ঢাকা: রাজধানীতে জনবহুল এলাকায় লেবুর রস বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। গরমকালে মহানগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে তাদের দেখা যায়।
লেবুর রস দিয়ে তৈরি শরবত পথচারীর কাছেও পছন্দের পানীয় হিসেবে সমাদৃত। তারা এটি পান করেন কোনো ধরনের ভালোমন্দ চিন্তা না করেই। খোলা খাবারে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণও ঘটতে পারে।
তবে লেবুর রসে অনেক গুণ। এর শরবত একটি আদর্শ স্বাস্থ্যসম্মত পানীয়। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে যা, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। শরীরের কোনো অংশ কেটে গেলে ক্ষত নিরাময়েও সাহায্য করে এটি।
লেবুতে প্রচুর পরিমাণ সাইট্রিক এসিড থাকে, যা ক্যালসিয়াম নির্গমণ হ্রাস করে পাথুরী রোগ প্রতিহত করতে পারে। লেবুর যতই গুণ থাকুক না কেন, নগরীর পথচারীরা গরমে একটু গলা ভিজিয়ে নিতেই লেবুর রস পান করে থাকেন, অন্যকোনো চিন্তা না করেই। আর এদিকে অনেকের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি হয়।
নগরীতে লেবুর রসের শরবত বিক্রি করে অনেকে তাদের সংসার চালান।
মহানগরী ঘুরে জানা গেছে, বিক্রেতারা প্রতিদিন এক থেকে এক হাজার ২শ টাকার লেবুর রস বিক্রি করে আড়াইশ টাকা থেকে তিনশ টাকা আয় করে ঘরে ফেরেন।
ক্ষুদ্র বিক্রেতারা লেবুর রসের শরবতের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য এতে বিট লবণ, চিনির পানি ও বরফ গলা পানি ব্যবহার করেন। সঙ্গে থাকে স্বচ্ছ পানির জন্য একটি ফিল্টারও।
জানা যায়, এক লেবুর রস বিক্রেতাকে দৈনিক ৫০ টাকার বিট লবণ ও ১০০ থেকে ১২০ টাকার লেবু কিনে এ ব্যবসা চালান। বাস্তব কারণে ব্যবসায়ীরা সাধারণত এক জায়গায় স্থায়ীভাবে থাকেন না। সে কারণে পরিবহনের জন্য চার চাকার একটি ভ্যান গাড়িও ব্যবহার করতে হয় তাদের।
মো. ইউনুস, একজন লেবুর রসের শরবত বিক্রেতা। তিনি নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানার দূর্গাপুর গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছেন বছর দশেক আগে।
চার ছেলে ও এক মেয়েসহ মোট সাতজনের সংসার তার। সপরিবারে বঙ্গবাজার রেল কলোনিতে বাস করেন তিনি। একমাত্র লেবুর রসের শরবতের আয়ের ওপর ভর করেই সংসার চলে তার।
শহরে খুব বেশি গরম পড়লে তার জন্য মঙ্গল। কারণ, গরমের সময় প্রতিদিন এক হাজার দুইশ টাকার বেচাকেনা হয়। কিন্তু, গরম কম হলে বেচাকেনা অর্ধেকে নেমে আসে জানান তিনি।
ইউনুসের মতো অনেকেই লেবুর রসের শরবত বিক্রি করে তাদের সংসার চালান।
এলাহী বছর দুয়েক আগে হবিগঞ্জের নাকাইল থানার কাশিমপুর গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছেন। সংসারের হাল ধরার কারণে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করতে পেরেছেন তিনি।
তিনি প্রতিদিন নিউমার্কেট এলাকায় লেবুর রসের শরবত বিক্রি করেন। ব্যাচেলর হিসেবে থাকেন আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ এলাকায়।
এলাহী বাংলানিউজকে বলেন, “লেবুর রসের শরবত বিক্রি করে প্রতিমাসে বাড়িতে দুই থেকে তিন হাজার টাকা পাঠানো লাগে। ”
তিনি বলেন, “বাড়িতে বৃদ্ধ মা, বাবা ও দুইবোনের পড়ার খরচ লেবুর রস বিক্রি করে চলে। গরম বেশি হলে এক হাজার টাকা থেকে এক হাজার ২শ টাকার বেচাকেনা হয়। ”
তিনি আরো বলেন, “বারোশ টাকার বেচাকেনা করতে পারলে আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা লাভ থাকে। এই দিয়েই সংসার চলে আমার। ”
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৩
এমআইএস/ সম্পাদনা: আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর