ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

চার বছরে উত্তরা গণভবনে যাননি প্রধানমন্ত্রী

এস এম আব্বাস, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:০৫, মে ২২, ২০১৩
চার বছরে উত্তরা গণভবনে যাননি প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা: মহাজোট সরকারের মেয়াদকাল প্রায় শেষ হয়ে আসলেও প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাঞ্চলীয় কার্যালয় নাটোরের উত্তরা গণভবনে অফিস করেননি শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে দিঘাপতিয়ার রাজবাড়িকে উত্তরা গণভবন হিসেবে ঘোষণা দেন।

উত্তারাঞ্চলের উন্নয়ন ভাবনা নিয়ে উত্তরা গণভবন নামকরণ করা হলেও বিভিন্ন সরকারের সময় তা উপেক্ষিত থেকেছে।

প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির হিসেব মেলাতে এই অঞ্চলের মানুষ চায় শেখ হাসিনা তার উত্তরাঞ্চলীয় অফিসে বসবেন। বছরে একটি হলেও মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু চার বছর পার হলেও হয়নি মন্ত্রিসভার একটি বৈঠকও।

মহাজোট সরকারের চলতি মেয়াদে শেখ হাসিনা তার উত্তরাঞ্চলীয় কার্যালয়ে অফিস করবেন কি না, মন্ত্রিসভার কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে কি না তা জানতে চাওয়া হয় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞার কাছে।

Uttora_Gonovobonমন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা বাংলানিউজকে জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে কি না সে ধরনের কোনো তথ্য নেই তার কাছে।

তিনি বলেন, “বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর উপর নির্ভরশীল। তবে উত্তরা গণভবনের উন্নয়ন কাজ ও ব্যাপক সংস্কার কাজ সরকারের চলতি মেয়াদে করা হয়েছে। দর্শনীয় স্থান হিসেবে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্তও করা হয় নাটোরের উত্তরা গণভবনকে। ”

বঙ্গবন্ধুর উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন ভাবনার বিষয়টি বিভিন্ন সরকারের সময় উপেক্ষিত হলেও মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে তিনি জানান। বিগত মেয়াদেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অফিস করেছেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেও তিনি জানান।

বঙ্গবন্ধুর এই উদ্যোগের প্রতিফলন ঘটাতে মন্ত্রিসভার বৈঠকের বিষয়টি যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ওই এলাকার মানুষের মধ্যে প্রাণ চাঞ্চল্যের বিষয়টি।

যদিও মন্ত্রিসভা নয়, উন্নয়নমূলক প্রকল্প নেওয়া হয়ে থাকে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ’র (একনেক) বৈঠকে। তবে ওই এলাকার মানুষের চাওয়া শেখ মুজিবের উদ্যোগের কারণেই উত্তরা গণভবনটির বেশি গুরুত্ব পাওয়ার কথা শেখ হাসিনার সময়।

দেশ স্বাধীনের পর উত্তরা গণভবনে প্রথম বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভার বৈঠক করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সরকারের সময় উত্তরা গণভবনটি উপেক্ষিত হলেও অনেকটা অনুষ্ঠানিকতার খাতিরেই বিভিন্ন সরকারের সময় মন্ত্রিসভার বৈঠক করা হয়েছে।

১৯৮০ সালের ১৭ নভেম্বর সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই উত্তরা গণভবনে একবার মন্ত্রিসভার বৈঠক করেন। এরপর থেকে রেওয়াজ রক্ষায় সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া একবার করে মন্ত্রিসভার বৈঠক করেন।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগের যথাযথ সম্মান জানাতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় একবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের আয়োজন করেন সাড়ম্বরে। এ সরকারের সময় উত্তরা গণভবনের উন্নয়নেরও কথা বলা হয়েছে। তবে উত্তরা গণভবনে আর মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়নি। অন্য কোন আনুষ্ঠানিতার প্রয়োজনে অফিসও করেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উত্তরাঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা পূরণে বছরে একবার হলেও মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে। কিন্তু মহাজোট সরকারের বিগত চার বছরে এমন কথা শুধু শোনাই গেছে। একবারের জন্যও করা হয়নি বৈঠক।

উত্তরাঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা মহাজোট সরকারের শেষ সময় অন্তত মন্ত্রিসভার একটি বৈঠক করে এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হবে।

উত্তরা গণভবন:Natore_Dighapatia_1
নাটোর রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা রাজা রামজীবন রায়ের নায়েব ছিলেন দয়ারাম, পরবর্তী সময়ে রামজীবন রায়ের পুত্রবধূ রানি ভবানী দয়ারামের প্রশাসনিক কাজে সন্তুষ্ট হয়ে দিঘাপতিয়ার ওই জায়গাটি তাকে উপহার দেন। এরপর দয়ারাম এই রাজবাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন।

রাজবংশের ষষ্ঠ রাজা প্রমদানাথ রায় ১৮৯৭ সালের ১০ জুন নাটোরের ডোমপাড়া মাঠে তিনদিনব্যাপী বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের এক অধিবেশন আয়োজন করেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ অনেক বরেণ্য ব্যক্তি এ অধিবেশনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন। অধিবেশনের শেষ দিন ১২ জুন প্রায় ১৮ মিনিটব্যাপী এক প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে রাজপ্রাসাদটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। পরে ধ্বংসপ্রায় প্রাসাদটি রাজা প্রমদানাথ রায় ১৮৯৭ সাল থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত ১১ বছর সময় ধরে বিদেশি বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী ও চিত্রকর্ম শিল্পী আর দেশি মিস্ত্রিদের সহায়তায় সাড়ে ৪১ একর জমির উপর এই রাজবাড়িটি পুনর্নির্মাণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর দিঘাপতিয়া রাজা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান।

১৯৫০ সালে জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হওয়ার পর দিঘাপতিয়ার রাজ প্রাসাদটির রক্ষণাবেক্ষণে বেশ সমস্যা দেখা দেয়। সমস্যা সমাধানে ১৯৬৬ সালে এ রাজভবন ইস্ট পাকিস্তান হাউজে পরিণত হয়। ১৯৬৭ সালের ২৪ জুলাই তৎকালীন গর্ভনর মোনায়েম খান এটিকে গর্ভনর হাউসে রূপান্তর করেন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এটিকে উত্তরা গণভবন হিসেবে ঘোষণা দেন।

তার উদ্যোগ ছিল উত্তরাঞ্চলের মানুষের কল্যাণে নেওয়া মন্ত্রিসভার সব সিদ্ধান্ত উত্তরা গণভবনের বৈঠকে নেওয়া হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে একবার সপরিবারে নাটোরের উত্তরা গণভবনে কয়েকদিন নিরিবিলি সময় কাটিয়ে ছিলেন। সে সময়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পরিবারের সদস্য হিসেবে ওই সময় নাটোরে গিয়েছিলেন বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৬ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৩
এসএমএ/সম্পাদনা: এম জে ফেরদৌস, নিউজরুম এডিটর/‌আরআর/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।