অবরোধ, বিপর্যয় যাই ঘটুক না কেন, রাত দশটা থেকে ভোর পাঁচটা সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত   বিরাম নেই তাদের। ট্রাক, পিকআপের পেছনে কার আগে কে লাগাবে নিজের ঠেলাভ্যানটিকে।

এ নিয়ে মহা ঠেলাঠেলি। এটি যেমন প্রতিযোগিতা, তেমনি জীবিকাযুদ্ধ। তবে এ যুদ্ধে তারা কেউ কারো শত্রু নয়, সহজীবী।  

বোঝা টাল করা প্রতিটি ট্রাক কিংবা পিক-আপ এসে ভিড়লেই ঠেলাভ্যান ওয়ালাদের শুরু হয় এ যুদ্ধ।     
রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ পাইকারি কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারের সব ক’টি প্রবেশপথে প্রতিরাতের দৃশ্য এটি।

প্রতিবারই প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় হন যে কেউ তিনজন। কোনো সময় চতুর্থ, পঞ্চম হওয়ার সুযোগও পান কেউ কেউ। তবে অপেক্ষাকৃত কম বয়সের লোকগুলো যুদ্ধে এগিয়ে থাকেন বেশিরভাগ সময়। শক্তি-সামর্থ্যের কারণেই তিন অবস্থানের যে কোনো একটি দখলে নেন তারা।      

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাঁচামাল বোঝাই করে প্রতিরাতেই শত শত ট্রাক, পিকআপ আসে কারওয়ান বাজারে। পণ্যবোঝাই এসব ট্রাক, পিকআপের কারণে রাত ১০টা থেকে রীতিমত যানজটের সৃষ্টি হয় ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার এলাকায়।

প্রতিটি ট্রাক কিংবা পিকআপ এ এলাকায় ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গেই অপেক্ষমান ঠেলাভ্যান ওয়ালারা ভ্যানের পেছন দিক সামনে ঝুঁকিয়ে দিয়ে হুমড়ি খেয়ে ছোটেন পণ্যবোঝাই এ যানের পেছন।

মূল রাস্তা থেকে আড়ৎ পর্যন্ত নিয়ে গেলে বস্তাপ্রতি পান ১৫ থেকে ৩০ টাকা। বস্তার আকার এবং পণ্যেও উপর নির্ভর করে বস্তার দাম।

মঙ্গলবার রাত পৌনে তিনটার দিকে সিএ ভবনের সামনে কাঁচামরিচ বস্তাবোঝাই একটি পিকআপ এসে ভিড়লে ভ্যানচালক মো. সুজন মিয়া চেষ্টা করলেও পেছনে পড়ে যান। তার কাছে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তিনি জানান, তার মতো এ বাজারে দেড় হাজার ঠেলাভ্যান চালক প্রতিরাতে এ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।

তিনি বলেন, মাল নিয়া ট্রাক বা পিকআপ এলেই আমরা ওইডার পিছনে ঠেকানোর চেষ্টা করি। ঠেকাইতে যায়া ঠেলাঠেলি হয়। ট্রাকের পেছনে মাঝখানে যে ঠেকাইতে পারে সে বেশি মাল টানব। এরপর মাইঝখানের ঠেলার ডাইনে যে থাকব সে। আর বামে যে থাকব সে বাকি দুইজনের চেয়ে কম মাল টানার সুযোগ পাইব। তবে ট্রাক, ভ্যান বড় অইলে আরো দু’একজন লোক বেশি লাগে।

এভাবে প্রতিরাত (ভোর) পাঁচটা পর্যন্ত একেকজন সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০টা ট্রিপ টানতে পারেন। আর এতে তাদের দৈনিক আয় হয় ৫-৬শ টাকা।

ট্রিপ নিয়ে রাজধানীর অন্য বাজারগুলোতে যান কি না জানতে চাইলে আরেক ঠেলাভ্যান চালক মো. সেকান্দার বলেন, এইখান থেকে অন্য বাজারে নিয়ো যাওয়ার ভ্যান আলাদা। আমাদেরগুলোর তো বডি, তিনডা চাক্কা (চাকা), হ্যান্ডেল ছাড়া প্যাডেল, চেইন, ব্রেক, বেইল কিছুই নাই। এইখানেতো ভ্যান চালানোর সুযোগ নাই, ঠেইল্যা-ঠেইল্যা মাল আড়তে নিয়া যাইতে হয়। এইডাতো ঠেলাভ্যান।

সেকান্দার আরো জানায়, শুকনা মালের চেয়ে কাঁচামালের বস্তার রেট একটু বেশি। সবচেয়ে বেশি কাঁচামরিচের বস্তার রেট। কাঁচামরিচের প্রতি বস্তা ৩০ টাকা, পেঁয়াজ ১৫ টাকা, শসা ১০ টাকা।

প্রতিরাতেই এই কাজই করেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেমনে ঠেলাঠেলি করতে হয় প্রতি রাইতে কেউই তা করতে পারে না। বয়স অল্প যাদের তারা তিন-চারদিন টানা কাজ করতে পারে। তাছাড়া বোঝা টানা কি সহজ কাজ?  

এভাবে প্রায় প্রতিদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যে আয় হয়, তা দিয়ে মোটামুটি ভালই চলে যায় তাদের সংসার। কিন্তু প্রায় প্রতি সপ্তাহে আবার কোনো কোনোদিন টানা হরতাল থাকলে মাল কম আসে।   তখন আয়ও কমে যায় তাদের।

সুজন, কুদ্দুস দুজনই জানান গত বছরও তাদের কোনো ঋণ ছিল না। কিন্তু ঘন ঘন হরতালের কারণে কাজ কমে যাওয়ায় তাদের আয় কমে গেছে। এই কারণে ঠেলাঠেলিও আগের চাইতে বাইরা গেছে। কি করমু খায়া (খেয়ে) বাঁচন লাগবো তো?

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩০ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৩
এমএইচপি/জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।